লেখাপড়ায় মোটামুটি অপদার্থকে উত্তম বস্তু বলে চালানো হচ্ছে

0

গ্রেড এবং শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে অনেক কথা বলার আছে। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কি চলছে সেটি অনেকেরই জানা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অবস্থাটি কিন্তু এক দিক থেকে আরো ভয়ঙ্কর।

অতিমূল্যায়ন এবং অবমূল্যায়ন দুটোই অবিচার। ছাত্রছাত্রীদের অনেকের ধারণা কোন কোন শিক্ষক বেশী নম্বর দেন আবার কেউ কেউ দেন কম। নীতিগতভাবে ভুল ধারণা। কম বা বেশী দেওয়ার কোন এখতিয়ার কোন শিক্ষকের নেই। নম্বর কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। শিক্ষকের দায়িত্ব সঠিক মূল্যায়ন। যা প্রাপ্য তার চেয়ে এক কম বা বেশী তিনি দিতে পারেন না।

নীতির কথা থাক। বাস্তবে কী হচ্ছে? মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে লাগাম ছাড়া অতিমূল্যায়ন চলছে। লেখাপড়ায় মোটামুটি অপদার্থকে উত্তম বস্তু বলে চালানো হচ্ছে। এর পরিণতি আমরা ভোগ করছি। ভবিষ্যতে আরও বেশী করে করব। অদূর ভবিষ্যতে মাইক্রোস্কোপ দিয়েও যোগ্য মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ছাত্রদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যোগ্যতার তেমন প্রয়োজন নেই। জিপিএ পাঁচ সস্তা। প্রায় কিছু না করেই এসএসসি ও এইচএসসি প্র্যাক্টিক্যালে ৯০% নম্বর পাওয়া যায়। এই চূড়ান্ত অন্যায় স্বাভাবিক ঘটনা। ছাত্রছাত্রীদের কী বলবেন? শতকরা কতগুলো স্কুল এবং কলেজে ঠিকমত প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস হয়? তারপরেও মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে এই সব আনাচারের মধ্যে একধরনের ধারাবাহিকতা আছে। এই স্তরগুলিতে সকল ছাত্র মোটামুটি একইভাবে মুল্যায়িত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। এখানেও অতিমূল্যায়ন চলছে। তবে ধারাবাহিকতা একেবারেই নেই।

ছাত্রদের ভাইভার কথাই ধরা যাক। বেসলাইন বলে একটি কথা চালু আছে। বেসলাইন হচ্ছে হাজিরা নম্বর। অর্থাৎ একজন ছাত্র একটি প্রশ্নের উত্তরও যদি করতে না পারে তবে তাকে শুধু ভাইভাতে উপস্থিত হওয়ার কারনে যে নম্বরটুকু দিয়ে দেওয়া হবে। ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত শিক্ষকেরা মিলে এই বেসলাইন নির্ধারণ করেন। শুনতে পাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন বিভাগে এই বেসলাইন হচ্ছে ৭০%! এইসব বিভাগে কোন ছাত্র ভাইভাতে এ-গ্রেডের নিচে পায় না! একই অবস্থা প্র্যাকটিকাল পরীক্ষাগুলোতেও।

হটাৎ কোন শিক্ষক যথাসাধ্য ঠিক মূল্যায়ন করতে আগ্রহী হলে তিনি ছাত্র, এমনকি সহকর্মীদের চোখে “খারাপ” অথবা “অমানবিক” বলে পরিচিতি লাভ করেন। আপসোস। কি ঠিক আর কি বেঠিক সেই ধারনাটি সকল পর্যায় থেকে মুছে যাচ্ছে।

আমি নিজে কখনো ভাইভা বা ব্যবহারিক পরীক্ষায় ঠিক মূল্যায়ন করতে পেরেছি বলে ভাবতে পারি না। সবসময় অতিমূল্যায়নই করে চলেছি। ওই যে বলেছি, আমরা কেউ বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস করি না। তবে অতিমূল্যায়নের ভেতরেও চেষ্টা করি যেন ভালো, মাঝারী এবং দুর্বল ছাত্রদের স্কোরের ভেতর সুস্পষ্ট পার্থক্য বজায় থাকে। এটি কোন সান্ত্বনা নয়। তবে অনেক সময়ে এটুকুও করা হয়না, ভালো হোক আর দুর্বলই হোক সবাই এ-গ্রেডের, এটাই সময়ের দাবী। এতে ছাত্ররাও খুশী, শিক্ষকরাও অত্যন্ত “মানবিক”।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভাইভা এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর নিয়ে এক তুঘলকি কাণ্ড চলছে। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে অনিয়মেরও একটি নিয়ম আছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই অনিয়মের কোন নিয়ম নেই। যে বিভাগ যেভাবে খুশী বেসলাইন সেট করছে।

আমরা সুবিচারের ধারণা শিক্ষাক্ষেত্রেও অনেকটা নির্বাসনে পাঠিয়েছি। শিক্ষায় সুবিচার না থাকলে আর বাকি থাকে কী? 

-Hasan Naqib

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com