ভারতের মুখোশ যেভাবে খুলে দিলো পাকিস্তান

0

ভারতীয় ও পাকিস্তানি বাহিনী কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখাজুড়ে গোলা বিনিময় করার (এতে ১৩ জন নিহত হয়, আহত হয় আরো অনেকে) মাত্র এক দিন পর পাকিস্তান সরকার পাকিস্তানি মাটিতে সন্ত্রাসবাদে ভারত সরকারের ‘অপ্রত্যাখ্যানযোগ্য প্রমাণ’ উপস্থাপন করেছে।

পাকিস্তান ও ভারত নিয়মিতভাবেই একে অপরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদতদানের অভিযোগ করে এলেও শনিবার প্রথমবারের মতো পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তারা তাদের অভিযোগের পক্ষে বিপুল প্রমাণ উপস্থাপন করেন। ফলে বিষয়টির দিকে নজর দেয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানকে দীর্ঘ দিন ধরে সন্ত্রাসবাদে মদতদাতা হিসেবে অন্যায়ভাবে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। এই অভিযোগটি পাকিস্তানের মাথায় বিশাল বোঝা হিসেবে চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। এর ফলে দেশটির আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং কাশ্মির সঙ্ঘাতকে ভারত সফলভাবে আন্তর্জাতিক এজেন্ডা থেকে সরিয়ে রাখতে পেরেছে।

৯/১১-পরবর্তী সময়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান আর সন্ত্রাসবাদ সমার্থক হয়ে পড়ে। আর তা হয় স্রেফ এই কারণে যে মুসলিম ও ইসলাম বৈশ্বিক নিরাপত্তা প্রচারণায় স্থান পায় এবং এই প্রিজম দিয়েই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ও সঙ্ঘাতকে দেখতে থাকে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতকে শনাক্ত করা হয় পাশ্চাত্য-জুডিও-খ্রিস্টান মিত্র হিসেবে এবং পাকিস্তান হলো শত্রু বা সন্দেহ করার মতো দেশ।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের যুগে পাকিস্তানে অন্তর্ঘাত ও নাশকতামূলক তৎপরতা চালাতে ভারত অনুকূল কৌশলগত পরিবেশ পেয়েছে।আর তা ভারতের রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে নতুন মাত্রা লাভ করে বলে এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন আদিলা নওরিন ও উমর ওয়াকার।
এসব কারণেই ভারতের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ধারায় সর্বশেষ পরীক্ষাধীন বিষয়। এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান সরকার ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সন্ত্রাসবাদবিষয়ক সাহিত্যে ভারত সরকারের অনুপস্থিতি আর থাকা উচিত নয়।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি ও পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ব্যাংকিং লেনদেন, নথিপত্র, অডিও ক্লিপিংস, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও জামাত উল আহরার, বালুচ লিবারেশন আর্মি ও তেহরিক-ই-তালেবানসহ সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সাথে যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন।

কোরেশি বলেন, পাকিস্তানে ভারতের প্রত্যক্ষ মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের অপ্রত্যাখ্যানযোগ্য প্রমাণ আমরা বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করছি। এসব সন্ত্রাসে অসংখ্য নিরীহ পাকিস্তানির মৃত্যু হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এসব দুর্বৃত্ত আচরণের প্রতি আর চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।

এসব প্রমাণ কষ্টদায়ক ও নিন্দনীয় হলেও এগুলো নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্মকর্তারা অনেক আগে থেকেই পাকিস্তানে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের কথা স্বীকার করে আসছিলেন। ২০১১ সালে ওকলাহোমায় ক্যঅমেরন ইউনিভার্সিটিতে এক সভায় সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, কিছু সময় ধরে আফগানিস্তানকে দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে ভারত। এছাড়া পাকিস্তানের ভেতরে সমস্যা সৃষ্টি করতে ভারত অনেক বছর ধরে অর্থায়ন করে যাচ্ছে।

এমনকি বর্তমান ও সাবেক ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও সন্ত্রাস প্রতিরোধের জন্য সন্ত্রাসবাদের ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন।এদের মধ্যে আছেন ভারতের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকর, মেজর (অব.) গৌরব আরিয়া। তিনি টেলিভিশনে স্বীকার করেছেন যে তিনি নিজে বালুচিস্তানে সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত ছিলেন। আর নৌ কমান্ডার কুলভূষণ যাদব পাকিস্তানে সন্ত্রাস চালাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। তিনি এ নিয়ে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন।

আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পূর্ব সীমান্তে সন্ত্রাসী গ্রুপ ও প্রক্সি মিলিশিয়াদের মদতদান ও অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য হলো কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানকে দুর্বল করা এবং গোয়াদর বন্দরনগরীতে চীনা বিনিয়োগকে টার্গেট করে চীনের সাথে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করা।

চলতি বছরের প্রথম দিকে বাজফিড নিউজ গোপন সরকারি নথিপত্র প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, বিশ্বের অনেক বড় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার সন্দেহজনক লেনদেন করে। এ ধরনের লেনদেনে ভারতের ৪৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা তাতে দেখা যায়।

পাকিস্তানের এসব প্রমাণ উপস্থাপনের ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আর বর্তমান বাস্তবতা এড়াতে পারবে না। গত জুনেও পাকিস্তান চার ভারতীয় নাগরিকের ওপর অবরোধ আরোপ করার জন্য জাতিসঙ্ঘের শরণাপন্ন হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই- এই অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র ও গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপিয়ান শক্তিগুলো পাকিস্তানের প্রস্তাবটি নাকচ করে দেয়। উল্লেখ্য, ওই চার ভারতীয় প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে প্রশিক্ষণ ও সামগ্রী যোগান দিতো বলে অভিযোগ করেছিল পাকিস্তান।

এসব নতুন প্রমাণের ফলে এখন জাতিসঙ্ঘ অবরোধ কমিটিকে জোরাল সাড়া দিতে হবে। তারা সম্পদ জব্দ করা, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, অবরোধ আরোপ করবে কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের।
পাকিস্তানকে পক্ষপাতমূলকভাবে ও বৈষম্যপূর্ণভাবে কোণঠাসা করা অবসান ঘটানো ও কাশ্মির সমস্যার সমাধান করার জন্য ভারত সরকারের সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতার স্বীকৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। পাকিস্তানি রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের অজুহাত আর বৈশ্বিক নিস্ক্রিয়তার অচলাবস্থা আর চলতে পারে না।

সূত্র : টিআরটি ওয়ার্ল্ড

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com