ধর্ষণ বন্ধে কমিশন গঠনসহ ৩০ সুপারিশ মহিলা পরিষদের

0

দেশে ধর্ষণের ভয়াবহ আকারে বেড়ে যাওয়া উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ধর্ষণ বন্ধে কমিশন গঠনসহ ৩০ দফা সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।

তারা অভিযোগ করেন, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের বেশিরভাগই ক্ষমতার কাছাকাছি বা নানাভাবে প্রভাবশালী। তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় আছে, পেশী শক্তি আছে এবং তারা আইনের শাসনকে ভয় ও শ্রদ্ধা করে না।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীর ওপর সহিংস ঘটনায় সরেজমিন পর্যবেক্ষণ অভিজ্ঞতা ও ধর্ষণসহ সব প্রকার যৌন সহিংসতা প্রতিরোধ ও ন্যায় বিচার নিশ্চিতের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বেগমগঞ্জের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন মহিলা পরিষদের আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা ও লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রোগ্রাম ডিরেক্টর জনা গোস্বামী।

বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফাওজিয়া মোসলেম, পরিচালক মাকছুদা আক্তার লাইলী প্রমুখ।

ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, দেশে কালো শক্তির প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তবে নারীকে দুর্বল ভেবে তার প্রতি শক্তির প্রদর্শন, মাদকের ব্যবহার, তরুণদের বেকারত্ব বৃদ্ধি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে দেশে ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। সরকার মৃত্যুণ্ডের বিধান করার উদ্যোগ আশার সঞ্চার করেছে।

লিখিত বক্তব্যে জনা গোস্বামী বলেন, ধর্ষকরা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয় পাচ্ছে, যার ফলে নির্যাতনের শিকার নারীর পরিবার সঠিক ও সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে হত্যা ও আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ। মাদকের সহজলভ্যতা, সামাজিক অস্থিরতা, ইন্টারনেটের যথেচ্ছ নেতিবাচক ব্যবহার, আইনের প্রয়োগ না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে নারীর ন্যায় বিচার বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের বেশিরভাগই ক্ষমতার কাছাকাছি বা নানাভাবে প্রভাবশালী। তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয় আছে, পেশী শক্তি আছে এবং তারা আইনের শাসনকে ভয় ও শ্রদ্ধা করে না।

তিনি আরও বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই ধরনের ঘটনাগুলোকে বার বার ঘটাতে সাহস যোগাচ্ছে।

মাকছুদা আক্তার লাইলী বলেন, দেশজুড়ে ঘটে চলা সহিংসতার ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। প্রত্যন্ত এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে এলাকা যত দুর্গম হয় তত নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই সবা এলাকার মানুষের চিন্তাধারাও পশ্চাৎপদ হয়। ঘটনার শিকার নারীকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। পরিবারও তার সঙ্গে ঠিকমত যোগাযোগ করতে পারে না। এতে সে হয়রানির শিকার হতে হয়। তিনি ধর্ষণের ঘটনা প্রতিহত করতে অপরাধীদের প্রতি এলাকাভিত্তিক গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে ৩০ দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে কমিশন গঠন, সরকারের জিরো টলারেন্স গ্রহণ, ধর্ষকদের প্রশ্রয়দানকারী প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা, নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সংঘঠিত অপরাধের জন্য জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি করতে হবে।

আইনের সংস্কার দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ধর্ষণকারীকে দ্রুত বিচারে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা, অভিযুক্তকে অভিযোগের প্রমাণ করতে হবে ধর্ষণের শিকার নারীকে নয়, ধর্ষণ মামলায় জামিনঅযোগ্য ঘোষণা করতে হবে, ধর্ষণের শিকার নারীকে ডাক্তারি পরীক্ষার নামে টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করা এবং নারীর ক্ষতিপূরণের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল গঠন করতে হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com