চার বছরেও সাড়া দেয়নি পরিবেশ মন্ত্রণালয়

0

যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন (পিসিআর) তৈরি করতে হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে। ৯০ দিনের মধ্যে তা প্রকল্প তদারকি সংস্থা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে (আইএমইডি) জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর চার বছর পেরিয়ে গেলেও চারটি প্রকল্পের পিসিআর জমা দেয়নি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। আইএমইডির পক্ষ থেকে গত মাসেও এ প্রতিবেদন চেয়ে একাধিবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতেও সাড়া মেলেনি। মন্ত্রণালয় বলছে, চার বছর আগে শেষ হওয়া প্রকল্প, চাইলেই প্রতিবেদন বানানো যাবে না। এজন্য পিসিআর জমা দিতে সময় লাগবে।

আইএমইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ৯টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। এর মধ্যে চারটি প্রকল্পের পিসিআর এখনো জমা পড়েনি। আইএমইডি চারটি পিসিআর চেয়ে গত কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় চিঠি দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। সবশেষ গত ৫ অক্টোবর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আবারও চিঠি দেয় আইএমইডি। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে। ওই প্রকল্পের মধ্যে চারটি প্রকল্পের পিসিআর আজ পর্যন্ত আইএমইডিকে দেওয়া হয়নি। এমনকি ২০১৮ সালের ৮ আগস্টের চিঠির বিষয়েও কোনো অগ্রগতি জানানো হয়নি।

এ বিষয়ে আইএমইডির সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রত্যেকটি উন্নয়ন প্রকল্প সমাপ্তের ৯০ দিনের মধ্যে আইএমইডিতে পিসিআর জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ প্রকল্প শেষ হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ে আইএমইডিতে পিসিআর জমা দেওয়া হচ্ছে না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের চিঠি দিয়েছি। আমার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ভালো সাড়া পাচ্ছি। ইতিমধ্যেই অনেক মন্ত্রণালয় আইএমইডিতে পিসিআর পাঠাচ্ছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার সময় আমি দেখতে পাই পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় চার বছর আগে সমাপ্ত হওয়া চারটি প্রকল্পের পিসিআর এখনো জমা দেয়নি। একাধিকবার চিঠি দিলেও তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি। সর্বশেষ চলতি মাসে পরিকল্পনামন্ত্রীর নির্দেশনায় আবারও চিঠি দিয়েছি।’

আইএমইডির দেওয়া চিঠি থেকে জানা গেছে, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ এই তিন বছরে সমাপ্ত প্রকল্পগুলোর অধিকাংশেরই পিসিআর আইএমইডি পায়নি। দফায় দফায় গত তিন বছর ধরে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তাগাদা চিঠি দিয়ে আসছে আইএমইডি। এমনকি প্রকল্প পরিচালকরাও আইএমইডির কথায় কর্ণপাত করছেন না।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা করা হয়েছে। আমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (উন্নয়ন) দায়িত্ব দিয়েছি।’ চার বছর আগের বিধায় পিসিআরগুলো জমা দিতে সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

আইএমইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু তাই নয়, পরের দু’বছরে শেষ হওয়া একাধিক প্রকল্পের পিসিআর জমা দেওয়ার বিষয়েও উদাসীনতা দেখাচ্ছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট পিসিআর চেয়ে আইএমইডির তৎকালীন সচিব মো. মফিজুল ইসলামও চিঠি দেন তৎকালীন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরীকে।

গত চার বছরে পিসিআর না পাওয়া প্রকল্পগুলো হলো বাংলাদেশ ব্রিক কিলন ইফিসিয়েন্সি প্রকল্প, যা ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত হয়েছে; বাংলাদেশ থার্ড ন্যাশনাল কমিউনিকেশন টু দ্য ইউএনএফসিসিসি, যা ২০১৭ সালের মার্চে সমাপ্ত হয়েছে। ২০১৭ সালের জুনে সমাপ্ত হয় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত অংশীদারত্বমূলক কর্মসূচি এবং রাঙ্গুনিয়ায় রাবার এস্টেট চট্টগ্রাম জোন প্রতিষ্ঠা প্রকল্প। পিসিআর না পাওয়ায় এডিপিভুক্ত সমাপ্ত প্রকল্পগুলোর মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় আইএমইডি।

