দুর্নীতি নিয়ে তাপস খোকন সমঝোতা!

0

দুর্নীতি ইস্যুতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ও বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস বেশ কিছু দিন পাল্টাপাল্টি আক্রমণ করতে থাকলেও এখন তারা একেবারেই নিশ্চুপ। আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান এই দুই মেয়র একে অপরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অনেকগুলো চিত্র জনসম্মুখে তুলে ধরেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরিয়েও দিয়েছিলেন মেয়র তাপস। ডিএসসিসিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথাও সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন মেয়র তাপস। সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সময়ে বরাদ্দ দেওয়া ডিএসসিসির মালিকানাধীন মার্কেটের শত শত দোকান ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে এসব বরাদ্দের জন্য সাবেক মেয়র ও তৎকালীন প্রশাসনকে দায়ী করেন তাপস। এতেও কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় তখন যখন অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকান উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। শুধু তাই নয়, সেখানকার দোকান মালিক সমিতির নেতাদের দিয়ে মামলা এবং ভিডিও বক্তৃতায় খোকনের বিরুদ্ধে অবৈধ দোকান বরাদ্দের বিনিময়ে ব্যাপক ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ তোলেন মেয়র তাপস। এতেই ক্ষিপ্ত হন খোকন। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দোকানীদের নিয়ে রাস্তায় নামেন সাবেক মেয়র। মুখ খোলেন বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে নিয়ে। তুলে ধরেন সিটি করপোরেশনের কোটি কোটি টাকা কিভাবে নিজের পকেটস্থ করেছেন মেয়র। বেরিয়ে আসতে শুরু করে থলের বিড়াল।
বর্তমান মেয়র তাপস কিভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি করছে তা নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তৃতা করেন সাঈদ খোকন। এরপর সাঈদ খোকনের ওই বক্তৃতায় মেয়রের মানহানি হয়েছে মর্মে তার বিরুদ্ধে মামলার ঘোষণা দেন তাপস। সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক দু’টি মামলাও হয়। মামলার পর মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এর ‘মান-সম্মানের বাজারমূল্য কত?’ তা জানতে চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ মামলা আইনিভাবে মোকাবিলার পাশাপাশি রাজপথে দেনা-পাওনার হিসাব হবে, ইনশাআল্লাহ।
খোকনের এই বিবৃতির পরই পাল্টে যায় ঘটনার সব দৃশ্যপট। পিছু হটেন মেয়র। দায়ের হওয়ার দুই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বানও জানান তাপস। এর পরই একটি মামলা প্রত্যাহার ও অপরটি খারিজ হয়। এরই মধ্যদিয়ে একে-অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আনা দুর্নীতির অভিযোগ-পাল্টাঅভিযোগ, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা আর সামনের দিকে এগোয়নি। ডিএসসিসিতে ঘটে যাওয়া দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র উদ্ঘাটন হোক বা না হোক সাবেক ও বর্তমান মেয়রের মধ্যকার দুর্নীতির অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের কারণে নগরবাসীসহ দেশবাসী দু’জনের দুর্নীতির যেসব তথ্য জানতে পেরেছিলেন তাও হঠাৎই বন্ধ হয়ে গেল। উভয়ের দেওয়া পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে জনগণের সামনে বেশকিছু দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্যচিত্র বেরিয়ে আসছিলো। কিন্তু নিরবেই সব কিছু থেমে গেল। একেবারেই চুপ হয়ে যান সাবেক ও বর্তমান মেয়র। বর্তমান মেয়র তাপস দুর্নীতির দায়ে পদে থাকার বৈধতা হারিয়েছেন বলে যে দাবি সাঈদ খোকন করেছিলেন সেটি একেবারেই চেপে গেলেন। ডিএসসিসির মার্কেটে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানগুলো উচ্ছেদ অভিযানও থমকে আছে। সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা মনে করেন- অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে অদৃশ্য কোনো ইঙ্গিতে অভ্যন্তরীণ সমঝোতায় পৌঁছেছেন সাঈদ খোকন ও শেখ ফজলে নূর তাপস। তারা চান না দুর্নীতির আর কোনো খবর বাইরে বের হোক।
দুর্নীতির যেসব অভিযোগ সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে 
