জিলহজ্জ মাসের ফজিলত ও ইবাদত। হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।

0

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী: জিল হজ্জ্ব, আরবি বার মাসের শেষ মাস এবং মসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতের মাস। বছরের বার মাসের মধ্যে নিষিদ্ধ মাস মুহাররম, রজব, জিলকদ জিলহজ্জ (অর্থাৎ মাস গুলোতে কোনপ্রকার যুদ্ধ বিগ্রহ করা যাবে না) রাসূল সা. এর জন্মের পূর্বে অর্থাৎ জাহেলিয়াতের সময়ও চার মাসকে নিষিদ্ধ মাস মানাহতো। তবে কিছু সময় সুবিধা অনুযায়ী মাসগুলোতে পরিবর্তন আনা হতো। এটা ছিল একান্তই গোষ্ঠী প্রধানদের ইচ্ছার বাস্তবায়নকে প্রাধান্য দেয়ার নামে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত রাসূল সা. এর নবুওত প্রাপ্তির পরবর্তী সময় মাসগুলোকে আলাদা গুরুত্ত মর্যাদা দিয়ে নামকরণকে মহিমান্বিত করা হয়। তাছাড়াও জিল হ্জ্জ মাসটি স্বচ্ছল মুসলিম উম্মাহর ফরজইবাদত হজ্জ্ব এর মাস। মাসেই বিশ্বের সামর্থবান মুসলিম সম্প্রদায় এক হয়ে হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা মদিনায়যান আল্লাহ তার রাসুলের নৈকট্য লাভের আশায়।

 

এটা হজ্জের মাস, তাইপুরো মাসই গুরুত্বপূর্ণ তবে মাসের প্রথম দশ দিনকে আরো অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আট তারিখেইবরাহিম . প্রথম স্বপ্ন দেখেছিলেন তার পুত্র সন্তানকে কোরবানি দিতে বলা হচ্ছে এবং তিনি সন্দেহে পরেছিলেন এটা কি সত্যি আল্লাহর পক্ষ থেকে না শয়তানের পক্ষ থেকে ? তাই মাসের আট তারিখকেইউমে তারবিয়াবলা হয়। নয় তারিখে তিনিআবার একই স্বপ্ন দেখে ছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন এটা সত্যি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাই এদিনটিকেইউমে আরাফাবলা হয়। এদিনটি হাজিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন আরাফায়উকুফ” (অবস্থান) করা এটা হজ্জের একটি ফরজ বিধান।

হজ্জের ফরজ হচ্ছে তিনটি বাকি দুটি হচ্ছে ইহরাম পরিধান করা তোয়াফে ঝিয়াদাকরা (কোরবানি করার পর যে তোয়াফকরা হয় তাকেই তোয়াফে ঝিয়াদা বলে) সুতরাং কেউ যদিউকুফনা করে তাহলে তার হজ্জ হবে না এবং তার উপর যদি হজ্জফরজ হয়ে থাকে তাহলে পরের বছর তাকে অবশ্যই আবার হজ্জ আদায় করতে হবে।

হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম বলেন: আল্লাহ পাক এদিনে যত গুনাহগারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন তত জনকে আর কোন দিনই মুক্তি দেন না।এবং এদিনেই আল্লাহ পাক পবিত্রকালামে ইসলামের পুর্নাঙ্গতা ঘোষণা দিয়েছেন

অর্থ: আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবংতোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি কাজেই তোমাদের ওপর হালাল হারামের যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা মেনে চলো।

দশ তারিখে হযরত ইবরাহিম আঃ তার পুত্রকে কোরবানি কারার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন এবং আল্লাহর সামনে পেশ করেছিনেতাই এদিনকেইউমে নাহারবা কোরবানির দিন বলা হয় এদিনে আল্লাহর কাছে সবচে প্রিয় আমল হচ্ছে কোরবানি করা।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা ফজর এর শুরুতে কসম করে বলেছেন .وَالْفَجْرِ‌ . وَلَيَالٍ عَشْرٍ‌ অর্থ (.) ফজরের কসম, .) দশটি রাতের,)হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেছেন وَالْفَجْرِ‌ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ফজরের নামাজ আর عَشْرٍ‌ وَلَيَالٍএর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জিল হজ্জ মাসের প্রথম দশ রাত্রি তবে অধিকাংশ মুফাচ্ছিরিনে কেরার বলেছেন وَالْفَجْرِ ও‌ عَشْرٍ‌ وَلَيَالٍ দুটি দ্বারাই উদ্দশ্যে হচ্ছে জিল হজ্জ মাসরে প্রথম দশ রাত্রি এবং তারা এর স্বপক্ষে হযরত জাবের রা: একটি রেওয়ায়েতও পেশ করেছেন। তবে বিষয়ে মুফাচ্ছিরগণ একমত যে আল্লাহ তায়ালা জিল হজ্জ মাসের প্রথম দশ রাত্রের গুরুত্ব বুঝাতে চেয়েছেন তাই তিনি এর কসম খেয়েছেন।

