পেগাসাস প্রজেক্টে বিশ্বজুড়ে বড় ঝুঁকিতে পড়েছেন আইনজীবী, অধিকারকর্মী ও সাংবাদিকরা

0

পেগাসাস প্রজেক্টে বিশ্বজুড়ে বড় ঝুঁকিতে পড়েছেন আইনজীবী, অধিকারকর্মী সাংবাদিকরা। কর্তৃত্ববাদী বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্পেষণমূলক কিছু শাসকগোষ্ঠী ইসরাইলে তৈরি এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে নির্বাচিত অধিকারকর্মী, ভিন্নমতাবলম্বী এবংসাংবাদিকদের গোপনীয় তথ্য চুরি করতে ব্যবহার করেছে। পেগাসাসের উৎপাদনকারী ইসরাইলের এনএসও গ্রুপ। তারা বার বারবলেছে, তাদের আবিষ্কৃত পেগাসাস শুধু সন্ত্রাসী ভয়াবহ অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু সরকারগুলো তা ব্যবহারকরছে এর বাইরে নিজেদের উদ্দেশে। অনলাইন গার্ডিয়ান খবর দিয়েছে। এরই মধ্যে পেগাসাসের মাধ্যমে বিশ্বের কমপক্ষে ৫০হাজার মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ফোনকল, কন্টাক্ট লিস্ট, টেক্সট ম্যাসেজ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আড়ি পাতা হয়েছে।এতে বাদ পড়েনি অনেক দেশের সরকার প্রধান, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, কূটনীতিক, সাংবাদিকসহ ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনীতিকও।

এমন অনেক তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়েছে আজারবাইজানের। সেখানে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় স্বৈরাচার ইলহাম আলিয়েভ। তিনি ভিন্নমতাবলম্বীদের সহ্য করতে পারেন না বললেই চলে। সেদেশের বিপুল সংখ্যক অধিকার কর্মীর তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়েছে।অনলাইনে বা টেলিভিশনে তাদের অনেকের ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি এরই মধ্যে প্রকাশ হয়ে গেছে। ভিন্ন মতাবলম্বী বা অধিকারকর্মী এমন কমপক্ষে জনের প্রাইভেট কিছু বিষয় ২০১৯ সালে টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছিল। সেইসব তথ্য ফাঁসহওয়া গেপাসাস প্রজেক্টেও রয়েছে। সেখানে নারী অধিকারকর্মীদের টার্গেট করা হয় যৌনতাকে ব্যবহার করে ব্লাকমেইলের জন্য।এমনই একটি ঘটনা প্রকাশ হয় ২০১৯ সালে। তখন নাগরিক সমাজের অধিকারকর্মী এবং সাংবাদিক ফাতিমা মোভলামলিঅন্তরঙ্গ বেশ কিছু ছবি ফেসবুকের একটি ভুয়া পেইজে ফাঁস করা হয়। তখন ফাতিমার বয়স মাত্র ১৮ বছর। কিভাবে ওইসব ছবিফাঁস হয়েছে তা পরিষ্কার নয়। ফাতিমা মনে করেন, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তার ফোন নিয়ে নেয় এবং তা আনলককরতে বাধ্য করে তাকে। তার ধারনা সময়ই মোবাইল ফোন থেকে তার ব্যক্তিগত ডাটা সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এবার পেগাসাসপ্রজেক্টেও তার সব তথ্য আছে। এমনকি তার মোবাইল ফোনের নম্বর পর্যন্ত আছে তাতে।

ফাতিমা বলেন, আমার যে বয়স ছিল, তখন আমি নিজে একজন নারী এমন পূর্ণাঙ্গ ধারনা আমার আসেনি। কিন্তু ওই সময়ে আমার শরীর নগ্ন দেখানো হয়েছে মানুষকে। এই অভিজ্ঞতা বহন করা আমার জন্য খুবই কঠিন। এমনকি আমি জন্যআত্মহত্যার চিন্তা পর্যন্ত করেছি। আমার দেশে একজন নারীকে সীমাবদ্ধ স্বাধীনতার মধ্যে বসবাস করতে হয়, যেটুকু পুরুষরা অনুমোদন করেন। কোনো নারীর শরীর দেখা গেলে তারা তা নিয়ে বিদ্রুপ করেন। জন্য আমি মাঝে মাঝেই এখন আমার ফোন পরিবর্তন করি।

