অবৈধ পথে আয়-উপার্জনের ক্ষতি ও অপকারিতা

0

ইবাদতের সঙ্গে আয়-উপার্জনের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। সঠিক পথে অর্থ উপার্জনের তাগিদ ও নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। কারণ বৈধ উপায়ের আয়-উপার্জন ছাড়া মানুষের কোনো ভালো কাজও মহান আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُواْ مِمَّا فِي الأَرْضِ حَلاَلاً طَيِّباً وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
হে মানবমণ্ডলী! পৃথিবীতে যা আছে তা থেকে হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী গ্রহণ কর এবং শয়তানের অনুসরণ কর না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৬৮)

মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী গ্রহণ করা। কোনো বস্তু সামগ্রী হালাল ও পবিত্র হওয়ার জন্য আয়-উপার্জন বৈধ হতে হবে। হারাম বা অবৈধ উপায়ে আয়-উপর্জন করে তা দিয়ে হালাল ও পবিত্র সামগ্রী কেনা হলেও তা ওই ব্যক্তির জন্য হালাল বা পবিত্র নয়।

কোনো বস্তু-সামগ্রী বৈধ, হালাল বা পবিত্র হওয়ার জন্য পূর্ব শর্তই হচ্ছে তা সঠিক উপায়ে আয়-উপার্জন করা। প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে হালাল ও বৈধ পন্থায় আয়-উপার্জন করা।

মানুষ শয়তানের ধোকা ও প্ররোচনার শিকার হয়ে আয়-উপার্জন বাড়াতে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। এ কারণেই কুরআনুল কারিমে শয়তানের প্ররোচনা, লোভ ও ধোকা থেকে বেঁচে থাকতে সতর্ক করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে আরও সতর্ক করে বলেন-
إِنَّمَا يَأْمُرُكُمْ بِالسُّوءِ وَالْفَحْشَاء وَأَن تَقُولُواْ عَلَى اللّهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ
সে তো এ নির্দেশই তোমাদের দেবে যে, তোমরা অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করতে থাক এবং আল্লাহর প্রতি এমন সব বিষয়ে মিথ্যারোপ কর যা তোমরা জান না।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৬৯)

বৈধ উপার্জনে আহার করায় মানুষের সব ইবাদত-বন্দেগি মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। আর তা শয়তানের জন্য অনেক বড় পরাজয়। এ কারণেই শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে। অন্তরে কুপ্ররোচনা দেয়। অশ্লীল ও মন্দ কাজের দিকে ধাবিত করে। আর এ সবই হালাল রিজিক লাভের পরিপন্থী।

মনে রাখতে হবে
জীবনভর নামাজ রোজা হজ যাকাত তথা যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থেকে হালাল আয়-উপার্জন না করলে তার কোনো ইবাদতই কবুল হবে না। কুরআনের বিধান অনুযায়ী ইসলামি অনুশাসন মেনে চলে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় হালাল জীবিকা উপার্জনে আত্মনিয়োগ করাও অনেক বড় ইবাদত। কেননা এ কাজেই বান্দার সব ইবাদত-বন্দেগি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়।

সঠিক উপায়ে উপার্জিত অর্থ দ্বারা জীবন ধারণের ফলে একদিকে যেমন লাল খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা হয়, আবার বৈধ জীবনাচারের মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও সুখ-শান্তি সুনিশ্চিত হয়।

যারা হালালের উপর স্থির থাকতে পারে না, হারাম বর্জন করতে পারে না তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ। হাদিসে পাকে হারাম সম্পদ উপার্জন ও এর ব্যবহারে বরকত উঠিয়ে নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাদের জন্যই জাহান্নাম প্রস্তুত। হাদিসে এসেছে-
‘কোনো ব্যক্তি যদি উপার্জিত হারাম সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে তবু তা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং ওই সম্পদ থেকে বরকত উঠিয়ে নেয়া হয়। যদি সে ওই সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাখে তবে (সে সম্পদ) তার জন্য জাহান্নামের রাস্তাকে সহজ করে দেয়। (মিশকাত)

এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, যারা অন্যায় পথে উপার্জন করে তার কিছু অংশ এ অন্যায় কাজ থেকে বাঁচার আশায় আল্লাহর পথে ব্যয় করে। তাদের এ ব্যয় অনর্থক। যা কোনো কাজে আসবে না।

কারণ হারাম তা যে কোনো বিবেচনায় হারাম এবং তা শয়তানের অনুসরণের শামিল। আল্লাহ তাআলা এসব থেকে দুনিয়ার সকল মুমিনকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বৈধ পথে উপার্জন করার তাওফিক দান করুন। হালাল উপার্জিত অর্থ তাঁর পথে ব্যয় করার তাওফিক দান করুন। জীবিকার উৎস হোক হালাল উপার্জন- এ প্রত্যাশা হোক সবার। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com