খেলাপি ঋণ হওয়ার অপেক্ষায় সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা

0

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে আরো সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ খেলাপি ঋণের ঘরে পৌঁছানোর আগের ধাপে অবস্থান করছে। আগামী জানুয়ারি থেকে ছয় মাস পার হলেই সংশ্লিষ্ট অর্থ খেলাপি ঋণের নিম্ন স্তর অর্থাৎ নিম্নমানের (এসএস) খেলাপি ঋণের ঘরে চলে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ঋণের কিস্তি পর পর ছয় মাস পরিশোধ না হলে সেটি খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। এই খেলাপি ঋণের আগের স্তর হলো এসএমএ অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ছয় মাস অতিক্রম করলেই তা খেলাপি ঋণে পরিণত হবে। খেলাপি ঋণ আবার তিন ধরনের হয়। ঋণের কিস্তি ছয় মাস অতিক্রম হলেই সেটি খেলাপি ঋণের নিম্ন স্তর বা নিম্নমানের খেলাপি ঋণ হয়। ৯ মাস অতিক্রম হলেই ওই ঋণ সন্দেহজনক খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। আর এক বছর পার হলেই তা মন্দ বা কুঋণ হয়। এসব ঋণকে ব্যাংকিং খাতে আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ বলা হয়। এ ধরনের ঋণ আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলোর মামলা করার অনুমোদন রয়েছে।

করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব থেকে ব্যবসায়ীদের কিছুটা রেহাই দেয়ার জন্য এক বছরের জন্য ঋণ শ্রেণীকরণ থেকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমে জুন মাস পর্যন্ত, এরপর আরো দুই ধাপে তা বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এ সময়ের মধ্যে কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলে তাকে ঋণখেলাপি বলা যাবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা কার্যকরের সময় আগামী ৩১ ডিসেম্বরেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন কোনো নির্দেশনা না দিলে খেলাপি ঋণের আগের নীতিমালাই কার্যকর হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা যখন থেকে কার্যকর করা হয় ওই সময় অনেক ঋণের কিস্তিই তিন মাস অনিয়মিত ছিল। কোনো ঋণ চার মাস আবার কোনো ঋণ পাঁচ মাস পর্যন্ত অনিয়মিত ছিল। ফলে ওই সব ঋণ খেলাপি ঋণের পূর্ব স্তর বা এসএমএ ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন করে নির্দেশনা না দিলে ওই সব ঋণের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার সময় ধীরে ধীরে ছয় মাস পার হয়ে যাবে। আর ছয় মাস পার হলেই ওই সব ঋণ খেলাপি ঋণে পরিণত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ ছিল ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিয়মিত ঋণ রয়েছে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। আর সাড়ে ৯৪ হাজার কোটি টাকা রয়েছে খেলাপি ঋণ, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বাকি সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ বা অনিয়মিত ঋণ। এসব ঋণের কিস্তি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ছয় মাস পার হলেই তা খেলাপি ঋণের ঘরে চলে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক বছরের জন্য শ্রেণীকরণ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর অর্থ হলো- এক বছর পার হলে আর ওই সব ঋণের কিস্তি পরিশোধ না হলে তা ধীরে ধীরে অর্থাৎ ছয় মাসের মধ্যেই তা খেলাপি ঋণে পরিণত হবে। যেমন, কোনো ঋণের কিস্তি তিন মাস মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। আগামী জানুয়ারি থেকে ওই ঋণের কিস্তি পরিশোধ না হলে এবং তা তিন মাস অতিবাহিত হলেই আগামী মার্চের পর থেকে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ঋণ খেলাপিতে পরিণত হবে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আগামী জানুয়ারির পর থেকে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র ব্যাংকের সামনে বের হয়ে আসবে। গত এক বছরের জন্য ছাড় দেয়া হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে এক টাকাও পরিশোধ না করলে জানুয়ারি থেকে তা খেলাপি করা হবে না; কিন্তু আগের বকেয়া তিন মাস বা চার মাস বা পাঁচ মাস হিসাবে নিলে ফেব্রুয়ারি থেকেই ধীরে ধীরে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকবে। খেলাপি ঋণ জাম্প করতে থাকলে ব্যাংকগুলোর বর্ধিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। এ নিয়ে অনেক ব্যাংকই চিন্তিত রয়েছে। তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে বিবেচনা করবে বলে কয়েকটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক মনে করেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com