ভারতে দিল্লিতে অবস্থিত জওয়াহারলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্র অধিকারকর্মী ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস ইউনিয়নেরনেতা উমর খালিদ। ২০১৮ সালের শেষের দিকে তাকে সম্ভবত টার্গেট করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলারঅল্প আগে টার্গেট করা হয়। দাঙ্গা সংগঠনের অভিযোগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ দাবি করে, তারবিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রমাণ হলো তার মোবাইল ফোনে কমপক্ষে ১০ লাখ পৃষ্ঠার তথ্য আছে।কিন্তু পুলিশ কিভাবে এইসব তথ্য হাতে পেয়েছে সে সম্পর্কে কিছুই জানায়নি। বর্তমানে উমর জেলে রয়েছেন।

উপজাতি বা আদিবাসী সম্প্রদায় বা ভারতের নিম্নবর্ণের মানুষদের অধিকার নিয়ে যেসব লেখক, আইনজীবী এবং আর্টিস্ট কাজ করেন তাদের মোবাইলে আড়ি পাতা হয়েছে। এসব ব্যক্তির অনেককে গত তিন বছরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিষয়ক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদিকে হত্যা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে।এর মধ্যে রয়েছেন ৮৪ বছর বয়সী ধর্মীয় নেতা স্ট্যান স্বামী। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মাসে জেলে মারা গিয়েছেন।রেকর্ড বলছে তার সহযোগীদের মধ্যে আছেন হ্যানি বাবু, সোমা সেন এবং রোনা উইলসন। তাদেরকে গ্রেপ্তারের কয়েক মাস বাবছর আগে নির্বাচিত করে টার্গেট করা হয়ে থাকতে পারে।

২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অপহরণ করা হয় সৌদি আরবের নারী অধিকারের সবচেয়ে সামনের সারির কর্মীলুজাইন আল হাথলুলকে। এরপর তাকে জোর করে সৌদি আরবে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তিন বছর ধরে তাকে জেলে রাখাহয়। সময় তার ওপর নির্যাতনের অভিযোগ আছে। তাকে আমিরাতে অপহরণের কয়েক সপ্তাহ আগে সম্ভবত টার্গেট করাহয়েছিল। তাই ধারণা করা হয় এসএসও গ্রুপের অন্যতম ক্লায়েন্ট বলে পরিচিত এবং সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র সংযুক্ত আরবআমিরাত তাকে টার্গেট করে থাকতে পারে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেল থেকে মুক্তি পান লুজাইন। তা সত্ত্বেও দেশের ভিতরেও তিনি অবাধে চলাফেরার অনুমতি পাননি। তার বিদেশ সফর নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন যে, তার ইমেইল হ্যাক হয়েছে। ২০১৮ সালে লুজাইনকে গ্রেপ্তারের আগে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সৌদিআরবের অধিকারকর্মী হালা আল দোসারি। তিনি বলেছেন, লুজাইন যেসব মানুষকে সংগঠিত করছেন তার সেই নেটওয়ার্কেরনারীদের সম্পর্কে জানার জন্য এই হ্যাক করা হয়ে থাকতে পারে।

মেক্সিকোতে অধিকারকর্মী, আইনজীবী এবং বিপুল সংখ্যাক ক্যাম্পেইনারকে টার্গেট করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন একজনবিচারক এডুয়ার্দো ফেরের ম্যাকগ্রেগর পোইসট। তিনি ইন্টারআমেরিকান কোর্টের মানবাধিকার বিষয়ক প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ছাড়া টার্গেট করা হয়েছে ক্যাথোলিক যাজক অভিবাসী অধিকারকর্মী আলেজান্দ্রো সোলালিন্ডেকে। তিনি বলেন, মেক্সিকোর আগের সরকার আমার সুনাম ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা করেছে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে ব্লাকমেইল। কারণ, আমি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সমর্থন করেছিলাম। জন্য জাতীয় গোয়েন্দা বিষয়ক এজেন্সির একজন সাবেক এজেন্ট তাকে সাবধান করেছিলেন।

২০১৬ সালে আমিরাতের অধিকারকর্মী আহমেদ মানসুরকে টার্গেট করা হয়। বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সিটিজেন ল্যাব।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com