ডিসেম্বরের কথা। শুরুতে অভিযোগ ওঠে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে। ডিএসসিসি’র ফুলাবাড়িয়া সুপার মার্কেটের কিছু দোকান বরাদ্দ নিয়ে কথা উঠে। এগুলো বরাদ্দ হয় খোকনের আমলে। আর সেই ফুলাবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর অবৈধ দোকান উচ্ছেদের উদ্যোগ নেন বর্তমান মেয়র। এতেই বাধে বিপত্তি। সেসময় সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন দাবি করেন দোকানগুলো অবৈধ নয়। আদালতের নির্দেশে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপসের দাবি, দোকানগুলোর কোনো বৈধতা নেই। সেগুলো রাস্তা ও মার্কেটের ভিতরের, লিফটের ও সিঁড়ির জায়গা দখল করে বানানো হয়েছে। এ রকম দোকান মোট ৯১১টি। এসব দোকেনের ব্যবসায়ীরা দাবি করেন তারা সিটি করপোরেশনকে দোকান প্রতি ২০ থেকে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন। সরাসরি সাঈদ খোকন এ অর্থ নেন বলে অভিযোগ তোলা হয়। ওই মার্কেটের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু তাৎক্ষণিকভাবে আদালতে একটি মামলা করেনে। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীরা ডিএসসিসির এই মার্কেটে দোকানের জন্য সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা দিয়েছেন। এর বাইরেও আরো নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে সাবেক মেয়রকে। মার্কেটের সভাপতি কর্তৃক দায়ের হওয়া মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবি আই)। দেলোয়ার হোসেন দেলু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমার কাছে সব ডকুমেন্ট আছে। কোন ব্যাংকের মাধ্যমে কত টাকা দেওয়া হয়েছে তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট আছে। মামলায় এইসব ডকুমেন্ট আমি সংযুক্ত করেছি।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, সাবেক মেয়র তার সহযোগিদের মাধ্যমে এই টাকা দিতে বাধ্য করেছেন। মামলায় সাঈদ খোকন ছাড়া আরও পাঁচজনকে এই মামলায় বিবাদি করা হয়েছে।
তাপসের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ খোকনের 
দুর্নীতেতে সরাসরি ফেঁসে যাচ্ছেন দেখে আর বসে থাকতে পারলেন না সাঈদ খোকন। মার্কেট এবং সিটি করপোরেশনে নিজের অনুগতদের সংগঠিত করেন। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টতায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকান বরাদ্দ নিয়ে যারা উচ্ছেদের আওতায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা গত ৯ জানুয়ারি ঢাকায় এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেন। ওই সভায় অংশ নেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। এসময় তিনি বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। বক্তৃতায় সাঈদ খোকন বলেন, ‘‘তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন এবং শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করছেন। অন্যদিকে, অর্থের অভাবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গরিব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, দ্বিতীয় ভাগের দ্বিতীয় অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯ (২) (জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন শেখ ফজলে নূর তাপস।” মেয়রকে উদ্দেশ্য করে সাঈদ খোকন বলেন, আমি তাকে (তাপস) বলব, রাঘববোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন করতে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত করুন। তারপর চুনোপুঁটির দিকে দৃষ্টি দিন।
ডিএসসিসিতে ৩ সহস্রাধিক অবৈধ দোকান
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মার্কেটগুলোয় যতো বৈধ দোকান রয়েছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চাইতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব দোকান ডিএসসিসির নকশা অনুযায়ী বৈধ পন্থায় নির্মাণ করা হয়নি। সংস্থাটির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব দোকান বরাদ্দ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তথ্যমতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৮টি মার্কেটে ৩ হাজার ৮১টি অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে এবং বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একটি