উন্নয়ন ভাবনায় পরিবেশ রক্ষাকে সম্পৃক্ত করতে হবে

0

বিশ্বব্যাপী পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। এমন উদ্বেগ স্বাভাবিক এবং জরুরি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিবেশ আন্দোলনের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা নানাভাবে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের কর্ণধারদের সচেতন করার জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। সম্প্রতি একটি খবর পরিবেশ নিয়ে ব্যক্তি এবং পরিবেশ আন্দোলনকারীদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। সেটা হচ্ছে, পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রের যে ফোরাম, যা কিনা বিশ্বের পরিবেশের ক্রমাবনতি রোখার জন্য কাজ করছে; সেই ফোরাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার ফলে যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল, সেই ফোরামে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে পরিবেশের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন বোঝা যায়। পরিবেশের বিশ্ব ফোরামে সার্বক্ষণিক সে ফোরামে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব দিয়েছেন এবং তাকে মন্ত্রীর পদমর্যাদাও দেয়া হয়েছে। এই নিযুক্তি অবশ্যই পরিবেশ আন্দোলনকারীদের আশাবাদী করবে। মনে রাখা জরুরি যে, বিশ্ব-পরিবেশের অবনতির জন্য যেসব শিল্পোন্নত দেশ দায়ী তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নামই শীর্ষে। অথচ সেই অপরাধ স্বীকার না করে বিগত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্তর্জাতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য গঠিত সেই ফোরাম থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আবহাওয়া বিরূপ হয়ে ওঠায় পরিবেশগত বিপর্যয় এখন মারাত্মক হয়ে পড়েছে। এ দেশগুলোর বেশির ভাগই অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশও পরিবেশগত বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে এমন তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে যে, আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করলেও তার প্রতিকারের ব্যাপারে তেমন উদ্যোগী নয়। আমরা ইতোমধ্যে আবহাওয়াগত সমস্যায় ভুগতে শুরু করেছি। কিন্তু তা সামাল দেয়া নিয়ে আমাদের নেতৃত্ব লিপ সার্ভিস দিচ্ছেন বটে, কার্যকর ও বাস্তব কোনো প্রয়াস নেই বললেই চলে। ফলে দেশ ক্রমাগতভাবে পরিবেশগত বিপর্যয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এসব বিষয়ে গা না করলে আগামীতে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

পরিবেশের জন্য বনভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু সেই বনভূমি এখন প্রতিনিয়ত আগ্রাসনের শিকার। গাছ কেটে বন উজাড় করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা এ ব্যাপারে শুধু নির্লিপ্তই নয়, বরং এসব বনদস্যুদের প্রতি তাদের মদদও রয়েছে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, নদী এ দেশে মানুষ ও জীববৈচিত্র্যকে পরিপুষ্ট করে তোলে। মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য পানির গুরুত্বের ব্যাপারটি সবাই জ্ঞাত। অথচ পানিদূষণ এখন এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, দেশে পানিসম্পদ নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই। শিল্প-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, নগরের দূষিত পানি নদীগুলোতে ফেলা হচ্ছে। ক্রমেই কিছু কিছু নদীর পানি একেবারেই ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যরে বিপদে অবস্থানকারী বিশ্বের ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে। তা থেকে বের হওয়ার কোনো উদ্যোগ থাকা তো দূরের কথা, এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো চিন্তা-ভাবনার কথাও শোনা যায় না। পরিবেশের সুরক্ষা নিয়ে নির্লিপ্ততার কারণে বাংলাদেশ গত প্রায় ১০ বছরে বৈশ্বিকভাবে পরিবেশ সুরক্ষায় ৪০ ধাপ পিছিয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে বরাবরই পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কিন্তু এই অঙ্গীকার কখনোই ইশতেহার থেকে বেরিয়ে এসে কোনো বাস্তব ভিত্তি পায়নি।

