শ্রীলঙ্কার নির্বাচন : চীন-ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বার্তা!

0

শ্রীলঙ্কার জনগণ বুধবার পার্লামেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে রাজাপাকসা সরকারের প্রতি তাদের আস্থা জানিয়েছে। তবে দেশের ‘সবচেয়ে পুরানো দল’ ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নির্বাচনী বিপর্যয় এবং তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের (টিএনএ) দুর্বলতা থেকে বিশেষ করে পশ্চিমাদের জন্য একটা বার্তা উঠে এসেছে, যাদেরকে এখন তাদের শ্রীলঙ্কা কৌশল ঢেলে সাজাতে হবে।

দুটি তামিল মিত্র দলের সহায়তা নিয়ে – যারা কৌশলগতভাবে আলাদাভাবে নির্বাচন করেছে – তাদের সহায়তায় রাজাপাকসাদের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন শ্রীলঙ্কা পোদুজানা পেরামুনা পার্টি (এসএলপিপি) ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে এখন স্পিকারসহ মোট ১৫১টি আসন পেয়েছে। এতে তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত হয়েছে, যেটা তাদেরকে প্রতিশ্রুত সংবিধান পরিবর্তনের ব্যাপারে সাহায্য করবে।

কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দুই দফা নির্বাচন পেছানোর পরও, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থাপনার বিষয়টি পার্লামেন্ট নির্বাচনে রাজাপাকসাদের বড় ব্যবধানে জিততে সহায়তা করেছে। শ্রীলঙ্কায় এ পর্যন্ত ২,৯০০ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে এবং ১১ জন মারা গেছে।

যোগাযোগে হোঁচট

নির্বাচনের ফল হয়তো শ্রীলঙ্কার সাথে পশ্চিমাদের কূটনৈতিক যোগাযোগকে কঠিন করে তুলবে কারণ ক্ষমতাসীন রাজাপাকসা আর পশ্চিমাদের মধ্যে একটা অস্বাচ্ছন্দ্য ও বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে।

ইউএনপির পরাজয় এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিঙ্গের অসম্মানজনক প্রস্থানের পর রাজাপাকসারা এখন সাথিথ প্রেমাদাসাকে একজন জোরালো বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে পাবেন, গ্রামীণ এলাকার প্রতি যার একটা টান রয়েছে। তিনি এসজেবি জোটের নেতা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিঙ্গে প্রেমাদাসার ছেলে, তামিল টাইগাররা যাকে হত্যা করেছিল।

যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত তামিল সংখ্যালঘুদের বিচারের দায়িত্বটা যেহেতু এখন রাজাপাকসাদের উপরে পড়েছে, তাই নতুন কট্টরপন্থী তামিল জাতীয়তাবাদী এমপিদের কঠোর অবস্থানের মোকাবেলা করতে হবে তাদেরকে। মধ্যমপন্থী টিএনএ – যারা পশ্চিমাদের বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত – তাদের এমপির সংখ্যা এখন কমে গেছে।

অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি

নির্বাচনী ফলাফলের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহিন্দা রাজাপাকসার নিয়োগের বিষয়টি বৈধতা পেয়েছে। গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্বচ্ছন্দ্য বিজয়ের পর মাহিন্দাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন তার ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসা। তারা ক্ষমতায় ফিরে আসায় এক ধরণের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি সংহত হওয়ার আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা এবং প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিঙ্গের বিগত সরকারের সময় যেটা ছিল অনুপস্থিত।

আগামী চার বছরের জন্য রাজাপাকসারা তাদের কাজের পরিকল্পনা করে ফেলেছেন। সত্যি বলতে কি, সাংবিধানিক পুনর্গঠনের বিষয়টি নিয়ে অপেক্ষা করলেও চলবে, কারণ এখন সরকারটা মূলত দুই ভাইয়ের মধ্যে, আর তাদের সাথে যে জাতিগত ইস্যু রয়েছে, সেটার রাতারাতি সমাধান হবে না। কিন্তু অর্থনীতিকে ততক্ষণ অপেক্ষা করানো যাবে না।

ত্রিপক্ষীয় চুক্তি

চীনের ব্যাপারে ভারতের উদ্বেগের কারণ নিরাপত্তা বিষয়ক। শ্রীলঙ্কার অন্যান্য বন্ধু অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগও একই কারণে। এই চারটি দেশ ভারত মহাসাগর, এবং দক্ষিণ চীন সাগর ও পূর্ব চীন সাগরে চীনের সম্প্রসারণবাদি মানসিকতার কারণে উদ্বেগ থেকে ইন্দো-প্যাসিফিক কোয়াড গড়ে তুলেছে। শ্রীলঙ্কা দুই নৌকায় পা দিতে পারবে না। সে কারণে নিজেদের অবস্থানগত সুবিধাকে ব্যবহার করে বড় দেশগুলোর সাথে শ্রীলঙ্কাকে দর কষাকষি করতে হবে।

ভারত আর জাপান ঐতিহাসিক পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিণকোমালি বন্দর ও শহর উন্নয়নের জন্য, এবং কলম্বো বন্দরের ইস্টার্ন কন্টেইনার টার্মিনাল (ইসিটি) নির্মাণের জন্য শ্রীলঙ্কার সাথে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করেছে। কিন্তু রাজাপাকসারা ইসিটি প্রকল্পে ভারতের অংশগ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে, যেটা আগের সরকার নিশ্চিত করেছিল। বামপন্থী শ্রমিক ইউনিয়ন এবং সিংহল-বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের প্রতিবাদের অজুহাত দিয়ে এটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com