ট্রাম্প-তালেবান চুক্তির কী হবে?

0

আফগানিস্তানের সশস্ত্র গ্রুপ তালেবান যদিও এটা জানে যে ২০২১ সালের শুরুতে আমেরিকায় নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে আসবেন, তবু তারা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে যাচ্ছে।

১০ নভেম্বর এক বিবৃতিতে তালেবানরা বলেছে যে, মার্কিন নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ইস্যু কিন্তু “নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ভবিষ্যতের প্রশাসনের কাছে আমরা জোর দিয়ে এটা বলতে চাই যে দোহা চুক্তির বাস্তবায়ন দুই দেশের মধ্যে সঙ্ঘাত নিরসনের সবচেয়ে যুক্তিগ্রাহ্য ও কার্যকর উপায়”।

২০১৯ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারির চুক্তির প্রধান পয়েন্টগুলো তালেবানরা জোর দিয়ে উল্লেখ করেছে। তাদের দৃষ্টিতে প্রধান বিষয়গুলো হলো মার্কিন সেনা প্রত্যাহার, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ না করার নীতি, এবং তালেবানরা আফগান মাটিতে মার্কিন বিরোধী হুমকি প্রতিরোধ করবে। যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে যে, তালেবানরা এখনও চুক্তির প্রতি দায়বদ্ধ রয়েছে।

তালেবানরা ভবিষ্যতের আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ও প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে যাতে তারা যুদ্ধোন্মাদ চক্র, ব্যক্তি ও গ্রুপগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকে, যারা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য আমেরিকাকে যুদ্ধে লিপ্ত রাখতে চায়।

জো বাইডেন প্রশাসনের অধীনে আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধ, পরিকল্পিত সেনা প্রত্যাহার, এবং শান্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন নীতির খুব একটা পরিবর্তন হবে না। চলতি সপ্তাহে এক বিশ্লেষণে বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে আবুবকর সিদ্দিক ব্যাখ্যা করে বলেন যে, “নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন হয়তো আফগানিস্তানে মার্কিন নীতিতে সামান্য এদিক ওদিক করবে, কিন্তু মূল পরিকল্পনার তেমন কোন পরিবর্তন করবে না…”।

স্টিমসন সেন্টারের এলিজাবেথ থ্রেলকেল্ড সিদ্দিককে বলেন যে, “সাধারণভাবে যেকোনো পরিবর্তন হলে সেটা হবে দৃষ্টিভঙ্গিগত ও প্রক্রিয়াগত, সারবস্তুতে খুব একটা পরিবর্তন হবে না”।

অন্যেরা উল্লেখ করেছেন যে, বাইডেন যেহেতু মার্কিন সিনেটের ফরেন রিলেশান্স কমিটিতে ২০০১ এর শুরুতে, ২০০১ এর মাঝামাঝি থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত, এবং পরে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন, সে কারণে তিনি হয়তো সেনা প্রত্যাহারের শর্তগুলো কঠোরভাবে অনুসরণের চেষ্টা করবেন, কিন্তু সার্বিক নীতিতে তেমন নাটকীয় কোন পরিবর্তন আসবে না।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন, তখনই বারাক ওবামার প্রশাসন – যেখানে বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন – যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের বিভিন্ন তৎপরতা শুরু করেছিলেন।

ওবামা যখন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন তখন আফগানিস্তানে ৩০ হাজারের কিছু বেশি সেনা ছিল। ২০১০ সালের মধ্যে সেখানে সেনা সংখ্যা বেড়ে এক লাখের উপরে চলে যায়। ২০১৪ সালে সেনা সংখ্যা কমে আবার ৩৪ হাজারের কাছাকাছি নেমে আসে।

ওবামা যখন ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি সামরিক বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহারের জন্য যাতে একটা সময় ঠিক করা হয়, কারণ তৎকালিন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সহায়তা (বিএসএ) চুক্তি করতে অস্বীকার করেছিলেন, যে চুক্তির ফলে আইনগতভাবে মার্কিন সেনারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে পারবে।

নতুন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিএসএ চুক্তি স্বাক্ষর করেন, কিন্তু ওবামা প্রশাসন এর পরও সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।

এদিকে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন যে চুক্তি করেন, সেখানে সেনা প্রত্যাহারের জন্য ১৪ মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। ১৩৫ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা সংখ্যা ৮৬০০তে নামিয়ে আনবে, এবং পরের সাড়ে নয় মাসের মধ্যে সেনা সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা হবে।

এই সময়সীমাটা বাইডেন প্রশাসন অনুসরণ করবে কি না, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

একদিকে তালেবানরা বাইডেন প্রশাসনের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে এবং চুক্তির প্রক্রিয়া অনুসরণের জোর দাবি জানিয়েছে। একই সাথে আফগান সরকারের কর্মকর্তারা আবার আশা প্রকাশ করেছেন যে, ওয়াশিংটন তাদের অবস্থানের ব্যাপারে হয়তো আরও কঠোর হবে।

তালেবানরা যদিও একদিকে দোহাতে আফগান সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে – সেপ্টেম্বরে যে আফগান-অভ্যন্তরীণ সংলাপ শুরু হয়েছে, অন্যদিকে দেশের মধ্যে পরস্পরের উপর হামলার তীব্রতাও একই ভাবে চলছে। তালেবানদের বিরুদ্ধে তাই অভিযোগ উঠেছে যে, চুক্তির শর্ত তারা মানছে না।

আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট সারোয়ার দানিশ সোমবার বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে শান্তি প্রক্রিয়ার বিষয়টি পুরোপুরি পর্যালোচনা করেন তিনি এবং সহিংসতা কমানোর জন্য তালেবানদের উপর যাতে আরও চাপ দেন তিনি।

এক আফগান কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, “সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তনটা আমরা আশা করছি, সেটা হলো নীতিগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তাদের প্রক্রিয়াটা আরও অনুমেয় হবে, সেনা প্রত্যাহার আরও সমন্বিত হবে আশা করা করছি আমরা”।

সূত্র : দ্য ডিপ্লোম্যাট

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com