আওয়ামী লীগ টানা তিন দফা ক্ষমতাসীন রয়েছে, অথচ এ সময়ে এমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি যা পরিবেশের জন্য হিতকর বলে মনে করা যেতে পারে। প্রকাশিত এক তথ্যে জানা যায়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে যত মানুষ মারা গেছে তাদের মধ্যে ২৮ শতাংশই মারা গেছে কোনো না কোনো পরিবেশদূষণজনিত কারণে অসুখ-বিসুখে ভুগে। বর্তমান সময় পর্যন্ত সন্দেহ নেই যে, এই হার আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি উদ্যোগ না থাকার পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় বড় অন্তরায় রাজনৈতিক চাপ, প্রভাবশালীদের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন। তাছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও অব্যবস্থাকেই দায়ী করেন পরিবেশ নিয়ে কাজে সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞরা।  এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, উন্নয়ন কোনো খণ্ডিত বিষয় নয়- অনেক কিছুই এর সাথে সম্পৃক্ত।

পরিবেশ রক্ষার ধারণা বাদ দিলে তথা পরিবেশের অবনতি রোধের বিষয়টি গুরুত্ব না দিলে উন্নয়ন পূর্ণাঙ্গ তো হবেই না বরং পরিবেশের ক্রমাগত অবনতি উন্নয়ন পরিকল্পনাকে নানাভাবে ব্যাহত করবে। পরিবেশের অবনতি ঘটলে কৃষি ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন সম্ভব হবে না। আবার জনস্বাস্থ্যের সাথে পরিবেশের সম্পর্ক গভীর। একটি সুস্থ সবল জনশক্তি যেকোনো দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। কিন্তু পরিবেশের অবনতি যদি ঘটতেই থাকে তবে বাংলাদেশ একটি হীনবল রুগ্ণ জনসমষ্টির দেশে পরিণত হবে, সেখানে উন্নয়ন পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। বাংলাদেশের সংবিধান দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি সরকারের একটি মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে দায়িত্ব এড়িয়ে চলা কোনোভাবেই উচিত হবে না। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে সরকারকে অনেক কিছুর ওপরই প্রাধান্য দিতে হবে। সংবাদপত্রের সচেতন পাঠক মাত্রই লক্ষ করে থাকবেন, প্রতিদিন খবরের কাগজে এমন ভূরি ভূরি প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে যেখানে পরিবেশ বিপর্যয়ের নানা চিত্র তুলে ধরা হয়। পরিতাপের বিষয়, এসব অঘটনে জড়িত রয়েছে সমাজের প্রভাবশালীরা, যাদের সাথে ক্ষমতাধরদের সম্পর্ক নিবিড়। তাই এসব অপরাধীদের গায়ে টোকা পর্যন্ত দেয়া সম্ভব হয় না। দেশের পরিবেশের ক্রমাবনতির জন্য দায়ী এসব ব্যক্তি। এসব রোখা না গেলে শুধু কথার ফুলঝুরি দিয়ে পরিবেশের সুরক্ষা হবে না। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা অবশ্যই জানেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর প্রশাসন কত কঠোরভাবে পরিবেশ রক্ষার আইন-কানুন ও বিধি-ব্যবস্থাকে রক্ষা করে।

দেশে পরিবেশ সংক্রান্ত আইনের কোনো কমতি নেই। কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। ফলে এর সাথে মানুষ সম্পৃক্ত হয়ে উঠতে পারেনি। আর এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের মানুষ পরিবেশ নিয়ে সচেতন নয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ নিয়ে পাঠদান করা হয় না। আরেকটি কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, নদীমাতৃক বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা এখানে নদীভাঙন অত্যন্ত বেশি। প্রতি বছর বিভিন্ন নদীর কূল ব্যাপক ভাঙনের শিকার হয়। ফলে নদীকূলে বসতবাড়িসহ সেখানকার গাছপালা সব বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনকবলিত এসব এলাকার মানুষ নতুন বসতি গড়তে বহু গাছপালা কেটে সাফ করে দেয়। দেশে বায়ুদূষণের আরো একটি বড় কারণ হচ্ছে ইটভাটার ধোঁয়া ও বালিকণা। দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ইটভাটা রয়েছে, এসব থেকে ভয়াবহ বহু দূষণ ঘটছে। এতে মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছে। এক সমীক্ষায় জানা গেছে, দেশের সামগ্রিক বায়ুদূষণের ৫৬ শতাংশের উৎস এসব ইটভাটা। আরো উল্লেখ করা যেতে পারে, এসব ইটভাটার বেশির ভাগই অবৈধ, কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের বাইরে। ইটভাটাগুলোকে পরিবেশবান্ধব করতে ২০১৮ সালে ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। কিন্তু এসব আইন কেবল কেতাবেই রয়েছে, এর কোনো প্রয়োগ নেই। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে ইটভাটাগুলো কৃষিজমিতে করা যাবে না মর্মে বিধান রয়েছে। অথচ এমন বহু ইটভাটা রয়েছে যেগুলো কৃষিজমিতে করা হয়েছে। এসব ভাটায় যে মাটি ব্যবহার করা হয় তা আশপাশের শস্য ক্ষেতের উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ইট তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা কি না কৃষির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ ঘটাচ্ছে। বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয়ের দেখার কথা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা রয়েছে বলে মনে হয় না। অথচ পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি বহুমাত্রিক, সে জন্য সবার সচেতন হওয়ার দাবি রাখে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে পরিবেশ ভাবনাকে সংযুক্ত করা জরুরি।

নানা বিবেচনায় দেশের রাজধানীর গুরুত্ব সমধিক। তাই এর পরিবেশ মানুষের বাস উপযোগী হওয়া নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। মহানগরী ঢাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। জনসংখ্যার বিবেচনায় বিশ্বের বড় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর অন্যান্য বড় নগরীতে নাগরিকদের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা রয়েছে, সে তুলনায় ঢাকা মূলত বাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হতে চলেছে। আর এই নগরীর পরিবেশ নিয়ে যদি কথা বলা হয় তবে বলতে হয়, এই নগরী একটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হতে যাচ্ছে।

ঢাকাবাসীর স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের জন্য এই শহর দুই ভাগে ভাগ করে দুটো করপোরেশন গঠন করা হয়। দুজন মেয়রের কাঁধে নগরীর সামগ্রিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকা নগরীর পরিবেশ বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমেই উল্লেøখ করা দরকার নগরীর বায়ু ও শব্দদূষণ। শব্দদূষণের জন্য দায়ী গাড়ির হর্ন এবং বায়ুদূষণের জন্য তার কালো ধোঁয়া। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য শিল্প-কারখানা রয়েছে। আর প্রতিনিয়ত এসব কারখানা থেকে যে শব্দের সৃষ্টি হয় তা অসহনীয়। সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত অনবরত এসব কারখানায় শব্দ নগরীকে প্রচণ্ড শব্দদূষণের মধ্যে নিয়ে ফেলেছে। চিকিৎসক এবং পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করেন, এই শব্দদূষণের কারণে ধীরে ধীরে নগরবাসীর শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা শহরে যেসব যানবাহন চলাচল করে তার বেশির ভাগই বহু পুরনো এবং এগুলোর মারাত্মক যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে। ফলে এসব যানবাহন থেকে প্রচুর কালো ধোঁয়া বের হয়। ঢাকা নগরীর উপকণ্ঠে বহু ইটভাটা রয়েছে, এসব ভাটা থেকে প্রতিদিন নির্গত হচ্ছে ধোঁয়া। এসব উৎস থেকে যে ধোঁয়া বের হয় তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। নগরবাসী এর ফলে অ্যাজমা, হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা এ থেকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। ঢাকায় শীতকালেই বায়ুদূষণ বেশি ঘটে। শুষ্ক পথঘাট থেকে ধুলাবালি উড়তে থাকে। এতে রাস্তায় চলাচল করা অসম্ভব হয়ে যায়। ঢাকা শহরের তিন পাশ ঘিরে রয়েছে নদী। এটি শহরকে নান্দনিক করে তুলতে পারত এবং পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলা সম্ভব ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, ঢাকাকে ঘিরে রাখা নদীগুলোর পানি এখন এতটাই দূষিত যে, তা ব্যবহার করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এসব নদীতে মাছসহ অন্যান্য জলজপ্রাণী বাঁচতে পারছে না। নগরীতে শিল্পগুলোর সব বর্জ্য কোনো রকম পরিশোধন না করে নদীতে ফেলা হচ্ছে এবং নগরীতে ব্যবহৃত যত দূষিত পানি ড্রেনের মাধ্যমে নদীতে সংযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা শহরের পরিত্যক্ত ময়লা-আবর্জনা সব রাস্তার পাশে ফেলা হয়। তাতে নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট হয়, সেই সাথে বায়ুতে মারাত্মক দূষণ ঘটায়। নগরীর বায়ুদূষণ এর মাধ্যমে ঘটে।

