রাষ্ট্রপতিকে অ্যামনেস্টির চিঠি: ঢাবি শিক্ষককে অব্যাহতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন

0

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোর্শেদ হাসানকে বরখাস্তের ঘটনাকে অবৈধ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বরাবর একটি চিঠিতে এই মন্তব্য করে অ্যামনেস্টি। ড. মোর্শেদের নিরাপত্তাসহ একাধিক বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে ‘পদচ্যুত অধ্যাপক হুমকিতে’ শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়েছে- অধ্যাপক মোঃ মোর্শেদ হাসান খান রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি পত্রিকায় মত প্রকাশের জন্য তাকে পেশাগত অবস্থান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ড. মোর্শেদ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে একাধিক মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন। তাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসায় না যাওয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে। যেখানে তার ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রী ও ছোট সন্তান থাকেন। বুধবার সংগঠনটির ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অ্যামেনেস্টির বিবৃতিতে বলা হয়- শুধু ২০১৯ সালেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) এর আওতায় ৭৩২ টি মামলায় কমপক্ষে ১ হাজার ৩২৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। দোষী প্রমাণিত হলে অধ্যাপক মোরশেদ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রপতি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
 চিঠিতে অ্যামনেস্টি জানায়, একটি পত্রিকায় মতপ্রকাশের কারণে ঢাবির মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানকে হয়রানি, ভয় দেখানোর বিষয়ে আমি উদ্বিগ্ন। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে এবং মৃত্যুর হুমকির মুখেই ঢাবি সিন্ডিকেট ড. মোর্শেদকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েছে। এটি খুবই আশঙ্কার বিষয় যে, একজন একাডেমিক শুধু তার বাকস্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের জন্য তার জীবন আজ হুমকির মুখোমুখি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত’ করার অভিযোগে তদন্ত কমিটির ত্রুটিপূর্ণ রিপোর্ট পর্যালোচনা ছাড়াই ড. মোর্শেদকে ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের বিধি ৫৬(৩) এর অধীনে ‘নৈতিক স্খলন’ বা ‘অদক্ষতা’ এর ভিত্তিতে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এছাড়া শুধু মতপ্রকাশের কারণে বাংলাদেশ দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১২৪(এ) ধারার অধীনে ড. মোর্শেদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ জাতীয় অভিযোগ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে ‘নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি (আইসিসিপিআর) এর ১৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন করেছে। যেখানে বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্র হিসেবে এই চুক্তি প্রত্যয়ন করেছে। তাছাড়া এটি জানতে পেরে গভীরভাবে বিরক্ত যে, ফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অধ্যাপক মোর্শেদ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের দ্বারা মৃত্যুর হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানা গেছে।
তাকে তার ক্যাম্পাসের বাসার বাইরে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে, যেখানে তার ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী স্ত্রী রয়েছেন।
এমতাবস্থায় আপনি অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান এবং তার পরিবারের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ড. মোর্শেদ হাসান খানের বরখাস্তকে পুনর্বিবেচনা করে তাকে তার পদে পুনর্বহাল করুন। সেইসাথে ড. মোর্শেদ হাসান খানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দন্ডবিধি ধারা ১২৪(এ) এর অধীনে আনা সমস্ত অভিযোগ অনতিবিলম্বে বাতিল করুন।
 ড. মোর্শেদ হাসান খান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ভূমিকা সম্পর্কে ২০১৮ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে একটি মতামত লিখেছিলেন। পরে একই বছরের ২ এপ্রিল ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত’ এবং ‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের অসম্মান’ করার অভিযোগ এনে তাকে সকল শিক্ষামূলক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয় ঢাবি প্রশাসন। ওই বছরেরই ২৮ মে ঢাবি এই অভিযোগগুলি তদন্তের জন্য দেয়।
ড. মোর্শেদ জানান, অসাবধানতাবশত ২০১৮ সালের ২৬ শে মার্চ নয়া দিগন্তে প্রকাশিত আমার একটি নিবন্ধে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি’র অভিযোগ তোলা হয়। এ নিয়ে সমালোচনা হলে আমি ওইদিনই তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমা ও দু:খ প্রকাশ করে উক্ত প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যেসকল বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে তা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেই। যা ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ নয়া দিগন্তে প্রকাশিত হয়।
এমনকি নয়া দিগন্ত অনলাইন থেকেও ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শীর্ষক লেখাটি তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে ফেলা হয়। তবুও আমাকে চাকুরি থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩’র আদেশ এবং ঢাবির প্রথম স্ট্যাটিউটের সম্পূর্ণ বিরোধী। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবধরনের নিয়ম মেনে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিরুদ্ধে বক্তব্য তুলে ধরেছি। এরপরও আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণরুপে অব্যাহতি দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশের পরিপন্থী। আমার প্রতি কোনো ন্যায় বিচার করা হয়নি। বর্তমানে তাকে বিশ^বিদ্যালয়ের বাসায় না যাওয়ার জন্য অজ্ঞাত ব্যক্তিরা হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com