লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক ঋণও বিতরণ হয়নি

0

ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সর্বশেষ সময়সীমা শেষ হতে আর মাত্র ৮ দিন বাকি। অথচ গত ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ হয়েছে আট হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত ১৩ এপ্রিল থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত সাত মাসে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা; যা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও কম। মাসের বাকি সময়গুলোতে ব্যাংকগুলোর পক্ষে ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু এর পরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ খাতে ঋণ বিতরণের নানা জটিলতা নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গ্রাহক যাতে সহজেই এ খাত থেকে ঋণ নিয়ে সুদের ভর্তুকি গ্রহণ করতে পারে সে জন্য সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও এসএমই উদ্যোক্তাদের সুদ হারের ওপর ভর্তুকি দিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার। এ জন্য এ খাত থেকে গ্রাহকরা কিভাবে ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ করবে তার জন্য গত ১৩ এপ্রিল ব্যাংক ও গ্রাহকের জন্য একটি নীতিমালা জারি করা হয়। বলা হয়েছিল, এ খাত থেকে গ্রাহক ঋণ নিলে সুদ পরিশোধ করবে মাত্র ৪ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ভর্তুকি দেবে। একজন গ্রাহক কোন খাতে কী পরিমাণ ঋণ নিতে পারবেন তার জন্য নির্ধারিত সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এ নির্ধারিত সীমা তিন মাস অন্তর সমন্বয় করতে হবে। অর্থাৎ একজন গ্রাহকের ঋণ নেয়ার নির্ধারিত সীমা হলো এক লাখ টাকা। তিন মাস পরে ৪ শতাংশ সুদ যুক্ত হয়ে এক লাখ দুই হাজার টাকা হলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী তিনি পরে সুদের ওপর ভর্তুকি পেতে হলে গ্রাহককে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে এক লাখ টাকার অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় ওই গ্রাহক সুদের ওপর ভর্তুকি পাবেন না।

জানা গেছে, নানা কারণে গ্রাহক পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না। কেউ ব্যাংক চেক দিচ্ছেন। কিন্তু তা নগদায়ন হতে অনেক সময় পাঁচ কার্যদিবস পার হয়ে যাচ্ছে। এভাবে নানা কারণে গ্রাহক সুদের ভর্তুকি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে অনেকেই ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছেন। গ্রাহকের অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত অর্থ তিন মাসের পরবর্তী পাঁচ কার্যদিবসের পরিবর্তে ১০ কার্যদিবসে পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে, এখন থেকে গ্রাহক পাঁচ কার্যদিবসের পরিবর্তে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন। পাশাপাশি ভর্তুকির অর্থ ব্যাংক থেকে পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আবেদনের সময়সীমাও বাড়িয়ে ১০ কার্যদিবসের পরিবর্তে ১২ কার্যদিবস করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নানাভাবে কুটির ও মাঝারি শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো অনেকটা ঢিমেতালে ঋণ বিতরণ করছে। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গত ১৩ এপ্রিল যখন এ নীতিমালা দেয়া হয় তখন ব্যাংকের শীর্ষনির্বাহীদের সাথে পর্যালোচনা করে সময়সীমা দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য কয়েক দফা সময়ও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ সময়সীমা দেয়া হয়েছিল আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে থাকা হালনাগাদ তথ্য মতে, গত ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ বিতরণ করেছে মাত্র আট হাজার ৭০০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও কম। চলতি মাস শেষ হতে আর মাত্র আট দিন বাকি আছে।

এর মধ্যে ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার বাকি অংশ বিতরণ করতে পারবে না। এ কারণে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সর্বশেষ আরো এক মাস সময় বাড়িয়ে দেয়া হতে পারে। অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হবে। এ সময়ের মধ্যেও ঋণ বিতরণ করতে না পারলে ব্যাংকগুলোর সাথে জরুরি বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বৈঠকেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com