সীমান্তে নিহত সুবাসের মরদেহ দেড় বছরেও দেয়নি বিএসএফ

0

ছেলে একদিন ঘরে ফিরবে সেই আশায় এখনও মাঝরাতে হঠাৎই ঘুম ভাঙে বিমলা রানীর। কিন্তু  ছেলের ঘরে ফেরার সেই অপেক্ষা শেষ হয়নি দেড় বছরেরও।

তবে একদিন পরিবারের প্রিয়জন ফিরবে তাদের মাঝে, সেই আশায় দিন কাটে তাদের।

২০২০ সালের ১৫ জুন নওগাঁর পোরশা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় শ্রী সুভাষ চন্দ্র। এরপর কেটেছে ৫৭৪ দিন, কিন্তু পরিবার ফিরে পাইনি তার মরদেহ। ছেলে হারানোর এই শোক এখনও কাঁদায় সুবাসের মাকে। অন্যদিকে স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ সুবাসের স্ত্রী কামনা রাণী। একমাত্র মেয়ের (৭) মাঝে খুঁজে ফেরে স্বামীর স্মৃতি। মেয়েকে বুকে আগলে রেখে এখনও শ্বশুর বাড়ি আছেন তিনি।

মা বিমলা রানী বলেন, বুকের মানিক (সুবাস) হারিয়ে গেছে এতদিন হয়ে গেল, কিন্তু এখনও সে জীবিত, নাকি মৃত সেটাই সঠিক ভাবে নিশ্চিত হতে পারিনি। ২৪ ঘণ্টা অশ্রুসিক্ত নয়নে দিন কাটে আমার। পৃথিবীর সব কিছুর বিনিময়ে হলেই একবার যদি ফিরে পেতাম আমার বুকের মানিককে।

তিনি বলেন, শুধু কি ছেলে হারানোর শোক, সঙ্গে রয়েছে অভাবের সংসারে কত রকম কষ্ট। সুবাসের স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে তাদের পেটের ভাত জোগাতে হয় আমাকে। মানুষের বাড়িতে কাজ করে দু’বেলা ভাত জোটে আমাদের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষমই ছিল সুবাস। তাকে হারানোর পরে পেট ভরে ভাত খেতে পারিনি কখনও।   তবে ছেলে আমার বাড়িতে ফিরবে সেই আশায় আছি এখনও।

সুবাসের স্ত্রী কামনা রাণী বলেন, বাড়ির পাশের বাজারে সুবাসের একটি চায়ের দোকান ছিল। গরু চোরাচালানের সঙ্গে আমার স্বামীর জড়িত না। আমরা জানি কৃষি কাজ করার জন্য সীমান্ত এলাকায় গেছিল সুবাস। কিন্তু বিএসএফ অন্যায় ভাবে তাকে হত্যা করেছে। কিন্তু তার মরদেহ ফেরত দেয়নি এখনও। আমরা বিজিবির সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম সে যদি মারা গিয়েও থাকে তাহলে অন্তত তার মরদেহটা ফেরত দেওয়া হয়। অন্তত শেষবারের মত প্রিয় মানুষটির মুখ দেখতে পেতাম। কিন্তু তা থেকেও আমরা বঞ্চিত হয়েছি।

নওগাঁ-১৬ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল কবির জানান, ঘটনাটা ২০২০ সালের, সেসময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। যতটুকু জানি সে সময়ে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা হওয়ায় সুভাসের মরদেহ বিএসএফ হেফাজতে নিয়েছিল। এবিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে  সুভাসের মরদেহ ফেরত আনতে বিএসএফর সঙ্গে পতাকা বৈঠকেরও আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু পরে কী হয়েছে তা আমার জানা নেই।

অন্যদিকে চলতি মাসের ৮ জানুয়ারি নওগাঁর সাপাহার উপজেলার হাপানিয়া কৃষ্ণস্বদা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মকবুল হোসেন উরফে সালাউদ্দিন (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এখনও তার মরদেহ ফেরত দেয়নি বিএসএফ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com