জনগণের ভোট ডাকাতিতে আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বে অদ্বিতীয়: তারেক রহমান

0

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসনকাল স্রেফ স্বাধীনাত্তোর বাংলাদেশে বাকশালীয় শাসনের আধুনিক সংস্করণ। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নামে চালু করা হয়েছিললুটেরাঅর্থনীতিআর বর্তমানেমুক্তবাজারঅর্থনীতির নামে চলছেমুক্তপাচারঅর্থনীতি।

গত একদশকে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে নয় লক্ষ কোটি টাকা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা কষ্ট করে দেশে রেমিটেন্স পাঠায়। আর নিশিরাতের সরকারের মদদে লুটেরা চক্র দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়।

গতকাল শুক্রবার (৩০ জুলাই ২০২১) ‘ব্যক্তিখাত বিকাশে শহীদ জিয়া মুক্তবাজার অর্থনীতি শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জাতীয় উদযাপন কমিটির উদ্যোগে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে আয়োজিত সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় উদযাপন কমিটির আহবায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য . খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সদস্য সচিব আবদুস সালামের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, . আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপকখন্দকার মোস্তাহিদুর রহমানসহ অনেকে।

সভায় তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে বাকশালীয় সরকার আর শহীদ জিয়ার সরকার এই দুই সরকারের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান কয়েক বছরের নয়, . বলা যায়, মাত্র কয়েক মাসের। এমনকি এই দুই সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদকাল প্রায় সমান। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার এবং বিক্ষুব্ধ জনগণ যেখানে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অস্ত্রহাতে তুলে নিয়েছিল অপরদিকে শহীদ জিয়ার আহবানে সেই জনগণই দেশ পুনর্গঠনে হাতে তুলে নিয়েছিল কোদাল।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্র সমাজ গঠন তথা রাষ্ট্র বিনির্মান সবক্ষেত্রেই স্বাধীনতার ঘোষকের সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, তিনি গ্রাম কৃষিনির্ভর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের আশাআকাঙ্খাস্বপ্নকে ধারণ করতে পেরেছিলেন। শহীদ জিয়া জনগণকে বিশ্বাস করেছিলেন, জনগণও শহীদ জিয়াকে বিশ্বাস করেছিল।

বাংলাদেশে মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষগুলো দেখেছিলো রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের সরকারটি ক্রমেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চেয়েওবেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। তারা নাগরিকদের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল।

তিনি বলেন, অপরিকল্পিত অপরিণামদর্শী জাতীয়করণের নামে সম্পদ প্রতিষ্ঠানের ওপর ব্যক্তি মালিকানা কেড়েনিয়েছিলো। সাধারণ জনগণের সম্পদের মালিকানা চলে গিয়েছিলো সরকারদলীয় দুর্নীতিবাজ চক্রের দখলে। এমন একঅরাজক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে গিয়ে জিয়াউর রহমানের শ্লোগান ছিলউন্নয়নউৎপাদনের রাজনীতি

আরস্বনির্ভর বাংলাদেশ

তারেক রহমান বলেন, শহীদ জিয়ার উন্নয়নউৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে চালু হওয়া লুটেরা অর্থনীতি প্রত্যাখ্যাত হয়, বিপরীতে মানুষ মুক্তবাজার অর্থনীতির সুফল পেতে থাকে। আনুষ্ঠানিকভাবে কিংবা খাতাকলমে, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাংলাদেশের প্রবেশকাল ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে ধরা হলেও মূলতঃ শহীদজিয়ার হাত ধরেই বাংলাদেশে মুক্তবাজার অর্থনীতির সফল প্রস্তুতি পর্ব শুরু।

তারেক রহমান আরো বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির সুফল পেতে হলে প্রয়োজন দেশপ্রেমিক, সৎ দক্ষ নেতৃত্ব। প্রয়োজন, সুশাসন এবং জবাবদিহি মূলক সরকার। বৈশিষ্টগুলো বিদ্যমান ছিল বলেই শহীদ জিয়ার শাসনামল কিংবা খালেদা জিয়ারশাসনামল, উভয় সরকারের শাসনামলেই মুক্তবাজার অর্থনীতির সবটুকু সুবিধা আদায় করে বাংলাদেশ।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতি মানেই অপরের জন্য নিজেদের বাজার উন্মুক্ত করে দেয়া নয়। বরংকৌশল দক্ষতার সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাজারে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা কিংবা বাণিজ্য প্রসার ঘটানোর মধ্যেই রয়েছে মুক্তবাজার অর্থনীতির ইতিবাচক অর্জন। কারণেই, শহীদ জিয়ার আমলে বাংলাদেশে যেমন বিশ্ব বাজারের প্রবেশ ঘটেছিলো, তেমনি শহীদ জিয়ার হাত ধরেই বিশ্ববাজারে প্রবেশ করেছিল বাংলাদেশ। প্রেসিডেন্ট জিয়ার উদ্যোগে বাংলাদেশের গার্মেন্টস এবং জনশক্তি বিদেশের বাজারে প্রবেশই

