কোরবানির সংকিপ্ত ইতিহাস : হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।

0

কোরবানির সংকিপ্ত ইতিহাস : হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।কোরবানি : সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই (হেনবী!) আমি আপনাকে (নিয়ামত পূর্ণ) কাওসার দান করেছি, অতএব, আপনি আপনাররবএর সন্তুষ্টির জন্যে সালাত কায়েম করুন তাঁর নামে কোরবানি করুন’ (সূরা আল কাওসার১০৮/) রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেওকোরবানি করবে না সে যেন ঈদগাহের নিকটে না আসে’ (আহমদ ইবনে মাজাহ) হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনিবলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কোরবানির দিনে মানব সন্তানের কোনো নেক আমলই আল্লাহ তায়ালার নিকট তত প্রিয় নয়, যতপ্রিয় কোরবানি করা। কোরবানির পশুর শিং, পশম খুর কিয়ামতের দিন (মানুষের নেক আমলনামায়) এনে দেয়া হবে।কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা আনন্দচিত্তে কোরবানি করো’ (তিরমিজি)

কোরবানির অর্থ : আমাদের সমাজে বাংলায় প্রচলিত কোরবানি শব্দের অর্থ হচ্ছে, নিকটবর্তী হওয়া বা সান্নিধ্য লাভ করা। আলকুরআনে সূরা আল মায়েদার ২৭ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে, ‘ইজ ক্কাররাবাক্কুরবানানঅর্থাৎ যখন তার দুজনে কোরবানি পেশ করলো বা পশু জবাই করলো, বা জবাই করে ফেলে আসল। সূরা আল কাওসারে বলা হয়েছে, ‘ফাছল্লি লিরাববিকাওয়ানহারঅর্থাৎ অতএব, (হে নবী!) আপনাররবএর স্মরণে সালাত আদায় করুন তাঁর সন্তুষ্টির জন্যে কোরবানি করুনএখানেনাহারবলতে কোরবানি বোঝানো হয়েছে। আসলেনাহারশব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, নহর, বিশেষ নিয়মে জবাইবা জবাই করা, জবাই করে হত্যা করা বা প্রিয় বস্তু জবাই করে হত্যা করা বা ত্যাগ করা।

কোরবানির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : দুনিয়ায় মানব বসতির শুরুতেই কোরবানির প্রচলন শুরু হয়েছে। পৃথিবীর প্রথম মানুষ আমাদেরআদি পিতা নবী হজরত আদম (.) এর প্রথম সন্তান কাবিল ছিল আল্লাহ তায়ালা পিতামাতার অবাধ্য বা কাফের।কাবিলের ছোট ভাই হজরত আদম (.) এর দ্বিতীয় ছেলে হাবিল ছিল আল্লাহভীরু মুমেন। সে সময় আল্লাহ তায়ালারহুকুমে জোড়া জোড়া সন্তান হতো। একজন পুত্র একজন কন্যা সন্তান। আল্লাহ তায়ালার বিধান মতো প্রথম জোড়ার পুত্রেরসাথে দ্বিতীয় জোড়ার কন্যার বিয়ে বৈধ ছিল। কাবিল আল্লাহ তায়ালার বিধান মানতে রাজি ছিল না। সে চেয়েছিল তার জোড়ার সুন্দরী বোনকেই বিয়ে করবে। শেষ পর্যন্ত তাদের দুজনকে কোরবানি পেশ করার নির্দেশ দেয়া হলো।

