বাজেটে কালো টাকা বৈধ করার অনৈতিক সুযোগ দুর্নীতিসহায়ক: টিআইবি

0

চলতি অর্থবছরে অপ্রদর্শিত অর্থের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার যে অনৈতিক সুযোগ সরকার ঢালাও ভাবে দিয়েছে সেটি অনির্দিষ্ট মেয়াদে বাড়ানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্ময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি)

টিআইবি জানায়, দীর্ঘ মেয়াদে কালো টাকা সাদা করার এমন সুবিধা সৎ বৈধ আয়ের করদাতাকে নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমেকর ব্যবস্থায় খেলাপির সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকী করণের ঝুঁকি তৈরি করবে এবং এতে আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ না রাখায় দেশে দুর্নীতিসহায়ক একটি উদার পরিস্থিতি তৈরি হবে, যা সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে দুর্বল করার মাধ্যমে আইনের শাসন সুশাসন প্রতিষ্ঠার যেকোনো চেষ্টাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

এসব শঙ্কা বিবেচনায় রেখে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধেশূন্য সহনশীলতারনীতির প্রতি সামঞ্জস্য রেখে নতুন বাজেটে (২০২১২২অর্থবছর) কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

দেশের অর্থনীতিতে যতদিন অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে, ততদিন তা ঘোষণার সুযোগ থাকবে…’ বলে অর্থমন্ত্রীর যে বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শনিবার (২২ মে) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক . ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “চলতি বাজেটে অর্থের উৎস নিয়ে যেকোনো ধরনের প্রশ্ন করার বিধান উঠিয়ে দিয়ে বৈধ উপায়ে অর্জিতঅপ্রদর্শিত অর্থএবং অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকার মধ্যকার ফারাক একাকার করে দেয়া হয়েছে। এমন বাস্তবতায় কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ অনির্দিষ্ট মেয়াদে রাখার পরিকল্পনা দেশের কর ব্যবস্থায় ন্যায় ন্যায্যতার প্রশ্নকে প্রকট করে তুলবে এবং দুর্নীতিবাজদের জন্য করোনাকালে নতুন প্রণোদনা হিসেবে বিবেচিতহবে। তাই এমন অপরিণামদর্শী আত্মঘাতী পরিকল্পনা থেকে সরকার সরে আসবে সেটিই প্রত্যাশিত।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মাত্র ১০ ভাগ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে সৎ করদাতারা কেন সর্বোচ্চ ২৫ থেকে৩০ ভাগ কর দেবেনএমন প্রশ্ন রেখে . জামান বলেন, ‘সাময়িক ভাবে এমন সুযোগ থেকে সরকার কিছুটা রাজস্ব পেলেও ধীরেধীরে তা বড় সংখ্যক করদাতাদের খেলাপি হতে উৎসাহিত করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব ক্ষতির মাত্রাকে বাড়িয়ে দেবে এবং কর খেলাপির নতুন এক সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করবে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে রেকর্ড ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশিঅর্থ বৈধ হবার খবরে নীতিনির্ধারক মহলে যে সন্তুষ্টি তৈরি হয়েছে, সেটি সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অবস্থানের প্রতি একরকম উপহাসই বলা চলে। কেননা অতিমারির মাঝেও বিপুল অর্থ সাদা করার প্রবণতাই বলে দেয়, দেশে একটি দুর্নীতি সহায়ক ব্যবস্থাবিদ্যমান আছে এবং সেটি যেকোনো পরিস্থিতিকেই নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কাজে লাগাতে প্রস্তুত দুর্নীতি গ্রস্তরা।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদানের দীর্ঘদিনের অসাংবিধানিক চর্চা বন্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময় মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘বৈধ পথে অর্থ উপার্জনকারী করদাতা থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠন বিভিন্ন সময়ে ঢালাও সুযোগের বিরোধিতা করলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি বরং সংবিধানের ২০ () অনুচ্ছেদকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। এক্ষেত্রে দূরদৃষ্টি, সংবিধান আইনের শাসনের প্রতি সরকার আনুগত্য দেখিয়ে আসন্ন বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করবে এমনটাই আশা।

একই সঙ্গে কালো টাকার মালিকদের সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের মাধ্যমে কার্যকর জবাবদিহি মূলক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি যাতে দুর্নীতির মহোৎসবের হ্রাস টেনে ধরা যায়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com