ঈদের আগে ফিতরা দেওয়ার বিধান ও ফজিলত কী?

0

রমজানের রোজা শেষ হওয়ার আগে গরিবের মুখে হাসি ফোটানোর অন্যতম মাধ্যম সাদকাতুল ফিতর। ইসলামে নির্ধারিত পরিমাণ ফিতরা (অর্থ) পেয়ে অসহায় মানুষ পরিবারের প্রয়োজনে ব্যয় করবে। ধনীর সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করবে।

ফিতরা আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এমন অনেকেই আছেন, যারা সাদকায়ে ফিতর সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। সাদকায়ে ফিতরের পরিচয়ও জানেন না। তাদের জন্য সাদকায়ে ফিতরের পরিচয়, ফজিলত, ফিতর আদায়ে করণীয় বিষয়সমূহ তুলে ধরা হলো-

সাদকায়ে ফিতর
সাদকায়ে ফিতর হলো- রোজা খোলার সাদকা বা দান। এমন দানকে সাদকায়ে ফিতর বলা হয়, যা পুরো রমজান মাস রোজা রাখার পর ঈদের দিন সব সামর্থ্যবানদের জন্য আদায় করা আবশ্যক। ঈদের আগে এ বিশেষ দান দিয়েই গরিব-অসহায় মানুষ ঈদের আনন্দে মেতে ওঠবে।

সাদকায়ে ফিতর একটি ইবাদত
কোরআনুল কারিমে সাকদায়ে ফিতর দ্বারা পরিশুদ্ধ-পবিত্র হওয়ার কথা বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ تَزَکّٰی
‘নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে পরিশুদ্ধ হয় ৷’ (সুরা আলা : আয়াত ১৪)
মুফাসসিরিনের কেরামের মতে, এ পরিশুদ্ধ দ্বারা সাদকায়ে ফিতরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা সাদকায়ে ফিতর আদায় করবেন তারাই (রোজা ভুল-ত্রুটি থেকে পরিশুদ্ধ হয়ে) পাবেন সফলতা।

পরিশুদ্ধ বা পবিত্রতার অর্থ কুফর ও শিরক ত্যাগ করে ঈমান আনা, অসৎ আচার-আচরণ ত্যাগ করে সদাচার অবলম্বন করা এবং অসৎকাজ ত্যাগ করে সৎকাজ করা। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যা নাজিল হয়েছে তার অনুসরণ করা।
আয়াতের আরেক অর্থ, ধনসম্পদের যাকাত প্ৰদান করা। তবে যাকাতকেও এ কারণে যাকাত বলা হয় যে, তা ধন-সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে। এখানে تَزَكَّىٰ শব্দের অর্থ ব্যাপক হতে পারে। ফলে ঈমানগত ও চরিত্রগত পরিশুদ্ধি এবং আর্থিক যাকাত প্ৰদান সবই এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে। (ফাতহুল কাদির)

আবার কেউ কেউ বলেছেন, যে নিজের আত্মাকে নোংরা আচরণ থেকে এবং অন্তরকে শিরক ও পাপাচারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করে। (আহসানুল বয়ান)

রমজানের শেষ দিকে ঈদের আগের বিশেষ আর্থিক ইবাদতও এটি। সাদকায়ে ফিতর নবিজী কর্তৃক ঘোষিত ফরজ ইবাদত। হাদিসের পরিভাষায় আর্থিক ইবাদতকে সাদকাতুল ফিতর আবার জাকাতুল ফিতরও বলা হয়। হাদিসে পাকে তিনি যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তাহলো-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং প্রত্যেক স্বাধীন ও গোলাম এবং নারী-পুরুষের জন্য এক সা’ খেজুর কিংবা যদ দান করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (বুখারি, মুসলিম)

সাদকাতুল ফিতরের গুরুত্ব ও ফজিলত
১. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন, অনর্থক অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য।’ (আবু দাউদ)

২. হজরত জারির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রামজানের রোজা সাদকাতুল ফিতর আদায় করার আগ পর্যন্ত আসমান-জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে।’ (তারগিব ওয়াত তারহিব)

৩. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন ঘোষকের মাধ্যমে পবিত্র নগরী মক্কার পথে পথে এ ঘোষণা দেওয়ালেন যে- জেনে রেখো! প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় সকলের ওপর সাদাক্বায়ে ফিতর অপরিহার্য। (তাহলো)- দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা অন্য খাদ্যবস্তু।’ (তিরমিজি)

ঈদের আগে ফিতরা দিতে মুসলিম উম্মাহর করণীয়
১. সাদকায়ে ফিতর আদায় করা মুমিনের জন্য ইসলামি শরিয়ত কর্তৃক অত্যাবশ্যকীয় বিধান ৷
২. হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী- ‘তুহরাতুল্লিস সায়িম’ অর্থাৎ একমাস সিয়াম সাধনায় মুমিনের অনাকাঙ্খিত ত্রুটি-বিচ্যুতির কাফফারা হলো সাদকায়ে ফিতর।
৩. হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী- ‘তুমাতুল্লিলমাসাকিন’ অর্থাৎ সমাজের অসহায়, দুঃস্থ-দরিদ্র, রিক্তহস্ত জনগোষ্ঠি যাতে বছরান্তে একটি দিন অন্তত খেয়ে-পরে আনন্দ উদযাপন করতে পারে ৷
৪. দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পরে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক পানাহারের অনুমতি মিলায় তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ৷

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাদকায়ে ফিতরের গুরুত্ব অনুধাবন করে রমজানের রোজার ত্রুটি-বিচু্যতি থেকে মুক্তি লাভের তাওফিক দান করুন। সাদকায়ে ফিতরের গুরুত্ব ও ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com