রেমিটেন্সে রেকর্ড, ১২ দিনেই এলো ১০০ কোটি টাকা
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির একটি প্রধান ও অন্যতম চালিকাশক্তি। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের অভিঘাতের কয়েক মাস আগেও সেই রেমিটেন্স নেমেছিল তলানিতে। সেই অবস্থা কাটিয়ে আবারও দেশে টাকা পাঠানো শুরু করেছেন বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। করোনার কঠিন সময়েও দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখছেন সেই প্রবাসীরাই।
করোনা ভাইরাসের মহামারির চলমান সংকটের মধ্যেও দেশে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এবার নভেম্বর মাসের প্রথম ১২ দিনেই ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে দেশে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে সেখানে বলা হয়, নভেম্বরের ১২ দিনেই ১ দশমিক ০৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা) রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। দেশের ইতিহাসে একক মাসে মাত্র ১২ দিনে এর আগে কখনোই এতো পরিমাণ রেমিটেন্স আসেনি।
২০২০-২০২১ অর্থ বছরের জুলাই থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত মোট রেমিটেন্স এসেছে ৯ দশমিক ৮৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে একই সময়ে রেমিটেন্স এসেছিল ৬ দশমিক ৮৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৪৩দ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি।
এর আগে গেল সেপ্টেম্বরে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬৭১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৫২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
রেমিট্যান্সের এই প্রবাহ তুঙ্গে থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বলে গেল অক্টোবরের শুরুতে ইঙ্গিত দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, গেল ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ৩৯ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার।
২০১৯-২০ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। এরপর থেকেই বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়তে শুরু করে। চলতি অর্থবছরেও রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
বছরের শুরুর দিকে গত মার্চ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা মোট রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল মাত্র ১২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যা ছিল আগের ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ঠিক তার আগের বছর একই সময়ে অর্থাৎ ২০১৯ সালের মার্চ মাসের চেয়ে কম প্রায় ১২ শতাংশ কম।
সরকার ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণার পর কোনও মাসেই ১৪০ কোটি ডলারের কম রেমিট্যান্স আসেনি। গেল ফেব্রুয়ারিতে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৫ কোটি ডলার। তবে এরপরই করোনা পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ আরও কমতে শুরু করে।
তবে করোনার চলমান সংকটের মধ্যেও প্রবাসী আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। গেল সেপ্টেম্বর মাসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
ঠিক তার দুই মাস আগেই গেল জুলাইয়ে একক মাসে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। ওই মাসে ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। আগের জুন মাসে এসেছিল ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার।
অক্টোবরের শুরুতেই বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকাও বেশি (১ ডলার সমান ৮৪ টাকা হিসাবে)। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ৪৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। গেল বছরের সেপ্টেম্বরে ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা।