মুন্সীগঞ্জে ফলন ও দাম কম হওয়ার আশঙ্কায় হতাশ আলু চাষীরা

0

মুন্সীগঞ্জে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির চালিকাশক্তি হচ্ছে আলু। ব্র্যান্ড হিসেবে আলুগঞ্জ নামেও অনেকে চেনেন মুন্সীগঞ্জকে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে লোকসানের হাত থেকে কোনোভাবেই বেঁচে উঠতে পারছেন না আলুগঞ্জের আলু চাষীরা। আলু আবাদ করে যেমন কৃষকরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়, আবার কখনো কখনো এ আলুচাষ হয়ে ওঠে গলার কাঁটা। এ বছর আলুর ফলন কম এবং দামও কম হওয়ার আশংকায় কৃষকরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

বাজারে যত আগে আলু উঠবে, লাভ তত বেশি হবে। এ ধারণা থেকে মুন্সীগঞ্জে দিন দিন আগাম আলুর চাষ বাড়ছে। আগাম আলুতে প্রত্যাশিত ফলন পেলেও এবার বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না চাষীরা। এতে আগাম চাষীরা পড়েছেন লোকসানের মুখে। ১০ টাকায় আগাম জাতের নতুন আলু কেনা যাচ্ছে খুচরা বাজারেই। চাষী পর্যায়ে দাম নেমে গেছে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৮ টাকায়। অথচ আলু ওঠার পূর্ণ মৌসুম শুরু হবে আরো এক-দুই মাস পর। এ কারণে বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও আলু নিয়ে চরম লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।

মুন্সীগঞ্জের অনেকে আবার আলুর মওজুদ ব্যবসা করেও অর্থবিত্তের মালিক বনে যান। তবে সব সময় পরিস্থিতি অনুকূল নাও থাকতে পারে।

তবে বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে আসলেও এখানকার চাষীরা আলু চাষ না করলে যেন জীবন চলে না। জীবনের সাথে মিশে গেছে আলু। গত বছর লাভ হয়নি কী হয়েছে, এবার হয়তো হবে। কিন্তু না এবার দেখা যাচ্ছে আরো খারাপ অবস্থা। এভাবে মুন্সীগঞ্জের আলু চাষীদের এখন বেহলা দশায় রূপান্তরিত হয়েছে।

এর মাঝে আবার দেখা দিয়েছে কাণ্ডরোগ। এই রোগের ফলে আলু গাছের উপরের অংশটি কয়েক দিনের মধ্যে পচে যায়। তার ফলে আলু গাছ জমিতেই মরে যায়। এই পরিস্থিতিতে আলুর জমিতে কৃষকরা নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করছেন কৃষিবিদদের পরামর্শে।

গেল কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়ার কারণে আলুর জমিতে এমনটি হয়েছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছে। তবে অনেক কৃষক দাবি করেছেন, এটি আলু ক্ষেতের জন্য মৌসুমী রোগ। প্রচুর পরিমাণে সূর্যের আলো জমিতে পড়লে এ যাত্রা থেকে কৃষকরা বেঁচে যাবে বলে তারা মনে করেন।

কয়েকদিন ধরে আকাশটি কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় আলু ক্ষেতে এমন প্রভাব পড়েছে। তবে এ পরিস্থিতি দেখলে কৃষকরা অনেকটাই বিচলিত হন। এর কারণ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জমিতে আলু আবাদে কৃষকরা প্রচুর পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন। আলু দিয়ে তারা সারা বছরের অর্থ যোগান দেন পরিবার পরিজনের জন্য। তাই তারা এ পরিস্থিতিতে অনেকটাই ভাবনায় পড়ে যান। যারা ধারদেনা করে আলু আবাদ করে থাকেন, তারা এই পরিস্থিতিতে মহাভাবনায় পড়ে যান।

চলমান মৌসুমে আলু আবাদের শেষ পর্যায়ে প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়েন মুন্সীগঞ্জ জেলার কৃষকরা। তাদের রোপন করা আলুর জমি অধিকাংশই প্রবল বর্ষণে পানিতে তলিয়ে যায়। আবাদ করা আলুর জমির অনেক আলুই সেই সময়ে পচে যায়। ফলে এ পর্যায়ে কৃষক পড়ে বিপাকে।

মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আলু। জেলার দু’-তৃতীয়াংশ কৃষিজমিতে আলু আবাদ করে থাকেন স্থানীয় কৃষকরা। আলুর ভরা মৌসুম আসতে আরো প্রায় এক থেকে দেড় মাস বাকি থাকলেও এরইমধ্যে জমি থেকে আগাম জাতের আলু উত্তোলন করছিলেন চাষীরা।

আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় আর রোগ-বালাই হওয়ায় ক্ষেতের ফলনও ভালো হয়নি। ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টির পর অধিকাংশ জমিতেই আলু আবাদ হয়েছে দেরিতে। অনেক জমিতে বীজ নষ্ট হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় আবাদ করেনি অনেকে। এতে আবাদও হয়েছে কম জমিতে।

এক কৃষক জানান, গত বছর প্রতি বিঘা জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মণ আলু পেয়েছিলেন। এবার প্রতি বিঘায় আলু হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ মণ। বিগত মৌসুমে তারা খেত থেকেই প্রতি কেজি আগাম জাতের গ্যানুলা ও ডায়মন্ড আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করেছেন। আর এ বছর ওই আলু মাত্র ৫ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাগেশ্বরের আলুচাষী মিজান জানান, এক বিঘা জমিতে আগাম আলু উৎপাদন করতে সাধারণত ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়। গড়ে এক বিঘা জমিতে ৭৫ মণ আলু উৎপাদন হয়। ওই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়ে ১০ টাকার কিছুটা বেশি। আলু আবাদে বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, হালচাষ, মজুরি মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার টাকা। তিনি ক্ষেত থেকে সেই আলু তুলেছেন।

মাকহাটি গ্রামের আলু চাষী হুমায়ুন জানান, ‘আগাম আলু আবাদে খরচ বেশি হলেও বাজার দরে তা পুষিয়ে যায়। কিন্তু এবার লোকসান হয়ে গেল। আলু লাগাবার সময় বৃষ্টিত আমার জমির সব বীজ আলু পচে গেছে। বিঘায় ৩৫ হাজার টাকার ওপর খরচ হয়ে গেছে। আর আলু বিক্রি করে পেয়েছি ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

হিমাগারগুলোতে গত মৌসুমের আলুর মজুত শেষ হয়নি। তাই কৃষকেরা আগাম আলু বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।

মুন্সীগঞ্জে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৭৯০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তবে আবাদ হয়েছে ৩৫৭৯৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে প্রায় আট হাজার হেক্টর জমিতে চাষীরা স্বল্পমেয়াদি আগাম আলু আবাদ করেছেন।

এখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছিলো প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর আলু জমিতে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আলু নষ্ট হবার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ থেকে ২০ দিন পরে আলু আবাদের ফলে তা তোলার ক্ষেত্রেও হতে পারে বিলম্ব। এদিকে আলুর জমিতে কাণ্ডরোগ দেখা দেয়ায় এ রোগের কীটনাশকের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কীটনাশক ব্যবসায়ীরা। বিপদে পড়ে কৃষকরা এখন চড়া দামে কীটনাশক কিনছেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট কৃষকরা সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com