প্রভাবশালী অসাধু চক্র বিভিন্ন সময়ে এসব দোকান গড়ে তুলেছে। খবর নিয়ে জানা গেছে, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা প্রতিটি দোকানের ন্যূনতম গড়মূল্য অন্তত ১৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে এসব দোকান থেকে ওই চক্রটি অন্তত ৪০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নতুন দায়িত্ব নেওয়া মেয়র তাপস ও সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এর পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে ডিএসসিসির দুর্নীতির কিছু তথ্য প্রকাশ পেলেও হঠাৎ ‘অভ্যন্তরীণ সমঝোতার’ কারণে তাদের মুখ থেকে নতুন কোনো তথ্য আসছে না।
তবে সিটি করপোরেশনের সূত্রগুলো জানাচ্ছে- ডিএসসিসির মূল মার্কেটের নকশা লঙ্ঘন করে অবৈধ দোকানপাট নির্মাণের সময় বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষ ঠিকই জানতেন। কিন্তু তারা জেনেও না জানার ভান করেছেন। আর্থিক সুবিধাগ্রহণের কারণে কর্তৃপক্ষ ছিল নির্বিকার। ফল যা হবার তা-ই হয়েছে। অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে হাজার হাজার দোকান। এতে শীর্ষ মহলসহ সবাই লাভবান হয়েছেন।
সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তির যোগসাজশে মার্কেটের মালিক সমিতির নেতাদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে ওই চক্রটি। শেখ ফজলে নূর  তাপস মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর ডিএসসিসির ৯৩টি মার্কেটের নকশাবহির্ভূত অবৈধ দোকান যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করে রাজস্ব বিভাগের মার্কেট শাখা। এসময় ২১টি মার্কেটে ৩ সহস্রাধিক অবৈধ দোকানের অবস্থান নিশ্চিত হয়। এর মধ্যে ৩টি মার্কেটের অন্তত শতাধিক অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করেন ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগের নেতৃত্বে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। ডিএসসিসি মেয়রের নির্দেশে রাজস্ব বিভাগ সেসব দোকান উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান থাকলেও দোকানীদের নিয়ে সাঈদ খোকনের মানববন্ধন এবং পাল্টা আক্রমণের পর সেই অভিযান থমকে আছে।
মামলা-খারিজ-প্রত্যাহার
সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বর্তমান মেয়র তাপসের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। প্রকাশ্যে জনসম্মুখে এ অভিযোগ তোলার পর মেয়র তাপসের মানহানি হয়েছে মর্মে ‘সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে। আগের দিন সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ১০ জানুয়ারি সাংবাদিকদের জানানোর পর ১১ জানুয়ারি এ দুটি মামলা দায়ের হয়। ১১ জানুয়ারি তিনিই এ মামলা দায়েরের খবর গণমাধ্যমকে দেন। এও বলেন, সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। আবার ১২ জানুয়ারি মেয়র তাপস সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়ার মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। সাঈদ খোকনের মানহানিকর বক্তব্যের অভিযোগে করা ওই দুই মামলার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ত নেই উল্লেখ করে তিনি দুই বাদীকে মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র তাপস বলেন, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। অতিউৎসাহী দুই আইনজীবী এই মামলা করেছেন বলে জানতে পেরেছি। আমি তাদের বলব, মামলা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করে নিন। তিনি আরও বলেন, সাঈদ খোকন যে বক্তব্য দিয়েছেন তা মানহানিকর হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। তাই তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারি বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কে বা কারা আমাকে না জানিয়ে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছেন। মেয়রের এ বক্তব্যের পর এক মামলা প্রত্যাহার ও আরেক মামলা খারিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলাগুলোর মধ্যে একটি করেছেন অ্যাডভোকেট মো. সারোয়ার আলম। তার মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। অপর মামলাটি করেছেন অ্যাডভোকেট কাজী আনিসুর রহমানের। এটি খারিজ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। ১১ জানুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে মামলা দুটির একটি করেন কাজী আনিসুর রহমান ও অপরটি করেন অ্যাডভোকেট মো. সারোয়ার আলম।
