ভারতের ‘মোহ’ কাটিয়ে চীন ঘেঁষছে বাংলাদেশ: ইকোনমিস্ট

0

সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে চীন-ভারত সম্পর্ক। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিরোধের বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে বাংলাদেশেও। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বাংলাদেশ কাকে বেশি গুরুত্ব দেবে সেই প্রশ্ন। যদিও বাংলাদেশ বরাবরই সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাসী, তবে বিভিন্ন ইস্যুতে পুরোনো মিত্র ভারতের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এশীয় পরাশক্তি চীন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে এই দূরত্বের যথাসম্ভব ফায়দা নেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দুর্বল এবং ধীরে ধীরে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার বিষয়ে শনিবার বিশ্লেষণধর্মী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট।

ডিএলটিভির পাঠকদের জন্য লেখাটির অনুবাদ তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিলেট ভারত সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে। তারপরও, গত এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকার যখন শহরটিতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নতুন বিমানবন্দর করার চুক্তি করে, সেখানে ভারতকে হারিয়ে কাজটি জিতে নেয় একটি চীনা প্রতিষ্ঠান- বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ। গত জুনে বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধার অনুমোদন দিয়েছে চীন। আর তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে দশকব্যাপী বিরোধের পর চলতি মাসে ওই অঞ্চলের পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে চীনকে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

jagonews24

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা করায় ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ বাংলাদেশ। সেই থেকে দুই দেশের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ। কিন্তু অনেক বাংলাদেশিই ভারতকে আধিপত্যবাদী ও অহংকারী মিত্র মনে করেন।

বাংলাদেশের এক সাংবাদিক বলেন, ‘তারা আসলে মনেই করে না যে আমরা স্বাধীন। তারা সবকিছুতে নাক গলায়। তারা মনে করে আমাদের আমলারা তাদের জন্য কাজ করেন।’

ভারত সরকারের মুসলিম-বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণেও সন্দেহ বেড়েছে ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশ বাংলাদেশের।

বিপরীতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে সাতটি ‘মৈত্রী সেতু’ নির্মাণ করেছে চীন। ২০১৮ সালে তারা ভারতকে হটিয়ে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎসে পরিণত হয়। দেশটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদারও। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে ২৭টি প্রকল্পে ২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জ্বালানি, টেলিকম সবখানেই চীনের ব্যবসা।’

ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটির আলি রিয়াজ বলেন, ‘বড় দাতা হিসেবে বেশিরভাগ পশ্চিমাদের তুলনায় চীনের সংকোচ যথেষ্ট কম।’ ২০১৩ সালে পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করলে বিশ্ব ব্যাংকের ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ। তখন এগিয়ে আসে চীন।

রিয়াজ বলেন, ‘গত কয়েক বছরে চীনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও গুরুত্বপূর্ণ হারে বেড়েছে।’

আলোচনায় আছে গণমাধ্যমও। বাংলাদেশে অর্থনীতি বিষয়ক পত্রিকার এক সাংবাদিক বলেন, ‘আমাদের পত্রিকার প্রায় ৭০ শতাংশ সাংবাদিক চীনে গিয়েছেন।’ তিনি নিজেও ২০১৮ সালে ফেলোশিপ নিয়ে চীনে ১০ মাস কাটিয়ে এসেছেন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পৌঁছানোর পরপরই মহামারির বিরুদ্ধে লড়তে চিকিৎসকদের একটি দল পাঠিয়েছিল চীন।

এসব সহযোগিতায় কাজও হচ্ছে বেশ। চীন সরকার ভারতের তুলনায় অনেকটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে মুসলিমদের নির্যাতন করছে। বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতি ছিল তাদের। এরপরও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কম সমালোচনা হয় চীনকে নিয়ে।

এসব বিষয়ে অবশ্য বেশ সতর্ক বাংলাদেশ। তারা চীনের কাছে খুব বেশি ঋণী হবে না, আবার ভারতকেও ক্ষেপাবে না। গত মার্চে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল। পরে করোনাভাইরাসের কারণে সেই সফর বাতিল হয়। তবুও, পাশে এত বড় ও শক্তিশালী প্রতিবেশী থাকাটা অস্বস্তিকর।

আলি রিয়াজ বলেন, ‘ভারতের নীতিনির্ধারক ও গণমাধ্যমগুলো ক্রমাগত বাংলাদেশকে এটি মনে করাতে থামে না যে, তারা অপেক্ষাকৃত ছোট এবং কম গুরুত্বপূর্ণ। চীন সেটা করে না।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com