আর বলা হলো যার কোরবানি কবুল করা হবে সে প্রথম জোরার সুন্দরী বড় বোনকে বিয়ে করবে। ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালারঘোষণা হচ্ছে,‘(হে নবী!) আপনি এদের কাছে আদমের দুই সন্তানের গল্পটি যথাযথভাবে শুনিয়ে দিন; গল্পটি ছিলো, যখন তারাদুজনে আল্লাহর নামে কোরবানি পেশ করলো, তখন তাদের মধ্যে একজনের (হাবিলের) কাছ থেকে কোরবানি কবুল করা হলো, আর একজনের (কাবিলের) কোরবানি কিছুতেই কবুল করা হলো না, (যার কোরবানি কবুল করা হয়নি) সে বললো আমি অবশ্যই তোমাকে (যার কোরবানি কবুল করা হলো তাকে) হত্যা করবো, সে (যার কোরবানি কবুল করা হলো) বললো, আল্লাহ তায়ালা তো শুধু পরহেজগার লোকদের কাছ থেকেই কোরবানি কবুল করে থাকেন’(সূরা আল মায়েদা২৭)

আল্লাহ তায়ালার আইন অমান্য করার কারণেই পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটায় পিতামাতার অবাধ্য সন্তান আল্লাহরদ্বীনের শত্র“, দুনিয়ায় শয়তানের প্রথম শিকারকাবিল পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম আল্লাহর আইন, বিধান বা দ্বীন অমান্যকরা আর মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটালো আল্লাহর দ্বীনের শত্রকাফেরকাবিল এটাই হচ্ছে নাস্তিক, কাফের শয়তানের কাজ, যা আলকুরআনের সূরা আল মায়েদাসহ আরো কয়েকটি সূরায় উল্লেখ আছে। পৃথিবীতে কোরবানির ইতিহাস হত্যার ঘটনাএখান থেকেই শুরু হয়েছে।

আজকে মুসলিম সমাজে কোরবানির যে প্রচলন তা মূলত মুসলিম মিল্লাতের বা জাতির পিতা হজরত ইব্রাহীম (.) এর দেখানোপথ বা সুন্নাত। হজরত ইব্রাহীম (.) এর শতবর্ষ বয়সের পর আল্লাহ তায়ালা তাঁকে যে সন্তান দান করেছিলেন, তিনি আল্লাহতায়ালা কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে তাঁর সে কলিজার টুকরা হজরত ইসমাইল (.) এর কোরবানির সূত্র ধরে আজও কোরবানি প্রচলিত আছে।

হজরত ইব্রাহীম (.) এর কোরবানির সূত্রপাত : মুসলিম মিল্লাতের বা জাতির পিতা হজরত ইব্রাহীম (.) নমরুদ তারসাঙ্গোপাঙ্গের অত্যাচারে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তাঁর স্ত্রী হজরত সারাকে সাথে নিয়ে শাম দেশে হিজরত করলেন।দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানকার বাদশাহ ছিলো জালিম ভীষণ বদলোক। বাদশাহর লোকেরা হজরত ইব্রাহীম (.) তাঁর সুন্দরী স্ত্রীহজরত সারার আগমনের সংবাদ বাদশাহর দরবারে পৌঁছে দিলে বাদশাহ

তাদেরকে ধরে নিয়ে আসতে বলে। বাদশাহর লোকেরা হজরত ইব্রাহীম (.) তাঁর স্ত্রী সারাকে বাদশাহর দরবারে হাজির করে।বাদশাহ হজরত ইব্রাহীম (.) এর কাছে জানতে চায় তার সাথে স্ত্রী লোকটি কে? ইব্রাহীম (.) চিন্তা করলেন, স্ত্রী বললে হয়তোবা তাঁকে মেরে ফেলতে পারে, তাই তিনি বলেন, সে আমার দ্বীনি বোন। বাদশাহ হজরত ইব্রাহীম (.) কে বন্দী করে, আর হজরতসারাকে বাদশাহর বদস্বভাব চরিতার্থ করার জন্যে রেখে দেয়। বাদশাহর কুপ্রস্তাবে হজরত সারা রাজি নাহলে বাদশাহ তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়।