হযরত আব্দল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ জিল হজ্জ মাসের প্রথম দশ তারিখের আরো কিছু ফজিলত বর্ণনা করেছেন ১।হযরত আদমআঃ কে ক্ষমা করেছিলেন জিল হজ্জ মাসের নয় তারিখে এবং তিনি তখন অরাফায় ছিলেন ২। আল্লাহ হযরত ইবরাহিম আঃকেতার খলিল রুপে মনোনীত করেছেন মাসের দশ তারিখে , তার পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি রুপে পেশ করার জন্য ৩। এবংএমাসের প্রথম দশকেই হযরত ইবরাহিম আঃ কাবা শরিফের ভিত্তিস্থাপন করেছেন ৪। দশকেই হযরত মূসা আঃ আল্লাহর সঙ্গে কালাম করেছেন ৫।ও বায়াতে রিযওয়ানও এমাসের প্রথম দশকেই হয়েছে

দশকের বিশেষ আমল

হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি জিল হজ্জ মাসের প্রথম দশকের প্রত্যেক রাত্র ইবাদতে কাটালো সে যেন সারা বছর হজ্জ উমরাহ করে কাটালো এবং যে ব্যক্তি দশকে রোযা রাখলো সে যেন সারা বছরই রোযা রাখলো (মুকাশিফাতুল কুলুব)

হযরত আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছল্লাম বলেছেন : জিল হজ্জ মাসের প্রথম দশকের ইবাদতই আল্লআহর কাছে সবচে বেশি পছন্দ এমন পছন্দের আর কোন আমল নেই আর দশকের প্রত্যেক দিনের রোযা এক এক বছর এর সমপরিমাপ ছওয়াব এক এক রাত্রের ইবাদত শবে কদরের সমপরিমান(মেশকাতদ )

অন্য একটি হাদিসে নবী করিম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম বলেছেন ইরশাদ করেছেন

যে ব্যাক্তি জিল হজ্জ মাসের নবম তারিখে রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা বিগত এক বছরের আগত বছরের সমপরিমান গুনাহমাপ করে দিবেন (মুসলিম)

তবে একটি বিষয় বিশেষ ভাবে লক্ষনিয় অন্য একটি হাদিসে হজ্জ পালনকারিদের নবম তারিখের রোযা রাখতে নিষেধ করেছেনকেননা তারা রোযা রাখলে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটবে-(রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম আরাফার রোযা আরাফায় অবস্থান কারিদের রাখতে নিষেধ করেছেন ) আবু দাউদ।

আর দশ তারিখের ইবাদত হচ্ছে কোরবানি করা এবং দশ তারিখে এটাই সর্বউত্তম ইবাদত

কোরবানির দিন কোরবানি করাই আল্লাহর কাছে সবচে বেশি পছন্দের আমল আর কোরবানির পশু কিয়ামতের দিন কোরবানিকৃত পশু তার শিং ,পা লোম নিয়ে উপস্থিত হবে আর কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পরার আগেই আল্লাহর দরবারে পৌছে যায় সুতরাং তোমরা বিশুদ্ধ নিয়তে কোরবানি কর।

অন্য একটি হাদিসে এসেছে যাদের কোরবানি করার সমর্থ আছে অথচ কোরবানি করছে না তারা যেন ঈদগাহে না আসে (যারসমর্থ আছে অথচ কোরবানি করছে না সে যেন ঈদগাহে না আসে)

সুতরাং আল্লাহ আমাদের যাকে যতটুক তৌফিক দিয়েছেন সে উনুযায়ী আমরা যেন এইমাস সর্ম্পকে জেনে, বুঝে আমল করতেপারি।

মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক কলামিস্ট  হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব। সাবেক: ইমাম খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com