সেপ্টেম্বরে রেকর্ড, ৩ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে সাড়ে ৬৭০০০ কোটি টাকা

0

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি প্রধান চালিকাশক্তি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্বজুড়ে নভেল করোনা ভাইরাসের অভিঘাতে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ শুরুতে কিছুটা কমেছিল। এমনকি করোনা সংক্রমণ এড়াতে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বহু প্রবাসী বাংলাদেশি দেশেও ফিরে এসেছিল। যারা নিজ নিজ কর্মস্থলে থেকে গিয়েছিলেন তাদেরও উপার্জনে ভাটা পড়েছিল। তবে করোনার এই কঠিন সময়েও দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখছেন প্রবাসীরা। এমনকি গেল সেপ্টেম্বর মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। 

বছরের শুরুর দিকে গত মার্চ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা মোট রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল মাত্র ১২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যা ছিল আগের ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ঠিক তার আগের বছর একই সময়ে অর্থাৎ ২০১৯ সালের মার্চ মাসের চেয়ে কম প্রায় ১২ শতাংশ কম।

সরকার ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণার পর কোনও মাসেই ১৪০ কোটি ডলারের কম রেমিট্যান্স আসেনি। গেল ফেব্রুয়ারিতে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৫ কোটি ডলার। তবে এরপরই করোনা পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ আরও কমতে শুরু করে। 

তবে করোনার চলমান সংকটের মধ্যেও প্রবাসী আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। গেল সেপ্টেম্বর মাসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। একক মাস হিসেবে যা দেশের ইতিহাসে এযাবৎকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

ঠিক তার দুই মাস আগেই গেল জুলাইয়ে একক মাসে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। ওই মাসে ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। আগের জুন মাসে এসেছিল ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার।

অক্টোবরের শুরুতেই বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকাও বেশি (১ ডলার সমান ৮৪ টাকা হিসাবে)। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ৪৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। গেল বছরের সেপ্টেম্বরে ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। 

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৭১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৫২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

রেমিট্যান্সের এই প্রবাহ তুঙ্গে থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, গত ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। 

গেল ২০১৯-২০২০ অর্থবছর রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। এরপর থেকেই বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়তে শুরু করে। চলতি অর্থবছরেও রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। ফলে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই একক মাস হিসাবে রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। 

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ১ হাজার ৮২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে)। এর আগে কোনও অর্থবছরে এত অর্থ দেশে আসেনি। 

২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গিয়েছিল। ওই অর্থবছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ১৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার (১৫ হাজার কোটি টাকা) রেমিট্যান্স বেড়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com