এই নগরী পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি। এটাও একটা পরিবেশগত সমস্যা। ঢাকায় শত শত বস্তিতে অগণিত মানুষ বসবাস করে। এসব বস্তিতে পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা না থাকায় তা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। সেই সাথে তারা খাবার ও রান্নাবান্নার জন্য যে পানি ব্যবহার করে সেটা নানাভাবে দূষিত হয়ে আছে। শুধু বস্তিতে কেন, সারা শহরে ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে সেই পানিও ভালো নয়।

পরিবেশের জন্য গাছপালার প্রভাব কতটা তা বলে শেষ করা যাবে না। অথচ প্রতিনিয়তই দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। নতুন গাছ রোপণের হার অত্যন্ত নগণ্য। প্রতি বছরের মধ্যভাগে দেশে বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করে বৃক্ষ রোপণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে এসব চারার বেশির ভাগই মরে যায় অথবা গরু-ছাগল খেয়ে ফেলে। ঢাকা নগরীতে গাছপালা এতটা কম যে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজধানী এখন ইট-সুরকি তথা দালান-কোঠার শহর হয়ে পড়েছে। গাছ রোপণের কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে। অথচ গাছপালা পরিবেশের জন্য কতটা জরুরি ও হিতকর তার উদাহরণ হচ্ছে রমনা থানাধীন এলাকার পরিবেশ। ঢাকা শহরে বলতে গেলে একমাত্র পার্ক হচ্ছে রমনা পার্ক। এই পার্কের গাছ-গাছালির জন্য রমনা এলাকার পরিবেশ শহরের অন্যান্য স্থান থেকে ভিন্ন। এখানকার বায়ু নির্মল। দিনের তাপমাত্রার ভারসাম্য রয়েছে। রমনা এলাকায় প্রতি বছর বৃষ্টির মওসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। এই পার্ক এই এলাকার মানুষের জন্য কল্যাণকর। রমনা পার্কের অনুরূপ পার্ক তৈরি করার জন্য জায়গা শহরে এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু সিটি করপোরেশন নগরী বিভিন্ন স্থানে যেখানে যতটুকু জায়গা পাওয়া যায় সেখানে যদি গাছ রোপণ করে সেটা অবশ্যই পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ঢাকা শহরে বহু খাল ছিল যেগুলো দুর্বৃত্তরা দখল করে নিয়েছে। এসব খাল ভরাট করে নানা স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। তবে একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশন গ্রহণ করেছে। এসব খাল পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের ব্যবস্থা নিয়েছে, সে জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাতে হয়। নগর নেতারা যদি পরিবেশের ওপর নজর না রাখেন এবং ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তবে সেটা হবে সবার জন্যই আত্মঘাতী।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com