টাকার ‘মান বাঁচাতে’ ৬ মাসে ৫৫০ কোটি ডলার কিনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

0

দেশের মুদ্রার মান অক্ষুণ্ন রাখতে সদ্য সমাপ্ত বছরের শেষ ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৫৫০ কোটি ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকার (প্রতি ডলার সাড়ে ৮৫ টাকা হিসাবে) সমান। এতে করে রফতানিকারক ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপকৃত হয়েছেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রায় ৫৫০ কোটি ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মানে বড় কোনও হেরফের হয়নি। 

গেল ১ জুলাই আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার পেতে ৮৪ টাকা ৮৫ পয়সা ব্যয় হয়েছে, বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর প্রতি ডলার পেতে লেগেছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে বিশাল অংকের এই ডলার না কিনলে তা ৮০ টাকার নিচে নেমে যেতো। 

দেশের টাকার মান ধরে রাখতে ডলার কেনায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুদও ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে, যা দেশের ইতিহাসে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। যা গত বছর ছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। 

গেল মার্চের পর থেকে বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়ে স্থানীয় বাজারে। রাতারাতি রফতানি আদেশ স্থগিত হতে থাকে। বিদেশি ক্রেতারাও অনেক রফতানি আদেশ বাতিল করেন। পাইপলাইনের রফতানি আয়ও বন্ধ হতে থাকে। কমে যায় আমদানি ব্যয়। 

করোনাকালীন কাজ হারিয়ে প্রবাসী শ্রমিকরা কাতারে কাতারে দেশে ফিরে আসতে শুরু করেন। তাদের দীর্ঘদিনের কষ্টার্জিত অর্থ একসঙ্গে নিয়ে আসায় রেমিট্যান্স অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। ফলে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ে, অপরদিকে আমদানি ব্যয় হ্রাস পায়। তাতে করে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কমতে থাকে। এ কারণে দেশের ব্যাংকগুলোও বেকায়দায় পড়ে। 

করোনাকালীন যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের মাধ্যমে আসতে শুরু করে ব্যাংকগুলোর কাছে তা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। বাজারে চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলোও তা বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে দেশের টাকার মান ধরে রাখতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে মজুদ রাখতে পারে না। ব্যাংকগুলোর মূলধনের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ থাকলে তা বাজারে বিক্রি করতে হয়, নয়তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হয়। এর ব্যত্যয় হলে জরিমানা গুণতে হয়। 

করোনাকালীন বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের চাহিদা ক্রমশ নিম্নমুখী হতে শুরু করে। অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা বাজারেও বিক্রি করার সুযোগ ছিল না। এমতাবস্থায় দেশের ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়। 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com