অতঃপর হজরত সারা দুরাকাআত সালাত আদায় করার অনুমতি চাইলে বাদশাহ তাঁকে সালাত আদায়ের ব্যবস্থা করতে দেয়।হজরত সারা সালাত শেষে আল্লাহ দরবারে ফরিয়াদ করেন যেন আল্লাহ তায়ালা তাঁর সতীত্ব রক্ষা করেন। এরই মধ্যে বাদশাহ অত্যন্ত অসুস্থ দুর্বল হয়ে পড়ে। অবস্থা খারাপ দেখে আর বাদশাহর মৃত্যুর জন্য তার লোকেরা হজরত সারাকে দায়ী করবে ভেবেহজরত সারা বাদশাহর সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। একে একে তিন বার একই ঘটনা ঘটলে বাদশাহ হজরত সারার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। হজরত সারার সতীত্ব দেখে আর এক সতী নারী হজরত হাজেরাকে তাঁর দাসী হিসেবে দিয়ে তাঁদেরকে বিদায় করেদেয়।

হজরত সারা হজরত ইব্রাহীম (.) মুক্ত হয়ে সে দেশে বসবাস শুরু করেন। হজরত সারা তাঁর দাসী হজরত হাজেরাকে হজরতইব্রাহীম (.) এর সাথে বিয়ে দেন। কারণ হজরত সারার বয়স তখন ৯০ বছর আর হজরত ইব্রাহীম (.) এর বয়স তখন ১০০বছর। তাদের বিয়ের দীর্ঘ সময় পার হলেও তখনো হজরত সারা মা হতে পারেননি। তিনি ভাবলেন শেষ বয়সে যদি আল্লাহতায়ালা মেহেরবানি করে তাঁর স্বামী হজরত ইব্রাহীম (.) কে কোনো সন্তান দান করেন। আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানিতে এই হজরত হাজেরার গর্ভেই হজরত ইসমাইল (.)-এর জন্ম হয়।

হজরত ইসমাইল (.) এর জন্মের পর হজরত ইব্রাহীম (.) তাঁর স্ত্রী হজরত হাজেরা কলিজার টুকরা ছেলে ইসমাইলকে আল্লাহতায়ালা নির্দেশে কাবা ঘরের নিকটবর্তী সাফা মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে নির্জন স্থানে সামান্য খেজুর এক মসকপানিসহ রেখে আসেন। হজরত ইব্রাহীম (.) যখন তাঁদের অবস্থায় রেখে স্থান ত্যাগ করছিলেন, তখন হজরত হাজেরা প্রশ্নকরছিলেন, আপনি আমাদের নির্জন স্থানে রেখে চলে যাচ্ছেন ? হজরত ইব্রাহীম (.) ক্ষীণকন্ঠে জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ।আবারো হজরত হাজেরা প্রশ্ন করলেন এটা কি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ? হজরত ইব্রাহীম (.) আবারও জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ। হজরত হাজেরা আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করে তাঁর শিশু সন্তানকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করলেন।

সে সময় কাবা ঘরের তেমন কোনো চিহ্ন ছিলো না। কাবা ঘরের ভিটিটি জমিন থেকে বেশ উঁচু ছিল। বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট বন্যায়চার পাশ ভেঙে গিয়েছিল। হজরত হাজেরা তাঁর সন্তানের খাদ্য পানীয় যখন শেষ হয়ে গেলো হাজেরা তখন খাদ্য পানিরসন্ধানে সাফা মারওয়া পাহাড়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। যখন নিরাশ হয়ে ফিরছিলেন তখন একটি আওয়াজ শুনতে পান।হাজেরা বলেন, কে আছো আমি তোমার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি সম্ভব হলে তুমি আমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে একটু সাহায্য করো।হঠাৎ তিনি তাঁর শিশু পুত্র ইসমাইল (.) এর কাছে একজন লোক (ফেরেশতা) দেখতে পেলেন। সে (ফেরেশতা) তাঁর পায়েরগোড়ালি অথবা ডানা দ্বারা জমিনে আঘাত করলে অথবা হজরত ইসমাইল (.) এর কান্নাজনিত পায়ের গোড়ালির ঘর্ষণে নিচথেকে পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হতে লাগল। সেই ফোয়ারা বা কূপ যা বর্তমানে জমজম নামে বিশ্ব মুসলিমের কাছে পরিচিত।সুপেয় পানীয় হিসেবে পান করে পরিতৃপ্ত হন মুসলমানরা। তাও কাবাকে কেন্দ্র করে হজরত ইসমাইল (.) এর উছিলায় আল্লাহ তায়ালার করুণায় সৃষ্টি হয়েছে।

