রাজধানীতে ভুল চিকিৎসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু

0

রোগীর পিত্তনালীর পাথর অপারেশন করতে গিয়ে খাদ্যনালী ফুটো করে ফেলেছেন চিকিৎসক। অভিযোগ, এত বড় ঘটনায়ও রোগীর সমস্যায় পাত্তা দেননি চিকিৎসক। অপারেশনের আট দিন পর মারা যায় মতিঝিল সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র তরিকুল ইসলাম তোহা (১৭)। এ বিষয় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ক্যান্সার হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা: জাহাঙ্গীর কবির।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) এমন তথ্য জানান মারা যাওয়া তরিকুল ইসলাম তোহার মা পারভীন আক্তার।

পারভীন আক্তার বলেন, গত ১৯ ডিসেম্বর খিলগাঁওয়ের খিদমাহ হাসপাতালে পিত্তথলির অপারেশন হয় রাজধানীর মুগদার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম তোহার। ওই দিন রাত ১২টায় অপারেশন করেন সরকারি ক্যান্সার হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর কবির। অপারেশনের পর দেখা দেয় জটিল কিছু সমস্যা। এসময় হাসপাতাল থেকে তোহাকে বাসায় আনতে না চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জোর করে তাকে রিলিজ দিয়ে দেয়। বাসায় আনার পর তোহার অবস্থার আরো অবনতি হয়। ২১ তারিখ আবারো নেয়া হয় খিদমাহ হাসপাতালে। সেখানে অনেক তালবাহানার পর তোহাকে ভর্তি নেয়া হয় বলে জানান তার মা।

তোহার মায়ের অভিযোগ, তোহা অনেকটা শকে চলে গেলেও পাত্তা দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক জাহাঙ্গীর কবির। তবে মধ্যরাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তার আইসিইউ দরকার। উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও স্থানান্তর করতে হবে। দিশেহারা হয়ে শ্যামলিতে অবস্থিত বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেয়া হয় তোহাকে। সেখান থেকে জানানো হয়, তোহার অবস্থা মুমূর্ষু। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা যায় খাদ্যনালীতে বড় ধরনের ছিদ্র। স্পেশালাইজড হাসপাতালে দু’দফা অপারেশনের পর ২৮ তারিখ মারা যায় তোহা।

তোহাকে হত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তোহার মা।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, পরে তোহার যেসব চিকিৎসক চিকিৎসা করেছেন তারা জানিয়েছেন, দায় এড়াতেই তোহাকে দ্রুত রিলিজ দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছিল।

স্বজনদের অভিযোগ, তারা জানতে পেরেছেন, পিত্তথলির পাথর অপসারণ করতে গিয়ে তোহার খাদ্যনালী ছিদ্র করে ফেলেছেন ডা: জাহাঙ্গীর।

স্পেশালাইজড হাসপাতালে তোহার চিকিৎসা করেছেন স্পেশালাইজড হসপিটালের সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা: শাহরিয়ার ফয়সাল। এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি আরেকজন সিনিয়র চিকিৎসকের কাজ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন আগের অপারেশনে বড় ধরনের ভুল হয়েছে।

এদিকে, সমস্যার সমাধানে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। মৃত্যু সনদেও কারণ হিসেবে উল্লেখ আছে খাদ্যনালীতে ছিদ্রের কথা।

এসব অভিযোগের বিষয় খিদমাহ হাসপাতালে গেলে কথা বলতে রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ।

তবে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও অবহেলার কথা অস্বীকার করেন ডা: জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে এ ঘটনাটি ঘটেনি।

এদিকে তোহার মৃত্যুর ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার।

তোহার মা পারভীন আক্তার বলেন, ‘আমার দুই সন্তানের মধ্যে তোহা ছিল ছোট। অত্যন্ত বিনয়ী তোহা ছিল পরিবারের মাধ্যমনি। আমার সেই তোহাকে চিকিৎসার নামে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com