দু’জনের বক্তব্যে দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র বেরোয়নি, দুদকের চোখ বন্ধ
ডিএসসিসির সাবেক ও বর্তমান মেয়র একে অপরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন প্রকাশ্যে। ঢাকা সিটি করপোরেশনে দায়িত্ব পালনকালে সাঈদ খোকন বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন শেখ ফজলে নূর তাপস। অপর দিকে বর্তমান মেয়র নিয়ম ভেঙে সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তাঁর নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছেন এবং শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করছেন বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। দেশের সবচে গুরুত্বপূর্ণ এই সিটি করপোরেশনের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ প্রকাশ্যে আসলেও দুর্নীতি দমন কমিশন এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান চালাতে কোনো ধরণের তৎপরতা চালায়নি। দুদকের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখা হয়নি আসলে ডিএসসিসিতে ঠিক কি পরিমাণে দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাকুক, এখনো দুদকের পক্ষ থেকে এসব দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র খুঁজতে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- সাবেক ও বর্তমান মেয়রের বক্তব্যে দুর্নীতির যেসব চিত্র উঠে এসেছে তা ডিএসসিসিতে হওয়া দুর্নীতির খ-চিত্র, প্রকৃত চিত্র নয়। প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে অনুসন্ধানের কোনো বিকল্প নেই।
যা বলছে টিআইবি ও বিরোধীরা
হঠাৎই থেমে যাওয়া ডিএসসিসির সাবেক ও বর্তমান মেয়রের দুর্নীতির অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগগুলো নিয়ে নগরবাসীর মধ্যেও কৌতুহলের শেষ নেই। তারা বলছেন- সাবেক ও বর্তমান মেয়র দুইজনই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। একজন ডিএসসিসির মেয়র ছিলেন, আরেকজন মেয়র পদে রয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা অবশ্যই খতিয়ে দেখে দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র নগরবাসীর কাছে প্রকাশ করা জরুরি। এবং দুর্নীতিতে যিনি যেভাবে জড়িয়েছেন, প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখী করার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দুর্নীতি ইস্যুতে এই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো নিয়ে কোনো তদন্ত হচ্ছে না, এখনো তদন্তের উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। এই সাবেক ও বর্তমান মেয়র সম্পর্কে বিএনপি বলছে, এরা দুইজনই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এবং বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস লুটেরা ও দুর্নীতিবাজ। রিজভী বলেন, সাঈদ খোকন বলছেন- মেয়র তাপস শত শত কোটি টাকা লুট করছেন। অন্যদিকে মেয়র তাপস বলছেন শত শত কোটি টাকা লুট করেছেন সাঈদ খোকন। দুজনই রাজপথে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে একে অপরের দুর্নীতি ও লুটপাটের ফিরিস্তি দিচ্ছেন। এতে এটি স্পষ্ট দুজনই লুটেরা ও দুজনই দুর্নীতিবাজ। ‘এখন দুদক কী করবে, তামাশা দেখবে না পদক্ষেপ নেবে। দুদক পদক্ষেপ নিতে পারবে না। কারণ দুজনই ক্ষমতাশালী এবং শীর্ষ নেতৃত্বের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজন।’ বাকযুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুর্নীতির বিষয়গুলো প্রকাশ হচ্ছে বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘‘দুই জনই যেসব কথা বলেছেন তা যদি তথ্যভিত্তিক হয় তাহলে দুদকের উচিত হবে তদন্ত করে দেখা।  তাতে বর্তমান ও সাবেক যেকারো বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির প্রমাণ মেলে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’ তিনি বলেন, ‘‘সিটি করপোরেশন অনেক ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে যুক্ত। এখানে নানা ধরনের ক্রয় ও টেন্ডার থাকে। তাই এখানে দুর্নীতি ও অনিয়মের অনেক ঝুঁকি রয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com