দেশ বিক্রির হাটে বিক্রেতার ভূমিকায় ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি: তারেক রহমান

0

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, শুধু দেশের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার মানবাধিকার কিংবা মানুষের স্বাধীনতাই ভুলুন্ঠিত হয়নি, খোদ বাংলাদেশের স্বাধীনতাই এখন হুমকির সম্মুখীন। দেশ এক গভীর ষড়যন্ত্রের কবলে। এখন খোদ বাংলাদেশটা নিয়েই ভাগ বাটোয়ারার হাট বসেছে। আর এই বেচাকেনার হাটে বিক্রেতার ভূমিকায় ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার (০২ সেপ্টেম্বর ২০২১) ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি আয়োজিত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সভায় ভিডিওর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, তরুণ প্রজন্মের জেনে রাখা দরকার ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কি ঘটেছিলো? যারা দেশের গৌরব এবং মর্যাদার প্রতীক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলো, যারা গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলো, যারা বাংলাদেশকে একটি তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলো, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তারা পরাজিত হয়েছে। ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ এবং জাতীয়তাবাদী শক্তি বিজয়ী হয়েছিল এবং দেশে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল।

তারেক রহমান বলেন, সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি মহাজোটের নামে একজোট হয়েছে। ফলে, এখন এই অপশক্তির টার্গেট দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং দেশের সেনাবাহিনী। দেশের এই দুই শক্তি শক্তিমান থাকলে কখনোই বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করা যাবেনা। এ কারণেই চলছে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের বিরুদ্ধে সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ হিসেবেই দেশে সুকৌশলে জঙ্গিবাদের জন্ম দেয়া হয়েছে।
এরই অংশই হিসেবে, দেশে বিদেশে জাতীয়তাবাদী শক্তির ইমেজ ক্ষুন্ন করতেই ২০০৪ সালে ঘটানো হয়েছে ২১ আগস্ট। ২১ আগষ্টের নৃশংস হামলাটি ছিল কথিত ‘ওয়ান ইলেভেন’ সৃষ্টির প্রাক মহড়া। সুতরাং, ২১ আগস্ট কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ‘২১ আগষ্ট’ আর ‘ওয়ান ইলেভেন’ একই সূত্রে গাঁথা।

তারেক রহমান বলেন, ‘২১ আগষ্ট’ আর ‘ওয়ান ইলেভেন’ এর ষড়যন্ত্রের পথ ধরেই ২০০৯ নয় সালে ক্ষমতা দখল করে মহাজোট। এরপরই বিডিআর পিলখানায় ঘটে সেনা হত্যাযজ্ঞ। জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়াকে জালিমের কারাগারে বন্দি করা হয়।

দেশের স্বার্থের পক্ষে কথা বলার কারণে ‘আবরার’দেরকে পিটিয়ে হত্যা করে দেশপ্রেমিকদেরকে সতর্ক বার্তা দেয়া হয়। প্রতিবাদী মানুষকে গুম খুন অপহরণ কিংবা সীমান্তের ওপারে ফেলে রেখে আসার নীতি চালু করা হয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই হলো বর্তমান বাংলাদেশ। বেহাত বাংলাদেশ। পরাজিত অপশক্তির হাত থেকে এই বেহাত বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’। বাংলাদেশ পুনরুদ্ধারের এই আন্দোলনে অতীতের মতো জাতীয়তাবাদী শক্তিকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, বর্তমানে দেশের সবকটি সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। একদিকে আওয়ামী লীগ- আমলা লীগ-পুলিশ লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অন্যদিকে অব্যাহত দুর্নীতি, দুরাচার, লুটপাট খুন, গুম, অপহরণ, টাকা পাচার আর নানা অনিয়মে দিশেহারা আওয়ামী লীগ।