হাজেরা তাঁর মসক পূর্ণ করে নিলেন আর নিজেও তৃপ্তির সাথে পানি পান করলেন। এতে হজরত হাজেরার ক্ষুধা নিবারণ হল তাঁর শিশু পুত্রের জন্যে প্রয়োজনীয় দুধেরও ব্যবস্থা হলো। হজরত হাজেরার সাফা মারওয়া পাহাড়ে ক্রমাগত বার দৌড়াদৌড়ি করার কারণে সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা হজ ওমরাহ পালনকারীদের জন্যে সাফা মারওয়া পাহাড়ে বার দৌড়াদৌড়ি করার বিধান জারি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অবশ্যইসাফা মারওয়াপাহাড় দুটো আল্লাহতায়ালার নিদর্শন সমূহের অন্যতম, অতএব, যদি তোমাদের মধ্যে কোনো লোক হজ বা ওমরা আদায় করার এরাদা করে তারজন্যে এই উভয় পাহাড়ের মাঝে তাওয়াফ করা বা দৌড়ানো দোষের কিছু নেই, কেননা যদি কোনো ব্যক্তি অন্তরে নিষ্ঠার সাথে কোনো ভালো কাজ করে তাহলে তারা যেন জেনে রাখে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা কৃতজ্ঞতাপরায়ণ প্রভূত জ্ঞানের অধিকারী”(সূরা বাকারা১৫৮)

হজরত ইসমাইল (.) এর যখন হাঁটাচলা খেলাধুলা করার বয়স তখন হজরত ইব্রাহীম (.) কে স্বপ্নে আদেশ করা হলো, তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি করো। ইব্রাহীম (.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ১০টি উট কোরবানি করলেন। পুনরায়তিনি আবারো একই স্বপ্ন দেখলেন। অতঃপর ইব্রাহীম (.) আবারো ১০০টি উট কোরবানি করলেন। আবারো তিনি একই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছেতো মুহূর্তে আমার কলিজার টুকরা প্রিয় পুত্র ইসমাইল (.) ছাড়া আর তেমন কোনো প্রিয় বস্তুনেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর আমি তাকে (হজরত ইব্রাহীম . কে) একজন ধৈর্যশীল পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দানকরলাম।

সে যখন পিতার সাথে হাঁটাচলার উপযোগী হলো, তিনি (ইব্রাহীম .) বললেন, হে আমার পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে কোরবানি করছি। সুতরাং তোমার মতামত কি? সে (হজরত ইসমাইল .) বললেন, হে আমার পিতা! আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন তা পালন করুন। আপনি আমাকে আল্লাহর মেহের বানিতে ধৈর্যশীলদের একজন পাবেন। অতঃপর যখন তাঁরাদুজন একমত হলো আর আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার সামনে আত্মসমর্পণ করল এবং ইব্রাহীম (.) ইসমাইল (.) কে জবাইকরার জন্যে কাত করে শুইয়ে দিলো; তখন আমি ইব্রাহীমকে ডাক দিয়ে বললাম, হে ইব্রাহীম, তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যে রূপ দিয়েছো। নিশ্চয়ই এটা ছিল ইব্রাহীম ইসমাইলের জন্যে একটা পরীক্ষা। অতঃপর আমি ইব্রাহীমকে দান করলাম একটি মহা কোরবানির পশু। অনাগত মানুষের জন্যে (কোরবানির) বিধান চালু রেখে, তাঁর স্মরণ আমি অব্যাহত রেখে দিলাম। শান্তিবর্ষিত হোক ইব্রাহীমের ওপর। আমি এভাবেই সৎপরায়ণ ব্যক্তিদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।’ (সূরা আস সফফাত১০১১০৯)