চিঠিতে আইএমইডি সচিব জানান, টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজের গুণগত মান বজায় রেখে সময়মতো প্রকল্প সমাপ্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে প্রকল্প সমাপ্তির পর আইএমইডিতে পিসিআর প্রেরণ করা হয়। পিসিআর প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইএমইডি থেকে প্রকল্প পরিদর্শনপূর্বক মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সব মূল্যায়ন প্রতিবেদন দিয়ে পুস্তিকাকারে একটি সমন্বিত মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়। উক্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন সুপারিশসহ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এসইসি), একনেক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা ও অন্য সবার কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়।

মন্ত্রণালয়গুলোতে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আইএমইডির কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আপনার সহযোগিতা কামনা করি। আপনি অবগত আছেন, সমাপ্ত প্রকল্পের মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা আইএমইডির অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু আপনার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১৮টি সমাপ্ত প্রকল্পের পিসিআর একাধিকবার তাগিদ দেওয়ার পরও পাওয়া যায়নি। পিসিআর না পাওয়ায় উক্ত প্রকল্পগুলোর মূল্যায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা যাচ্ছে না। সরকারি অর্থে বাস্তবায়িত এসব প্রকল্পের কাজের গুণগত মান সম্পর্কে জানা যাচ্ছে না। এর মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৯টি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৯টি প্রকল্প রয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেষ হওয়া পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পিসিআর জমা না দেওয়া প্রকল্পগুলো হলো জীব নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কর্মকাঠামো বাস্তবায়ন (প্রথম সংশোধন); প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বল্পস্থায়ী বায়ুদূষণ হ্রাসকরণ; জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু বাস্তুসংস্থান ও জীবিকায়ন প্রকল্প (বন অঙ্গ); বাঘ সংরক্ষণ; বাংলাদেশ ফরেস্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম; ফরেস্ট ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান প্রিপারেশন প্রকল্প; সিলেটে রাবার উড প্রক্রিয়ার জন্য প্রেসার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন; চট্টগ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলে ভাসকুলার ফ্লোরা সার্ভে; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সমাপ্ত প্রকল্পগুলো হলো নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (৩য় সংশোধিত); লালমাই পাহাড় এলাকায় উদ্ভিদ উদ্যান স্থাপন প্রকল্প; বন বিভাগের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোর সুবিধাদির উন্নয়ন; ইউএন রেড জাতীয় কর্মসূচি; সাপোর্ট টু ডিপিপি প্রিপারেশন অব টেকসই ফরেস্ট ও প্রাণিসম্পদ; চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্প-৪ (২য় সংশোধিত); মেঘনা নদী থেকে ঢাকার জন্য টেকসই পানি সরবরাহের জন্য শক্তিশালী মনিটনিং ও এনফোর্সমেন্ট।

তাগাদাপত্রে আইএমইডি সচিব বলেন, ‘সমাপ্ত প্রকল্পের না দেওয়া পিসিআর প্রেরণের জন্য আইএমইডির পক্ষ থেকে গত ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট এবং চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি উপানুষ্ঠানিক পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। পিসিআর প্রেরণের ক্ষেত্রে এরূপ অস্বাভাবিক বিলম্বের কারণ কী তা অনুসন্ধান করে দেখার জন্য আপনার প্রতি অনুরোধ রইল। পেইন্ডিং পিসিআরগুলো অবিলম্বে আইএমইডিতে প্রেরণের বিষয়ে আইএমইডি সচিব পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবের ব্যক্তিগত উদ্যোগ কামনা করেছেন।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com