সীমান্তে মাদক ও স্বর্ণ পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে নারীদের

0

যশোরের বেনাপোল-শার্শা সীমান্তে মাদক ও স্বর্ণ পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে নারীদের। গত ১৬ দিনে পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকায় নয় নারী পাচারকারীকে হাতেনাতে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাদক ও স্বর্ণ পাচারে অল্প সময়ে অধিক অর্থের লোভে পাচারকারীর খাতায় নাম লেখাচ্ছেন নারীরা।

একই সঙ্গে গডফাদারদের খপ্পরে পড়ে দ্রুত সময়ে কোটিপতি হওয়ার আশায় অনেক নারী জড়িয়ে পড়ছেন পাচার কাজে। বেনাপোল-শার্শা ভারত সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় পুরুষের পাশাপাশি নারী পাচারকারীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় পাচারকারীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে আবার অপরাধে জড়ায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেনাপোল-শার্শা সীমান্তের কায়বা, রুদ্রপুর, গোগা, অগ্রভুলাট, পাঁচভুলাট, শালকোনা, পাকশিয়া, ডিহি, গোড়পাড়া, পুটখালী, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, সাদিপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা ও ধান্যখোলা সীমান্তে পাচারকারীরা অনেক বেশি সক্রিয়। সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় এসব পথ বেছে নিয়েছেন পাচারকারীরা।

পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ১০ সেপ্টেম্বর বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ শার্শার রাড়িপুকুর গ্রাম থেকে পানি ভর্তি কলসিতে করে ফেনসিডিল বহনের সময় রিপন হোসেনের স্ত্রী কাকলী বেগমকে আটক করে। একই দিন বেনাপোল পোর্ট থানার গয়ড়া গ্রাম থেকে অভয়নগর থানার গুয়াখোলা এলাকার ইকবালের স্ত্রী পারভীন বেগম বুলু ও কোতোয়ালি থানার নরেন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ খানের মেয়ে রোকেয়া খাতুনকে দুই কেজি গাঁজাসহ আটক করে পুলিশ।

৮ সেপ্টেম্বর শার্শার সাতক্ষীরা-নাভারণ সড়কের আমতলা এলাকা থেকে বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার সাতপুর গ্রামের শুভ আহমেদের স্ত্রী জুলেখা বেগম ও একই গ্রামের আব্দুল্লাহর স্ত্রী আকলিমা খাতুন খাদিজাকে ১১০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে।

৬ সেপ্টেম্বর সকালে বেনাপোল পৌর এলাকার ভবেরবেড় গ্রাম থেকে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ যশোর কোতোয়ালি থানার নরেন্দ্রপুর (আমড়াতলা) এলাকার আব্দুল আজিজের মেয়ে মনি ও বাগেরহাট সদরের যাত্রাপুর গ্রামের আইয়ুব আলী শেখের মেয়ে ফাতেমা খাতুনকে তিন কেজি গাঁজাসহ আটক করে।

৫ সেপ্টেম্বর শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া সাতমাইল এলাকার আমতলা থেকে বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ একাধিক মামলার আসামি রিজিয়া বেগম ওরফে তানিয়াকে সাত বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে। ২৮ আগস্ট বেনাপোল পোর্ট থানার সাদিপুর সীমান্ত থেকে ওই গ্রামের দুখে মিয়ার স্ত্রী বানেছাকে ৫৭ পিস স্বর্ণের বারসহ আটক করে বিজিবি।

বেনাপোলের ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, মাদক বর্তমান সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। নারীদেরও মাদকসহ বিভিন্ন পাচারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক। জেনে হোক আর না জেনে হোক পাচারে জড়িত থাকলে তাদের এই পেশা ত্যাগ করা উচিত। যেন মায়েদের নেতিবাচক প্রভাব তার সন্তানের ওপর না পড়ে।

শার্শার বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উত্তম কুমার বিশ্বাস বলেন, আমি এই ফাঁড়িতে যোগদান করার পর থেকে যত মাদকদ্রব্য এবং তার সঙ্গে বহনকারী যানবাহন আটক হয়েছে তা অন্য সময় হয়নি। দেশে মাদকদ্রব্য যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

শার্শা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম খান বলেন, মাদক উদ্ধারের পাশাপাশি যারা এ ব্যবসায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। কোনো মাদক ব্যবসায়ী এবং তাদের মদদদাতাদের ছাড় দেয়া হবে না।

বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান বলেন, আমি বেনাপোল পোর্ট থানায় যোগদানের পর থেকে মাদকবিরোধী অভিযান ও মাদক উদ্ধার কার্যক্রম অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর আগে এই থানায় মাদক উদ্ধারের এত রেকর্ড নেই। আমি মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যদি কোনো গডফাদার জড়িত থাকে তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না।

যশোর ৪৯ বিজিবির বেনাপোল সদর ক্যাম্পের সুবেদার হান্নান মিয়া বলেন, চোরাচালানি রোধে সীমান্তে বিজিবি সতর্ক আছে। গত এক বছরে ১৩টি পিস্তল, ২৪টি ম্যাগাজিন, ৫৮টি গুলি, ২৫.৪১ কেজি স্বর্ণ, ২০ হাজার ৮২৭ বোতল ফেনসিডিল, ৫৪৭ কেজি গাঁজা, ৪০৬ বোতল মদ, ৫৬৭ পিস ইয়াবা ও ৪০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারসহ ২০১ জনকে আটক করেছে বিজিবি। এ সময়ে ১৭ কোটি ৭৫ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকার মালামাল আটক করা হয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com