নজিরবিহীন সংকটে চামড়া শিল্প

0

গত কয়েক বছর ধরেই চামড়া শিল্পে দুর্দিন চলছে। এর মধ্যে করোনার ধাক্কায় বছর ধরে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। বৈশ্বিক মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক দেশীয় বাজারে টানা দরপতনে ক্রমেই আরও সংকুচিত হয়ে আসছে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখা এই শিল্পটি। দেশে বছরজুড়ে বেশির ভাগ চামড়াই সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদকে ঘিরে। এই উৎসবকে ঘিরেই লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাও। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সংকটে পড়েইতিমধ্যেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কোরবানির ঈদেও অন্তত ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি গুনতে হয়েছে। বছর তা আরও বাড়ার শঙ্কা তাদের।

এই পরিস্থিতিতে চামড়া ব্যবসায় একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক বাজারে ধস নেমেছে, অন্যদিকে বছর ধরে দেশীয় বাজারেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে দেশের বাজারে যে দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে তা গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এমন প্রেক্ষাপটে আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়া সংগ্রহ বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারির কারণে ব্যবসা গত বছর ধরে প্রায় বন্ধ। কোনোমতে কারখানা গুলো টিকে আছে। গতবার অনেক কাঁচাচামড়া পচে নষ্ট হয়েছে। উৎপাদিত পণ্যগুলো এখনো গুদামে পড়ে আছে। কারণ লকডাউনের ফলে অনেক দেশেরপ্তানি করা যায়নি। অন্যদিকে পণ্য আটকে থাকায় বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই মূলধন সংকটে পড়েছেন। তাদের ব্যাংক থেকেওনতুন করে ঋণ দেয়া হচ্ছে না। আবার পণ্য রপ্তানি করতে না পারলে টাকার মুখও দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে পুঁজি না থাকায়এবার ঈদে চামড়া কিনতে না পারার শঙ্কা তাদের। অবস্থায় পুরো শিল্পটি নজিরবিহীন এক সংকটে পড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, গতবারের মতো এবারও প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ঋণ পাচ্ছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।

নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম নূরু বলেন, করোনার কারণে এবার ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন।ইতিমধ্যেই অনেকে ব্যবসা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। লকডাউনের কারণে সাপ্তাহিক যে গরু জবাই হয় সেগুলোও কমেগেছে। অন্যদিকে এবার কোরবানি কম হতে পারে। মানুষ অভাবের মধ্যে আছে। অনেকেই এবার কোরবানি করবে না শোনাযাচ্ছে। তাছাড়া চামড়ার বাজারে আগে থেকেই বিশৃঙ্খলা রয়েছে। এই শিল্পটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও সরকারি ভাবে ব্যবসায়ীদের কোনো প্রকার সহযোগিতা করা হয় না। ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যায় না। সেজন্য অনেক চামড়া ব্যবসায়ীই এবার পুঁজি সংকটে ভুগছেন। কেউ কেউ এবার চামড়া না কেনার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিক্রি করতে না পারায় ট্যানারি গুলোতে গত ঈদে সংগ্রহ করা প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এখনো পড়ে আছে। লকডাউনের কারণে বিভিন্ন দেশে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেগুলো রপ্তানি করা যায়নি।

জানা গেছে, এই খাতে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ছয় লাখ এবং পরোক্ষভাবে আরও তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। করোনার কারণে তারাও সংকটে পড়েছেন। তারা পাননি কোনো সরকারি সহযোগিতা। অথচ বাংলাদেশের মোট রপ্তানির মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের অবদান শতাংশ, যা দেশের মোট জিডিপি শতাংশ ছিল। ২০২৪ সালে খাত থেকে মোট রপ্তানি আয়বৃদ্ধি করে পাঁচ বিলিয়ন ডলার এবং মোট জিডিপি শতাংশে উন্নীতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে করোনার ধাক্কায়এই খাতে ব্যাপক ধস নেমেছে। সংশ্লিষ্টদের চোখে যা নজিরবিহীন।

বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখলেও ২০১৭ সালথেকে চামড়া শিল্পে দুর্দিন নেমে এসেছে। তবে করোনার ধাক্কায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। গত ২০ বছরেও বাংলাদেশের চামড়া খাত এত খারাপ অবস্থায় পড়েনি। তিনি বলেন, চামড়া রপ্তানির জন্য প্রধান বাজার ইউরোপ। কিন্তু গত বছর ধরেইউরোপের বেশির ভাগ দেশে লকডাউন চলেছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে ইউরোপের কোনো কোনো দেশ লকডাউন তুলে নেয়াশুরু করলেও আবারো করোনার প্রকোপ বাড়ায় লকডাউন দেয়া হয়েছে। চীন, আমেরিকাও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত। তারাও নতুনকরে পণ্য নিচ্ছে না। এসব কারণে শিল্পটি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে। এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, গত বছর অন্তত ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এবার ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। অনেক ব্যবসায়ী এবার পুঁজি সংকটে পড়েছেন।ট্যানারি মালিকরা ঋণের মধ্যে রয়েছেন। সেজন্যে আমরা ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চার বছরের ঋণের সুদ মওকুফ চেয়েছি।সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ২০১৭ সালের পর থেকে ব্যবসা ভালো হয়নি। এরমধ্যেই আবার করোনা মহামারির কারণে অনেক ক্ষতি হয়েগেছে। ট্যানারি মালিকদের প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে, যা বছরে সুদ প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ কোটি টাকা।তাই আমরা এই সুদ মওকুফ চেয়েছি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com