কোরবানির তাৎপর্য গুরুত্ব : হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কতিপয় সাহাবা রাসূল (সা.) কেজিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) কোরবানি কী? রাসূল (সা.) বললেন, কোরবানি মুসলিম মিল্লাতের বা জাতির পিতাইব্রাহীম (.) এর সুন্নাত। তারা আবারো প্রশ্ন করলেন, এর মধ্যে আমাদের জন্যে কি আছে? রাসূল (সা.) বললেন, কোরবানির পশুর প্রতিটা পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি আছে। তারা বললেন, ভেড়ারতো অসংখ্য পশম আছে। রাসূল (সা.) বললেন, ভেড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেয়া হবে, যদি তা খালেস নিয়তে কোরবানি করা হয়’(ইবনে মাজাহ) আবুদাউদ শরীফের এক হাদিসে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মর্যাদার দিন হচ্ছে কোরবানির দিন।

কোরবানির শিক্ষা : কোরবানি কোনো চাপ বা জবরদস্তি বিষয় নয়। মানুষ স্বেচ্চায় তার প্রতিপালকের সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় সবচাইতে প্রিয় বস্তু ত্যাগ করার মানসিকতা সৃষ্টি করে। যেমন হজরত ইব্রাহীম (.) শুধু মাত্র স্বপ্নে দেখেছেন, তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাহে কোরবানি করো। আর অমনি তিনি তাঁর আদরের একমাত্র সন্তান হজরত ইসমাইল (.)কে কোরবানির জন্যে সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত ছিলেন। পৃথিবীতে মানুষের কাছে সবচাইতে আকর্ষণীয় বস্তুর মধ্যে অর্থসম্পদ বা টাকাকড়ি আর সন্তান অন্যতম। এই অর্থসম্পদের মোহ ত্যাগের মানসিকতা সৃষ্টি করাই হচ্ছে কোরবানির শিক্ষা। কোরবানি আমাদের ঈমান তাকওয়া বৃদ্ধি করে পরকালের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। রাসূল (সা.) নির্দেশ করেছেন, হে লোকসকল তোমরা ত্রটিমুক্ত উত্তমপ্রাণি কোরবানি করো, কারণ কোরবানির পশুগুলো হবে তোমাদের জান্নাতে যাওয়ার বাহন’(বায়হাকি)

কোরবানি সচ্ছল সব মুসলমানের ওপর ওয়াজিব। কোরবানির গোশতের ওপর আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী, গরিবমিসকিন মুসাফিরের হক আছে। খেয়াল রাখতে হবে সমাজের কোনো একজন ব্যক্তিও যেন কোরবানির গোশত থেকে বঞ্চিত না হয়।কিন্ত কোরবানির চামড়া শুধু মাত্র জাকাতের হকদারদেরই হক।

কোরবানির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ : আমাদের সমাজে উট, গরু, মহিষ ধরনের পশু ভাগে কোরবানি করা হয়। এক্ষেত্রে সমমনা সমআর্থিক সঙ্গতি সম্পন্ন লোকদেরই একত্রে কোরবানি করা উচিত। অনেকেই আবার কোরবানির পশুতে আকিকার জন্যে এক ভাগ বা দুই ভাগ রাখেন। এতে আকিকা সহিহ হবে না। আকিকার জন্যে ছেলে হলে দুটি ভেড়া বা বকরি আর মেয়ে হলে একটি ভেড়া বা বকরি নির্ধারণ করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে কোরবানির সাথে আকিকার কোনো সম্পর্ক নেই।কোরবানি ঈদুল আজহার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ধনীর জন্যে এটা আনন্দ আর গরিবের জন্য স্বস্তির।

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে এই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে আমাদের সকলের জীবন সুন্দর করার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।

লেখকঃ

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব। সাবেকঃইমাম খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com