জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ উত্তেজনা

0

পূর্বে কোনো আলোচনা হলো না। কেউ কিছু জানলো না, অথচ হঠাৎই সামনে নিয়ে আসা হলো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিল ইস্যু। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ৯ ফেব্রুয়ারি একটি সভা করে। ওই সভায় জিয়াউর রহমান মুক্তি যুদ্ধে অবদানের জন্য পাওয়া ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের প্রস্তাব করা হয়। আর এটিকে ইস্যু হিসেবে সামনে নিয়ে আসা হয়। বিএনপি বলছে, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও সংস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ এনে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা থেকে দেশবাসীর দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য জিয়াউর রহমানের খেতাব ইস্যুটি সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এবার সরকার চাইলেও নতুন ইস্যু দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইস্যুকে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। কারণ, সরকারের এই অপকৌশল যাতে সফল না হয় সেই জন্য বিএনপি সজাগ ও সতর্ক রয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এবার সব ইস্যুকে মাথায় রেখেই রাজপথে থাকবে দলটি। দলের প্রতিষ্ঠাতার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য পাওয়া খেতাব বাতিলের প্রস্তাবের খবরে ইতোমধ্যে রাজপথে প্রতিবাদী তৎপরতা দেখিয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপি এ ইস্যুতে রাজপথে সমাবেশ ডেকেছিল, নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সরব উপস্থিতি এটিকে মহাসমাবেশে রূপান্তরিত করেছে। এই সমাবেশ শেষে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে মিছিল শুরু করলে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে বাধা দেওয়া হয়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে বিক্ষোভ দেখালে পুলিশ মারমুখী হয়ে উঠে। বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এতে অনেকে আহত হন। রক্তাক্ত হয়ে ওঠে রাজপথ। ওই সমাবেশের আগে ও পরে অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, এই ইস্যুতে সরকারকে সহজে তারা ছেড়ে দিতে চান না। কারণ দলটি মনে করেন, জিয়াউর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তার  বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন আমলেই তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়।
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা 
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জিয়াউর রহমানের বীরত্বের স্বীকৃতি ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের যে সিদ্ধান্ত সেটা আল-জাজিরার ড্যামেজ কন্ট্রোলের ব্যর্থ চেষ্টা। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আঘাত আসলে প্রতিহত করতে হবে, পুলিশের কাজ পুলিশ করবে, তবুও আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের পক্ষে থাকার আহ্বান। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তারা প্রধানমন্ত্রীর আশপাশেই। তাদের পুরস্কৃত করেছে সরকার। ক্ষমতার জন্য পিতার প্রতি সম্মান দেখাননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভাষণ দিয়ে নয়, যুদ্ধ করেই বীর উত্তম খেতাব পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। জিয়ার খেতাব নিয়ে ব্যবসা করে না বিএনপি, গর্ব করে।
রাজপথে জনতার ঢল
শনিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব প্রত্যাহারে সরকারি সিদ্ধান্তকে হঠকারী ও অন্যায় সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিএনপি। এই সমাবেশ শুরুর আগেই জাতীয় প্রেসক্লাবে জনতার ঢল নামে। সকাল ১০ টায় এ সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিএনপির নেতাকর্মী ও জনতার ঢল নামে। সকাল থেকেই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিলসহ প্রেসক্লাবে জড়ো হতে শুরু করে। ফলে প্রতিবাদ সভা পরিণত হয় মহাসমাবেশে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও এ সমাবেশে অংশ নেয়। প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রতিবাদের স্লোগানে স্লোগানে প্রেসক্লাব চত্বর উত্তাল করে তুলে। সামাবেশে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে আসে।
পুলিশের লাঠিপেটা, বহু আহত, আটক ৫০
রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির সমাবেশের আগে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। ডিএমপির রমনা জোনের এসি শেখ মো. শামীম গণমাধ্যমকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশ থেকে ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সমাবেশ শেষে মিছিলে পুলিশের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শনিবার দুপুর বারোটার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সমাবেশে প্রধান অতিথি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য শেষে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এতে ছাত্রদলের সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক আমিনুল রহমান আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তবিয়র রহমান সাগর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহবায়ক শাফি, শহিদুল্লাহ হল ছাত্রদলের সভাপতি শাহিন, এসএম হলের নাহিদুজ্জামান শিপন, মহসিন হলের রোমান পাঠান, নয়ন ছাড়াও বিএনপি ছাত্রদল যুবদলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ।
খেতাব বাতিল আ’লীগের জন্য ‘স্বস্তিকর’ নয়!
বাংলাদেশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের জন্য সরকারের একটি কমিটির সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগের পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের সুপারিশের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তবে আওয়ামী লীগেরই বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে নানা আলোচনাও রয়েছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক দিক থেকে ‘স্বস্তিকর’ নয় বলে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন। ‘জিয়ার ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের উদ্যোগে আওয়ামী লীগের লাভ লোকসান কতোটা’ এই শিরোনামে ১২ ফেব্রুয়ারি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা। ওই প্রতিবেদনে উপরোক্ত কথাগুলো বলা হয়। বিবিসি বলছে, আওয়ামী লীগের একটি অংশ মনে করেন, জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের ব্যাপারে সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি, কিন্তু সরকারের একটি কমিটি যখন সুপারিশ করছে, তখন তা নিয়ে আওয়ামী লীগকেই রাজনৈতিক দিক থেকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে সরকারের জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিল বা জামুকার যে বৈঠকে জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তাতে সভাপতিত্ব করেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামুকার বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর পরই প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, “বীর উত্তম খেতাব তিনি (জিয়াউর রহমান) পেয়েছিলেন, স্বাধীনতার পরে শেখ মুজিবুর রহমানের যে সরকার, সেই সরকারই তাকে খেতাব দিয়েছিল। এখন সরকারের সেই খেতাব বাতিলের উদ্যোগ মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে। এ ধরনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কলঙ্ক লেপন করা হলো।”
সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সোহরাব হাসান বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে না। কেননা ৭১- এর মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান বা অন্যান্য সেক্টর কমান্ডার বা মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকারই তাদেরকে এই খেতাব দিয়েছে। পরবর্তীকালে কার কি রাজনৈতিক ভূমিকা-সেটি নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তিনি আরও বলেছেন, ‘কেউ যদি ফৌজদারি অপরাধ করে তার বিচারও হবে। কিন্তু দণ্ডিত না হওয়া পর্যন্ত কারও খেতাব বাতিল করার কোন যুক্তি নেই। “এটি বিএনপিকে চাপে রাখার জন্য কোন কৌশল হলে সেটা ভাল কৌশল নয়। আর যদি সরকার এরকম সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা সরকারের জন্যই ক্ষতিকারক হবে সোহরাব হাসান বলেন।
বাড়ছে ক্ষোভ
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বিএনপি। দলটির তৃণমূল থেকে শীর্ষনেতারাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে একাধিক কর্মসূচী ঘোষাণা দিয়ে তা পালনও করা হয়। দিন যত যাচ্ছে নেতাকর্মীদের ক্ষোভ ততোই বাড়ছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরছে। অভিযোগ করেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ গঠনে কাজ করেছে, তাদের অবদানও মুছে ফেলার চেষ্টা করছে সরকার। ওইদিন বিকেলে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নয়া পল্টনে মশাল মিছিল করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। একই ঘটনায় ১৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার ঢাকাসহ সকল মহানগরে সমাবেশ বিক্ষোভ ও রোববার সব জেলা সদর ও ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করে বিএনপি।
আল জাজিরার প্রতিবেদন চাপা দিতে কৌশল?
বাংলাদেশ ইস্যুতে আল-জাজিরায় প্রচারিত এবং বহুল আলোচিত সংবাদটি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। এ ইস্যুটি নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধী ও বিশ্লেষকরা নানা বিশ্লেষণ করছেন। এ নিয়ে সরকারের ভেতরে বাইরে একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে। ঠিক এই ইস্যুটি যাতে চাপা পড়ে যায় সে কারণে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল এর প্রস্তাবটি সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। যাতে মানুষ আল জাজিরার রিপোর্টটি ভুলে যায়। এমনটি মনে করছে বিএনপি দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার আলজাজিরা ভাইরাসে আক্রান্ত। এই আলজাজিরা ভাইরাসকে কাউন্টার করার জন্য নতুন নাটক জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নেওয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা দেওয়া। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, বীর উত্তম খেতাব বাতিলের ইস্যুতে আন্দোলন চলবে। তবে এর মানে এই নয় যে, অন্য ইস্যুতে বিএনপি আন্দোলন বন্ধ করে দেবে। জনদৃষ্টি অন্য দিকে ফেরানোর সরকারি কৌশল এবার বিএনপি সফল হতে দেবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি, আলজাজিরার তথ্যচিত্র, রোহিঙ্গা, ব্যাংক লুট, স্বাস্থ্য খাতের জালিয়াতি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে সরকারের বিপক্ষে জনমত গঠনের পাশাপাশি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি।