এর বড় প্রমান।

তিনি আরো বলেন, জিয়াউর রহমান অল্প কয়েক বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের পণ্য বিদেশের বাজারেই প্রবেশ করাননি একইসঙ্গে মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে বাংলাদেশেকেও প্রস্তুত করেছিলেন। প্রেসিডেন্টজিয়া বাংলাদেশের জন্য চীন থেকে উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ আমদানি করেছিলেন। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশটি শহীদজিয়ার আমলে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়। উৎপাদন বাড়াতে প্রেসিডেন্ট জিয়া কলকারখানায় তিন শিফট চালু করেছিলেন।দেশে ইপিজেড নির্মাণের উদ্যোগটিও প্রেসিডেন্ট জিয়ার সময়কালেই নেয়া হয়।

তারেক রহমান বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে সিনথেটিক ফাইবার কিংবা প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাট এবং পাটের মতো অর্গানিকফাইবারের চাহিদা বেড়েই চলেছে। এই চাহিদা পূরণে পাট এবং পাটজাত সামগ্রী বিশ্ববাজারে রপ্তানির বিশাল সুযোগ নিতে পারতো বাংলাদেশ। অথচ, এখন রপ্তানি দূরে থাক, উল্টো বাংলাদেশ এখন পাট আমদানি করতে চায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে বিনাশুল্কে বাংলাদেশে পাট আমদানির জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছে বাংলাদেশ জুট মিলসঅ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিএনপি সরকারের নেয়া পদক্ষেপ উল্লেখ করতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির অনিবার্যতা এবং অপরিহার্যতা উপলদ্ধি এবং বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ যাতে আইসিটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে না পড়ে সেই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তা থেকেই, বেগম খালেদা জিয়ার সরকার ২০০২ সালেই প্রতিষ্ঠা করেছিল তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কপৃথক একটি মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, সেই মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় পর ১৯ বছর পর চলতি জুলাই মাসেস্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইন্ডেক্সে প্রকাশিত একটিরিপোর্টের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের ১৩৭ দেশের মধ্যে১৩৫তম। উল্লেখ্য, রিপোর্টে দেখা যায়, মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্তলিবিয়া, সিরিয়া, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া এবং উগান্ডা।

তারেক রহমান বলেন, মোবাইল ইন্টারনেট স্পিডের গতিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলেও মিথ্যাচার, অপপ্রচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম খুন অপহরণ, টাকা পাচার আর ব্যাঙ্ক ডাকাতিতে বাংলাদেশ অপ্রতিদ্বন্দ্বী। শুধু তাই নয়, নিশিরাতে জনগণের ভোট ডাকাতিতে আওয়ামী লিগ সরকার বিশ্বে অদ্বিতীয়।

স্বাধীনাত্তোর বাকশালীয় সরকার এবং বর্তমানকার নিশিরাতের আওয়ামী সরকার প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, দেশে যারা সিনিয়র সিটিজেন রয়েছেন তারা বাকশালী সরকারের সন্ত্রাসনৈরাজ্যদুর্নীতিদুঃশাসন লুটপাটব্যাংক ডাকাতিভোট ডাকাতি আর খুনি রক্ষীবাহিনীর হত্যাগুমখুন সম্পর্কে অবগত। অপরদিকে নতুন প্রজন্মের যারা বাকশালী দুঃশাসন দেখেনি তাদের জন্য আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসনকাল স্রেফ স্বাধীনাত্তোর বাংলাদেশে বাকশালীয় শাসনের আধুনিক সংস্করণ।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাকশালীয় শাসনামলেও ব্যাংক ডাকাতি হতো এখনো ব্যাংক ডাকাতি হচ্ছে। তখনওভোট ডাকাতি হতো আর এখন ভোট ডাকাতিকেই নিয়মে পরিণত করা হয়েছে। তখনও বিরোধী দলমত দমনের প্রধান অস্ত্রছিল গুম খুন অপহরণ, এখনো চলছে, একই পাপের পুনরাবৃত্তি। তখনকার খুনি রক্ষীবাহিনীর ভূমিকায় বর্তমানে র্যাবপুলিশেরকতিপয় ইউনিফর্মধারী।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, ৭৫ এর নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি মহাজোটের নামে একজোট হয়ে দেশকে আবার সেই ৭৫ এর নভেম্বরের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। তাই দেশ বাঁচাতে মানুষ বাঁচাতে, জাতীয়তাবাদী শক্তি, গনতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে, ৭৫ এর নভেম্বরের চেতনায় আবারো ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশেরস্বার্থ বিরোধী ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানান।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com