বিরোধীদের জোটে ‘ঐক্য’ ভাঙতে সক্রিয় সরকার: বিএনপি

0

বিরোধী ঐক্যে ‘বিভক্তি’ আনতে সরকারি সংস্থাগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে আমরা বিভক্ত। আমাদের সাংবাদিক সমাজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো বলেন, আমাদের পেশাজীবী সংগঠনগুলো বলেন, এসব জায়গাগুলোতে বিভক্তি এসে গেছে এবং বিভক্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে।

“অত্যন্ত সচেতনভাবে এই সরকা্রের যে এজেন্সিগুলো আছে, সেই এজেন্সিগুলো আজ অত্যন্ত অ্যাক্টিভ। তারা, আমরা যারা গণতন্ত্র চাই, আমরা যারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব চাই, তাদের মধ্যে বিভিন্নভাবে ঐক্যের বিনষ্টি ঘটাচ্ছে।”

এ বিষয়ে সকলকে ‘সজাগ’ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য কাজ করছি, লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি আমাদের বিভক্তির কোনো অবকাশ নেই।

“এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে যদি সরাতে চাই জনগণের একটা দৃঢ় ঐক্যের প্রয়োজন আছে, জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন আছে, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের প্রয়োজন আছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনাদের সকলের প্রতি আমার আবেদন থাকবে, বিভেদ নয়, আপনাদের ঐক্য, জনগণের ঐক্য দিয়ে এদেশের মুক্তি হবে, গণতন্ত্র মুক্তি পাবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন।”

‘রাজনীতিবিদরা দেশ চালাচ্ছেন না’

ওয়ান-ইলেভেনের চক্রান্ত থেকে মুক্তি মেলেনি দাবি করে বিএনপি মহাসিচব বলেন, “আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য দেশ কিন্তু রাজনীতিবিদরা পরিচালনা করে না। একজন রাজনীতিবিদকে তারা শিখন্ডি হিসেবে দাঁড় করিয়ে রেখেছে- তিনি হচ্ছেন শেখ হাসিনা।

“তাকে দিয়ে যত অরাজনৈতিক, গণবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী সমস্ত কাজগুলো করিয়ে নিচ্ছে এবং রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠাগুলোকে তারা সুপরিকল্পিতভাবে ধবংস করে দিচ্ছে।”

জাতীয় সংসদে জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্বই নাই দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “২০১৪ সালে তারা ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করে একটা সংসদ গঠন করেছিল।

“২০১৮ সালে আগের রাতেই নির্বাচন করে এবং সেই নির্বাচনে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না, তারাই জালিয়াতি করে ভোট দিয়ে বিভিন্নভাবে তাদের নির্বাচিত করেছে এবং স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।”

‘নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান’

দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “কোথায় নির্বাচন কমিশন? এই কমিশন সম্পূর্ণভাবে একটা আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

“আজকে আবার শোনা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারি মাসে আবার নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। আমি পত্রিকায় দেখলাম, আমাদের ৫২ জন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী তারা একটা আইন প্রণয়ন করতে বলেছেন নির্বাচন কমিশনের জন্য।”

কারা সেই আইন করবে? সেই প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এই আইন তো পাস করবে সেই পার্লামেন্ট, যে পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কিছু নাই।

“যারা দেশের গণতন্ত্র ধবংস করছে, জনগণের সমস্ত অধিকারগুলোকে হরণ করে নিচ্ছে, তারা এই আইনটা পাস করবে। সুতরাং নির্বাচনের আইন যারা করতে চান, সবার আগে তাদের এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখা উচিত।”

‘বাকশালের আলামত, বাকশাল চলছে’

সংবাদ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন আইন তৈরি করা হচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা দেখেছেন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। এখন নতুন একটি আইন তৈরি করতে যাচ্ছে, সেটাকে তারা বলছে ব্যক্তি সুরক্ষা আইন।

“এটা আরেকটা কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা লেখালেখি করেন, যারা মত দেন তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তাদেরকে আবার নির্যাতন করার জন্য তারা এই আইনটা করতে যাচ্ছেন।”

২১০টি পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাকশাল দেখতে পারছি। এর মধ্যে একজন বেশ শিক্ষিত মন্ত্রী, উচ্চ পদস্থ আমলা ছিলেন এক সময়ে, পরিকল্পনা মন্ত্রী, তিনি বলেছেন, বাকশাল ভাল ব্যবস্থা ছিল।

“সেই কথাটা পরিষ্কার করেই বলেন যে, আমরা বাকশাল করছি, আমরা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেছি, এই কথাটা তো বলছেন না। কারণ মানুষকে আপনারা প্রতারণা করেছেন সবসময়ে।”

নিউ ইয়র্কে আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক ‘নির্যাতনের’ অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা কিন্তু আওয়ামী লীগের চরিত্র। যখনই তাদের মতের বিরুদ্ধে কিছু বলবেন তখনই তার উপরে নির্যাতন করবে।

“একটা বাহিনীই তৈরি করা হয়েছিল- মুজিব বাহিনী, যে যারা অন্য রাজনীতি থেকে এসেছে তাদেরকে নির্মূল করতে হবে। এটা আপনারা আজ-কাল কেউ বলেন না। রক্ষীবাহিনী গঠন করা হয়েছিল।”

বহু সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ সেসময় নির্যাতিত হয়েছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এখন যে জাসদের ইনু সাহেবরা এত কথা বলেন, তাদেরই তো ৩০ হাজার তরুণ-কিশোরকে প্রাণ দিতে হয়েছিল।”

এসময় নিউজ পোর্টালের জন্য ৪ হাজার আবেদনের মধ্যে দলীয় পছন্দের ৯৫টিকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে এর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “রুহুল আমিন গাজী ১১ মাস ধরে কারাবন্দি হয়ে আছেন বিনা কারণে। এক মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

“সেই মিথ্যা মামলা বহু লোকের বিরুদ্ধে হয়েছিল। অনেকে মুক্ত হয়ে গেছেন। কিন্তু রুহুল আমিন গাজীকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। একজন সাংবাদিক, তিনি স্বাধীনতার কথা বলেন, মুক্ত সাংবাদিকতার কথা বলেন, সেজন্য তাকে মুক্ত করা যাবে না।”

তিনি বলেন, “রহুল আমিন গাজীর মুক্তির ব্যাপারে সাংবাদিকরা যখন ঐক্যবদ্ধ থাকেন না, এবং তাদের সহকর্মীর জন্য তারা জোরে-সোরে কথা বলেনন না তখন খুব কষ্ট হয়।”

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com