জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় বাংলাদেশ

0

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশেগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৩০ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে বছরে অতিরিক্ত দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে। এ মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন।

লিভিং ইন আ ফ্র্যাজাইল ওয়ার্ল্ড দ্য ইমপেক্ট অব ক্লাইমেট চেঞ্জ অন দ্য স্যানিটেশন ক্রাইসিস শীর্ষক ওয়াটার এইডের এক প্রতিবেদনে অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন এবং প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ এবং এ রোগ প্রতিরোধের মধ্যে সংযোগের বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ রোগগুলো কিভাবে বিস্তার লাভ করছে তা-ও এ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এ ছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ছাড়া জীবন-যাপন, বিশ্বের বেশির ভাগ বিপন্ন মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবনধারণের প্রক্রিয়াকে আরো বিপজ্জনক করে তুলেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবজনিত কারণে উপযুক্ত স্যানিটেশন ছাড়া মানুষের জীবন-যাপনের প্রক্রিয়া ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশেগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠের পাঁচ মিটারেরও কম উচ্চতায় রয়েছে, যা এ অঞ্চলগুলোকে অতিমাত্রায় বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। খরা, সম্দ্রুপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও সাইক্লোন সুপেয় পানির প্রাপ্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্যানিটেশন ও ক্লাইমেট ভালনারেবিলিটি ইনডেক্স র‌্যাংকিংয়ে ১৮১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬তম। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশটির জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশের মৌলিক স্যানিটেশন-সুবিধা রয়েছে। অন্য দিকে, দেশটির জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ সীমিত পরিসরে ও অনুন্নত স্যানিটেশন-সুবিধার আওতায় রয়েছে।

এ ছাড়া পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র ৪৫ শতাংশ নিরাপদ ব্যবস্থাপনায় স্যানিটেশনের ওপর নির্ভর করতে পারেন। যার অর্থ দাঁড়ায়, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটসেবা প্রাপ্তির কারণে এ ৪৫ শতাংশ মানুষের বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ করা যায়। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, দুই বিলিয়ন মানুষের প্রাইভেট টয়লেট প্রাপ্তির সুবিধা নেই এবং ৬০০ মিলিয়নেরও অধিক মানুষের বিকল্প নেই বলে তাদের উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করতে হয়।

স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের অভাবে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের কারণে ভূগর্ভের পানি দূষিত হয় এবং নদী কিংবা লেকের পানি দূষণের অন্যতম কারণও মানুষের মল। মানুষ রান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কিংবা প্রতিদিন পান করার জন্য এ পানির উৎসগুলোর ওপরই নির্ভর করে। আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে, শিশুরা মাটিতে খেলার মাধ্যমে এসব সংক্রামক জীবাণুতে আক্রান্ত্র হচ্ছে। ফলে, মানুষের মলের কারণে সৃষ্ট দূষণের ফলে পুরো কমিউনিটি ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়।

নিরাপদ পানি, উপযুক্ত টয়লেট ও হাইজিন-সুবিধার অভাবে পাঁচ দিনেরও কম সময়ে ৮০০ শিশু মৃত্যুবরণ করছে এবং প্রতি বছর মোট আট লাখ ২৯ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দরিদ্র কমিউনিটি এসব কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এসব কমিউনিটিতেই মৃত্যুর সংখ্যা বেশি বলে এ বিষয়গুলো দৃষ্টিগোচর হয় না। বর্তমানে স্যানিটেশন খাতের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বন্যা, শক্তিশালী সাইক্লোন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, দীর্ঘমেয়াদি খরার মতো বিষয়গুলো স্যানিটেশন খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এ খাতকে দুর্বল করে ফেলছে এবং ঝুঁকিতে থাকা কমিউনিটির বাসিন্দাদের অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক কমিউনিটির প্রতি স্যানিটেশন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানাচ্ছে ওয়াটার এইড। নিরাপদ, বিশ্বস্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন-সেবাই সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দূর করতে পারে। আন্তর্জাতিক এ দাতব্য সংস্থাটি বিভিন্ন দেশের সরকারকে তাদের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত কৌশল প্রণয়নে স্যানিটেশনের বিষয়টিকে যোগ করতে তাগাদা দিচ্ছে। এতে করে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় কমিউনিটির মানুষ ভালো প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে।

এ নিয়ে ওয়াটারএইডের ইউকে চিফ এক্সিকিউটিভ টিম ওয়েইনরাইট বলেন, ‘ওয়াটারএইডের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, স্যানিটেশন-সঙ্কটকে আরো তীব্র করে তুলবে জলবায়ু পরিবর্তন। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় টয়লেট ও স্যানিটেশন খাতের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যা লাখো মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।’

এ নিয়ে ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘স্যানিটেশন ও হাইজিন সচেতনতার অভাবে অনেক মানুষ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে এ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। সাইকোন ও বন্যার পানিতে নাজুক ল্যাট্রিনগুলোর ক্ষতিসাধন করে, যা বাসিন্দাদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায়, স্যানিটেশন খাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ দরকার। পাশাপাশি, সবার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং ওয়াশ ও জলবায়ু অভিযোজন-সংক্রান্ত কার্যক্রম চালু করা দরকার।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com