তিনি আরো বলেন, দেশের এমন এক সঙ্কটকালে, স্বাধীনতার ঘোষক সম্পর্কে যে মিথ্যাচার-অপপ্রপচার শুরু হয়েছে, এটি উদ্দেশ্যেমূলক। সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ এই সরকার মিমাংসিত কিংবা অপ্রয়োজনীয় বিষয় কিংবা নানা ইস্যু তৈরী করে মানুষকে ভিন্ন দিকে ব্যাস্ত রাখার অপকৌশল নিয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে স্বাধীনতার ঘোষককে নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। ইতিহাসে স্বাধীনতার ঘোষকের ঘোষক অবস্থান নির্ধারিত। যারা মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন দেখেনি তারা স্বাধীনতার ঘোষককে চিনবেনা। যাদের মন্ত্রিসভা থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদকে বিদায় নিতে বাধ্য করা হয় তাদের কাছ থেকে স্বাধীনতার ঘোষক সম্পর্কে ইতিবাচক বক্তব্য আশা করা বৃথা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীনতার ঘোষকের শুদ্ধ ও স্বচ্ছ রাজনীতির আয়নায়, জনগণের সামনে ভেসে ওঠে আওয়ামী লীগের কালিমালিপ্ত রাজনীতির কদর্য রূপ, তাই, নিজেদের কলুষিত রাজনীতির কদর্য চেহারা আড়াল করতে ব্যর্থ হয়ে এখন স্বাধীনতার ঘোষকের ইমেজ নষ্টের চক্রান্তে লিপ্ত।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া কিংবা মাদার অফ ডেমোক্র্যাসি খালেদা জিয়া’র বিরুদ্ধে মিথ্যাচার- অপপ্রচার চালিয়ে লাভ নেই।
তাঁরা জনগণের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন ‘গর্জনে’ নয় ‘অর্জনে’।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সারা বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র ও বিএনপি সমার্থক। গণতন্ত্রহীন অন্ধকারে আলোকবর্তিকা হয়ে বিএনপির জন্ম হয়েছিল। আবারো আওয়ামী জাহেলিয়াতের গভীর অন্ধকারে বাংলাদেশ। তাই সেদিন বেশি দূরে নয় গণতন্ত্রহীন অন্ধকার থেকে আবারো বিএনপির নেতৃত্বেই বাংলাদেশ অন্ধকার মুক্ত হবে, ইনশাআল্লাহ।

বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতি ঐক্যের আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল ‘স্বাধীনতার জন্য’। আরো একবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করতে হবে ‘স্বাধীনতা রক্ষার জন্য’। এই ঐক্যের ভিত্তি হবে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক সুবিচার।

বিএনপির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ১৯৭৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর প্ৰতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দল বিএনপি। দেশ এবং জনগণের প্রয়োজনে বিএনপি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশের উন্নয়নে দিয়েছিলেন ১৯ দফা কর্মসূচি। এই দফা ১৯ দফা ছিল বাংলাদেশে ভাগ্যোন্নয়নের চাবিকাঠি।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তারেক রহমান বলে, শহীদ জিয়ার সাহসী নেতৃত্বে বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। জনগণ পেয়েছে স্বাধীনতা। ফিরে পেয়েছে গণতন্ত্র। ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’ বেগম খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সকল আয়োজনের মধ্যমনি হয়ে থাকার কথা ছিল বেগম খালেদা জিয়ার কিন্তু তিনি ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তির প্রতিহিংসার বেড়াজালে বন্দি।

তারেক রহমান বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব আর আপোষহীন নেতৃত্ব, বিএনপিকে পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিটি নগর-বন্দর-শহর- প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি জনপদে, মানুষের ঘরে ঘরে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, অপশক্তির প্রতিহিংসার বেড়াজাল ভেদ করে মুক্তিকামী মানুষের মুক্তিদূত হয়ে অচিরেই জনগণ মজলুম নেত্রীর সরব উপস্থিতি দেখতে পাবে ইনশাআল্লাহ।

বক্তৃতায়, দলের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যারা বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন পর্যায়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দলের জন্য জেল-জুলুম-হুলিয়া কষ্ট-নির্যাতন সহ্য করেছেন, তাদের প্রত্যেকের অবদানকে স্মরণ করেন তারেক রহমান। যারা মারা গেছেন তাদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা করেন।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বিভিন্ন সময়ে দলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী জেল-জুলুম হামলা-মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন, অনেকে গুম-খুন-অপহরণের শিকার হয়েছেন। অনেক পরিবার অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের দিন পার করছেন, তারেক রহমান তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।

মানুষের অধিকার আদায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনে, যারা জীবন দিয়েছেন, আত্মত্যাগ করেছেন, আগামী দিনে জনরায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনায় এলে আত্মত্যাগী প্রত্যেকটি নেতাকর্মী কিংবা তাদের পরিবারের অবদান দল, অবশ্যই মূল্যায়ন করবে। রাষ্ট্রীয়ভাবেও তাদের অবদানকে স্মরণ রাখা হবে, এই প্রতিশ্রুতিও ব্যাক্ত করেন তারেক রহমান।

বিএপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরোত্তম , বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম প্রমুখ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com