নির্বাচন নিয়ে নানান অভিযোগ থাকলেও পাঁচ বছরে ইউপি নির্বাচনে ব্যয় বেড়েছে ২৬৫ ভাগ

0

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আয়োজনে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ব্যয় বেড়েছে শতকরা ২৬৫ ভাগ। ২০১৬ সালে একটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনের খরচ হতো প্রায় ১১ লাখ ৭ হাজার টাকা।

এখন ওই ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ৬ হাজার টাকা। আর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হলে সেই ব্যয় আরও বেড়ে হচ্ছে ২৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের এক হিসাবে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়াও জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যয়ও বেড়েছে। তবে এসব নির্বাচনের ব্যয় বৃদ্ধির প্রকৃত হার পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইসির আরেক হিসাবে দেখা গেছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালে চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল ৩৭৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। এবার চার হাজার ৩০০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের বাকি সময়ের জন্য ইউনিয়ন পরিষদসহ সব ধরনের নির্বাচনের খরচ মেটাতে এক হাজার ৮৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা জরুরিভাবে বরাদ্দ চেয়েছে ইসি।

চলতি অর্থবছরে নির্বাচন খাতে ৪১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছে ইসি। ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা খাতে ব্যয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। নির্বাচনে আগের তুলনায় বেশি সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। তাদের যাতায়াত, খোরাকি ভাতাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে।

এছাড়া গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সম্মানী বাড়ানো হয়। জ্বালানি তেল, কাগজসহ অন্যান্য নির্বাচনি জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। নির্বাচনে ভোটার, ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যাও কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহারের কারণেও প্রশিক্ষণ ও পরিবহণ খাতেও খরচ বেড়েছে। সবমিলিয়ে নির্বাচনের সার্বিক ব্যয় বেড়ে গেছে। যদিও সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ কমেছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জনপ্রতিনিধি জয়ীদের সংখ্যা বেড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, নির্বাচনে ব্যয় বেড়েছে সত্য। এর কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার অন্যতম হচ্ছে-আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে তিনজন অস্ত্রধারী পুলিশ থাকত, এখন সেখানে পাঁচজন অস্ত্রধারী পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা নির্বাচনে যে হারে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী ওই সংখ্যা দ্বিগুণ পর্যন্ত মোতায়েন করা হচ্ছে। এসব কারণে ব্যয় বেড়ে গেছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা অর্থ বিভাগের কাছে এক হাজার ৮৯ কোটি টাকা চেয়েছি। নির্বাচন বিষয়ে যত টাকা লাগবে অর্থ মন্ত্রণালয় তা দেবে। আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তা কিস্তিতে বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরে অনুষ্ঠিতব্য বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনের সম্ভাব্য কত ব্যয় হবে তা নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এতে জাতীয় সংসদের একটি আসনে উপনির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি ১০ লাখ টাকা (ইভিএমে)। একেকটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই কোটি ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা, পৌরসভায় এক কোটি ৭১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ও জেলা পরিষদে ৩১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে।

বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদে ভোট চলছে। কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেরও তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে জেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু করতে চায় বর্তমান কমিশন। সবমিলিয়ে চলতি অর্থবছরে নির্বাচন আয়োজনে ইসির ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত বরাদ্দ পেয়েছে ৪১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

আরও জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে অর্থ বিভাগের কাছে অতিরিক্ত এক হাজার ৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে আসছে ইসি। সর্বশেষ ৯ সেপ্টম্বরে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। ওই চিঠিতে স্থানীয় সরকারের চার হাজার ৪৭১টি বিভিন্ন সাধারণ নির্বাচন ও উপনির্বাচন আয়োজনে এ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। গতকাল পর্যন্ত ওই টাকা বরাদ্দ পায়নি ইসি।

পাঁচ বছরে ব্যয় বেড়েছে ২৬৫ ভাগ পর্যন্ত : জানা গেছে, বর্তমানে কাগজের ব্যালটে ভোট নেওয়া প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গড়ে ব্যয় হচ্ছে ২৮ লাখ ৬ হাজার টাকা। আর ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে খরচ হচ্ছে ২৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গড়ে ব্যয় হয়েছে ১১ লাখ ৭ হাজার টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ২৫৩ থেকে ২৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বেড়েছে। ২১টি অর্থনৈতিক কোডের (খাত) মধ্যে ১৯টিতে ব্যয় বেড়েছে।

আরও জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ব্যয় বেড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা খাতে। নির্বাচনে নিয়োজিত নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আনসার, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের খোরাকি ভাতা তিন লাখ ২০ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১০ হাজার টাকায়। তাদের আপ্যায়ন ব্যয় ৫৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ টাকা। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী পরিবহণে থাকা গাড়ির জ্বালানি খরচ এক লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা হয়েছে।

অন্যান্য ব্যয়ের মধ্যে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের সম্মানী তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ব্যয় ৪৮ হাজার টাকা থেকে বেড়ে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা হয়েছে। মনোহারী সামগ্রীর খরচ ৩৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে এক লাখ টাকা হয়েছে।

আরেক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে খরচ হয় ৩৭৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। ওই সময়ে নির্বাচন পরিচালনা খাতে ব্যয় হয়েছিল ১৭৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর গোয়েন্দা কার‌্যাবলিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা খাতে ব্যয় হয় ২০৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এবার চার হাজার ৩০০টি ইউনিয়ন নির্বাচনে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com