ট্রাম্পের করোনা, নার্ভাস বেইজিং

0

ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প পরিষ্কার করেছেন, করোনা ভাইরাস মহামারির জন্য কে দায়ী। তিনি বলেছেন, এটা হলো চীনের ত্রুটি। এটা কখনো হওয়া উচিত ছিল না। এর আগে তিনি করোনা ভাইরাসকে ‘চায়না প্লেগ’ বলে অভিহিত করেন। করোনায় বৈশ্বিক দুর্ভোগের জন্য তিনি প্রথম থেকেই চীনকে দায়ী করে আসছেন। বেশ কয়েক মাস ধরে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বেইজিংয়ের ব্যর্থতার কথা বলে আসছেন তিনি। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এক বিপর্যয়কর প্রভাব পড়েছে। শুধু সেখানেই কমপক্ষে ২ লাখ মানুষ মারা গিয়েছেন।প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সহ কমপক্ষে ৭৩ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন করোনা ভাইরাসে।

ট্রাম্পের সমালোচনায় ক্ষুব্ধ হয়েছে বেইজিং। তারা উল্টো রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ও অফিসিয়াল কমেন্টের মাধ্যমে এই ভাইরাস মোকাবিলায় ওয়াশিংটনের ত্রুটির কথা জোর দিয়ে বলে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালভাবে চীনের ঘনিষ্ঠ অনেক দেশ করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করেছে। অনেক সমালোচক এই মহামারিতে ট্রাম্প যে ব্যবস্থা নিয়েছেন তার সমালোচনা করেছেন।

চীন বর্তমানে ‘গোল্ডেন উইক’ পালন করছে। এটি হলো আটদিন ব্যাপী এক উৎসব। এ সময়ে ১লা অক্টোবরকে চীনের জাতীয় দিবস হিসেবে এবং মধ্য-শরতের উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। এ সময়ে লাখ লাখ চীনা নাগরিক বিভিন্ন স্থানে সফর করেন। এ থেকে প্রমাণ মেলে একটি দেশ কিভাবে এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেয়েছে।
প্রথমদিকে ট্রাম্পের করোনা ধরা পড়ার পর বেশ কিছু চীনা ভাষ্যকার মন্তব্য করতে থাকেন। তিনি চীনকে এক্ষেত্রে বলির পাঁঠা বানানোর জন্য বার বার যে চেষ্টা করেন, তারই ফল এটা বলে তারা মন্তব্য করেন। বলা হয়, ট্রাম্পের এসব প্রচেষ্টা দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চীনে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবো’তে ট্রাম্পের অসুস্থতার খবরে লাখ লাখ মন্তব্য পড়তে থাকে। এতে কেউ কেউ ট্রাম্পের করোনা সংক্রমণকে চীনের জাতীয় দিবসের উপহার হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

রাষ্ট্র সমর্থিত ট্যাবলয়েড পত্রিকা গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক হু সিনজিন টুইটারে লিখেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। কোভিড-১৯ নিয়ে জুয়া খেলার মূল্য দিচ্ছেন তারা। এখানে উল্লেখ্য, চীনের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে সম্পাদক হু সিনজিনের। তিনি দ্রুততার সঙ্গে তার ওই পোস্ট মুছে দিয়েছেন। তবে পরিষ্কারভাবে জানা যায় নি যে, তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা তার নিজের নাকি উপরের মহলের নির্দেশনামতো লিখেছিলেন। কিন্তু তিনি ওই মন্তব্য মুছে দেয়ার আগেই তা ইংরেজি ভাষার মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পেয়েছে।

তবে তথ্যপ্রমাণ মিলেছে যে, ট্রাম্পের অসুস্থতা নিয়ে আভ্যন্তরীণ পর্যায়ে মন্তব্য নিয়ন্ত্রণ করছে বেইজিং। ট্রাম্পের খবরটি বেশির ভাগ রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জায়গা পায় নি, যদিও সারাবিশ্ব তোলপাড় হচ্ছে এ নিয়ে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম সিসিটিভি এবং পত্রিকা পিপলস ডেইলি সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবো’তে ট্রাম্পকে নিয়ে পোস্ট দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তাদের নার্ভাস হওয়ার ইঙ্গিত মেলে। যদিও চীনে সরকারি ছুটি তবু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেয়া হয়েছে। তাকে ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডির দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়েছে।

ট্রাম্পের করোনা ভাইরাস ধরা পড়া নিয়ে বেইজিংয়ের নার্ভাস হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। চীনা মিডিয়া এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে সমালোচনা আছে। চীন মনে করে এক্ষেত্রে তাদেরকে বলির পাঁঠা বানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও অসন্তোষ নিয়ে বেইজিং মার্কিন নির্বাচনে একটি বড় টপিক হওয়াতে অসন্তুষ্ট। তবে এই ধারা পরিবর্তিত হবে বলে মনে হয় না। ট্রাম্প হয়তো এখন চীনের বিষয়ে আরো কঠোর অবস্থান নেবেন।
(সিএনএন থেকে সংক্ষিপ্ত অনুবাদ)

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com