আল জাজিরার প্রতিবেদন ধামাচাপা দিতেই জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের চক্রান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এলডিপির প্রতিবাদ কর্মসূচিতে এ মন্তব্য করেন তিনি। আল জাজিরার প্রতিবেদন ভুল প্রমাণ করতে সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গয়েশ্বর রায় বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর সংবর্ধনা দেওয়া উচিত। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার সামিল বলেও মনে করেন তিনি। দুর্নীতিবাজদের বাঁচানোর চেষ্টা না করে, ক্ষমতা ছেড়ে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।
মাঠে থাকবে ২০ দল ও সহযোগী সংগঠনগুলো  
জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) কর্তৃক জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের প্রস্তাব গ্রহণের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিএনপির শীর্ষ নেতারা গত কয়েক দিনে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। দলের মুক্তিযোদ্ধারাও এই ইস্যুতে একত্র হয়েছেন। ২০ দলীয় জোট নেতাদের সাথেও বিএনপি কথা বলেছে। তাদেরকেও পৃথকভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে বলা হয়েছে। ২০ দলীয় জোট নেতারাও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। জানা গেছে, জিয়ার বীর উত্তম খেতাব বাতিলের চিন্তাভাবনা থেকে সরকারের সরে না আসা পর্যন্ত বিএনপি প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। কারণ দলটি ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ ও মুক্তিযুদ্ধে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভূমিকাকে বিএনপির রাজনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে মনে করে। তাই এই ইস্যুতে জনগণের কাছে সরকারের এই ‘অন্যায়’ সিদ্ধান্তের কঠিন বার্তা দিতে চায় তারা। এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি সফলে এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই ইস্যুতে ইতোমধ্যে রাজপথে বেশ কিচু কর্মসূচী পালন করেছে। মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে একের পর এক কর্মসূচি দেওয়া হবে। বিশেষ করে অঙ্গ সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা দল এই ইস্যুতে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা নেতারা খেতাব বহাল রাখার পক্ষে যৌক্তিক বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে যাবেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রসঙ্গে বলেন, এই সরকারের অপকর্ম এবং যে সমস্ত দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসছে বিভিন্নভাবে তা থেকে জনগণের দৃষ্টি দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে। খেতাব বাতিলের প্রস্তাবটিকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলেছেন, আল-জাজিরার ঘটনা নিয়ে সরকারে পেট খারাপ হয়ে গেছে।
ঢাকাকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু বানাতে চায় বিএনপি
শুধু জিয়াউর রহমানের খেতাব বতিলের প্রস্তাব ইস্যু নয়, এবার প্রতিটি ইস্যুতে সোচ্চার থাকবে বিএনপি। দলটির সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ঢাকায় আন্দোলন চাঙ্গা করতে চায় দলটি। এরপর বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা শহরে যাবে বিএনপি। জানা গেছে, আন্দোলনের মূল মাঠ রাজধানী ঢাকাকে প্রস্তুত করতে নেওয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। এর মধ্যে খুব শিগগির মেয়াদোত্তীর্ণ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির কমিটিকে ভেঙে আন্দোলনমুখী কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। এ কমিটিতে বিগত দিনের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের স্থান দিতে একটি টিম কাজ করছে। ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ কমিটির সঙ্গে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনেও বিশেষ নজর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকাকেন্দ্রিক বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলোকেও আন্দোলনমুখী করে পুনর্গঠনের কার্যক্রম চলছে। অন্যদিকে, মান-অভিমানে দল থেকে দূরে সরে যাওয়া নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। যোগ্য ও ত্যাগী হিসেবে পরিচিত এসব নেতাকর্মীকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের একটি বড় অংশ রয়েছেন রাজনীতির বাইরে। তাদের টার্গেট করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়। সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দলকে গতিশীল করতে মিডিয়া সেল, প্রযুক্তি ও গবেষণা সেল, প্রচার সেল, আইনি সহায়তা সেলসহ বিভিন্ন বিষয়ে কার্যকর সেল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এসব সেলে প্রবীণ ও তরুণদের সমন্বয়ে দায়িত্ব দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে দলটি। পরিবর্তন আনা হচ্ছে কূটনৈতিক উইং শাখায়। এখানে পুরোনোদের সঙ্গে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও আন্তর্জাতিকভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন মুখ নিয়ে আসা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সেলকে আবার বিভিন্ন ফ্রন্টকেন্দ্রিক দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে সূত্র জানায়।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি
শুধু ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলনই নয়, একটি নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও যেতে চায় বিএনপি। এ কারণে দলটি একটি বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম চায়। আর এই প্ল্যাটফর্মে ডান-বাম সব মতাদর্শকে এক কাতারে, এক মঞ্চে নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে বলেও জানান বিএনপির একাধিক নেতা। একই সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটকেও সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আপাতত এই দুই জোট নিষ্ক্রিয় থাকলেও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ অক্ষুণœ রয়েছে বলে দাবি বিএনপি নেতাদের। এ ছাড়া নেতারা দুই জোটের বাইরের বেশ কয়েকটি বাম দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। জামায়াতে ইসলামীকে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বামসহ অন্য ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে জোট করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির।
জিয়ার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ও আইন বহির্ভূত 
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ ও আইন বহির্ভূত’ বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। ১১ ফ্রেবুয়ারি বৃহস্পতিবার শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সমিতির ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত বাতিল করবেন বলেও প্রত্যাশা জানান তিনি। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তটি খুবই উদ্বেগের এবং দুঃখজনক। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমানের যুদ্ধ পরিকল্পনা, যুদ্ধ কৌশল, যুদ্ধ পরিচালনা ও তার বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপক্ষে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং নিজের জীবন বাজি রেখে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেয় প্রতিপন্ন করা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের চেতনা পরিপন্থী এবং জাতির কলঙ্কস্বরূপ। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন বহির্ভূতভাবে এ অবৈধ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খেতাব কেড়ে নেওয়া বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার সামিল
মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাব কেড়ে নেওয়া বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক। ১০ জানুয়ারি বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। আমরা মনে করি, আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য তথা রাজনৈতিক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এ ধরনের জঘন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ ধরনের জঘন্য সিদ্ধান্ত সার্বিকভাবে দেশের সকল রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক ও অবমাননাকর। সরকারের এ ধরনের জঘন্য অপচেষ্টা কোনদিনই সফল হবে না।
বীরত্বপূর্ণ খেতাব বাতিল মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবান্বিত করবে না
যারা দেশমাতৃকার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে মুক্তিযুদ্ধে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন এবং স্বাধীনতা অর্জনে বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রীয় খেতাব অর্জন করেছেন তাঁদের খেতাব বা পদক বাতিল করা মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবান্বিত করে না। প্রতিহিংসামূলক কোনো সিদ্ধান্ত ‘ঐতিহাসিক ন্যায্যতা’কে বিলুপ্ত করে দিতে পারে না। অতীতের গৌরবোজ্জ্বল কৃতিত্বকে বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা কোনোভাবেই সুবিচার নিশ্চিত করে না এবং নৈতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব গণমাধ্যমে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন।
রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের এখতিয়ার মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের নেই
জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিল প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও শাহজাহান ওমর বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের কোনো এখতিয়ার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকার নেই। ১১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ‘ফেড’ ফোর্সের ‘এ’ ও ‘বি’ কোম্পানির কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম এবং ৯ নং সেক্টারের সাব- সেক্টার কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর বীর উত্তম। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন বীর বিক্রম বলেন, ‘জামুকার এগুলো কাজ না, জামুকা হলো কে ভাতা পাবে কি পাবে না, কে মুক্তিযোদ্ধা, কে মুক্তিযোদ্ধা হবে না।’ তিনি বলেন, ‘বীর উত্তম, স্বাধীনতার ঘোষক, জেড ফোর্সে অধিনায়ক, সেক্টার কমান্ডার, সেনাবাহিনী প্রধান, জেনারেল, প্রেসিডেন্ট …তাদের ব্যাপারে এখতিয়ার আছে। হু ইজ জামুকা। কে এদের…চিনি কেউ  এদের। কোথায় জিয়াউর রহমান, কোথায় এগুলো।”
জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবের ঘোষণা দেন
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় পদক বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) একাংশের চেয়ারম্যান ও কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। তিনি বলেছেন, ‘আশা করি, সরকার ভুলেও আগুনে হাত দেবে না।’ অলি আহমদ প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সরকার হঠাৎ এ ধরনের দুঃস্বপ্ন কেন দেখছে? ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মহাখালী ডিওএইচএসের বাসা থেকে সাংবাদিকদের কাছে অলি আহমদ এ প্রতিক্রিয়া জানান। অলি আহমদ বলেন, যদি কোনো কারণে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিল হয়, ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তনের পর অনন্য অবদানের জন্য তাঁকে মরণোত্তর ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com