ইসলাম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে বেলজিয়ান নারীর লড়াই

0

ইউরোপে অনেক মুসলিম নারী চাকরি খুঁজতে গিয়ে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। তবে মরোক্কান বংশোদ্ভূত বেলজিয়ান নারী মিরিয়াম বোজিয়ান এসব বাধাকে নিজের পথে দাঁড়াতে দেননি।

বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে বসবাস করেন মিরিয়াম। নিজের রান্নাঘর থেকে বিশ্বের নানা প্রান্তের হাজার হাজার ফলোয়ারের সঙ্গে রেসিপি শেয়ার করেন তিনি। পাঁচ সন্তানের মা মিরিয়াম এখন সফল এক ব্যবসায়ী। কিন্তু তার সাফল্যের পথটা ছিল খুব কঠিন। তিনি বলেন, এখানে ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষকে সত্যিকার বেলজিয়ান হিসেবে মেনে নেওয়া হয় না।

১৬ বছর বয়সে মিরিয়ামের বিয়ে হয়। এরপরই তিনি সন্তানের মা হন। তবে জীবন থেকে তার প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি।

স্বামীর সঙ্গে মিরিয়াম।

স্বামীর সঙ্গে মিরিয়াম।

মিরিয়াম বলেন, আমি জীবনের পূর্ণতা খুঁজতে কাজের সন্ধান শুরু করি। কিন্তু প্রতিটি জায়গায় আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কি তোমার হিজাব খুলতে রাজি আছো? আমি ভাবলাম, কাজের সঙ্গে এর সম্পর্ক কি? আমার মাথার মধ্যে যা আছে সেটার বদলে মাথার ওপরে কী আছে, সেটা নিয়ে এত চিন্তা কেন?

আগ্রহ হারিয়ে কিছুদিন বাসায় বসে থাকেন মিরিয়াম। কিন্তু একদিন তার এক খালা একটি প্রিয় খাবার কীভাবে রান্না করতে হয়, তা ভিডিও করে পাঠাতে অনুরোধ করেন। তখনই মিরিয়ামের মাথায় নতুন চিন্তা এলো। তিনি একটা ইউটিউব চ্যানেল চালু করার কথা ভাবলেন।

সন্তানদের সঙ্গে মিরিয়াম।

সন্তানদের সঙ্গে মিরিয়াম।

চার বছর আগে তিনি খুব সাধারণ কিছু মরোক্কান স্টাইলের রান্নার ভিডিও ফরাসি ভাষায় আপলোড শুরু করেন। এখন তার ব্যবসার আকার বড় হয়েছে। তিনি আরও তিনটি ভাষায় (আরবি, বারবার ভাষা রিফিয়ান ও হিন্দি) ইউটিউব চ্যানেল চালু করেছেন। তবে এখন শুধু রান্নার রেসিপি নয়। নিজের জীবনের গল্পও শেয়ার করেন তিনি।

এসব ভিডিওতে বেলজিয়ামে মুসলিম নারীদের নিয়ে নিজের চিন্তার কথা বলেন মিরিয়াম। তিনি বলেন, আমাদের আজ্ঞাবহ নারী হিসেবে দেখার চিন্তাটা খুব বিরক্তিকর। আমার স্বামী এবং আমি ঘরের কাজ, রান্না, সন্তান পালন সবকিছু সমানভাবে করি। তবে এত ফলোয়ার থাকা সত্ত্বেও মিরিয়ামকে অনলাইনে ইসলামবিদ্বেষের শিকার হতে হয়।

তিনি বলেন, আমাকে সন্ত্রাসী, ইসলামপন্থি, সালাফিপন্থি বলা হয়েছে। এতে আমার মন ভেঙে গেছে। তবে এ ধরনের মুহূর্তে পরিবারই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে।

মিরিয়ামের বোন সামিরা, যিনি তাকে উৎসাহ দেন।

মিরিয়ামের বোন সামিরা, যিনি তাকে উৎসাহ দেন।

মিরিয়ামের বোন সামিরা শুরুতে সন্দিহান থাকলেও তাকে একনিষ্ট সমর্থন দিয়ে গেছেন। সামিরা বলেন, শুরুতে নিজের ঘরবাড়ি পৃথিবীর সামনে তুলে ধরার পরিকল্পনায় আমার অস্বস্থি হচ্ছিল। কিন্তু পরে আমি আমার ধারণা পাল্টাতে বাধ্য হই। মানুষ দেখছে, আমাদের জীবনে অন্যরকম কিছু নেই। আমরা অন্য সবার মত সাধারণ জীবন যাপন করি।

তবে নিজের ব্যবসা নিয়ে আরো বড় পরিকল্পনা রয়েছে মিরিয়ামের। ভবিষ্যত বলে দেবে সামনে কী হবে।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com