সরকার যখন ইচ্ছে নিরাপরাধ মানুষকে বেআইনিভাবে তুলে নিয়ে যাচ্ছে: প্রিন্স

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, দেশ যেন এক মগের মুলুকে পরিণত হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী সরকার যখন ইচ্ছে নিরাপরাধ মানুষকে বেআইনিভাবে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর দীর্ঘ সময় তাদের গোপন রেখে আষাঢ়ে গল্প বানিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে মিথ্যাচার করা যেন সরকারের রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রিন্স বলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসান, সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুর রহিম হাওলাদার সেতু, বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক এস এম আশরাফুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম রাহুলসহ পাঁচজনকে গত রাত (বুধবার) সোয়া ১১টার দিকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাজধানীর রাইফেলস স্কয়ারের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় গোপন রেখে পরে ধানমন্ডি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং অবিলম্বে রাজিব আহসানসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করছে।

এ ঘটনার পরপরই দীর্ঘক্ষণ যখন রাজীব আহসানসহ অন্যদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন গতরাতেই অবিলম্বে তাদের জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে ফখরুল গ্রেফতারকৃত সব নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি করেন। সম্প্রতি সরকার নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে এবং আন্দোলন ও পতনের ভয়ে ভীত হয়ে বিএনপি, ছাত্রদলসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নতুন করে গ্রেফতার ও হয়রানি শুরু করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। আওয়ামী জনবিচ্ছিন্ন কর্তৃত্ববাদী ভোটারবিহীন সরকারের অবস্থা সন্ত্রাসীদের মতো। এ অবৈধ সরকার গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, সন্ত্রাস চালিয়ে রাষ্ট্রে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করছে। এজন্য তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রাইভেট বাহিনীতে পরিণত করে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রিত করেছে। স্বাধীনভাবে রাজনীতি যেন এখন অতীত ইতিহাস। মানুষের জানমাল ও চলাচলে কোনো স্বাধীনতা নেই, কোনো নিরাপত্তা নেই।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনসমর্থন হারিয়ে এবং দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়ে এখন চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে দানবীয় সরকার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দমন-পীড়ন, গ্রেফতার, মিথ্যাচার তাদের নিত্যসঙ্গী। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে প্রতিদিন তারা মিথ্যাচারের পাশাপাশি নীতিবাক্য উচ্চারণ করছেন, অথচ তারাই অনৈতিক কাজ করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্স বলেছেন, গতরাতে (বুধবার) বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসানকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ফ্যাসিবাদী সরকারের চলমান অপকর্মের ধারাবাহিকতা। জনগণকে ভয় পাইয়ে দিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন চালু রাখতেই সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের অপহরণের পর গুমের মতো লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড চালু রেখেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক রাজীব আহসান, সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনায় আমরা আবারো তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা, বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি দাবি করছি।