ভারত যদি যুদ্ধ চায়, চীন সেটা দিতে বাধ্য থাকবে

0

চীনের স্টেট কাউন্সিল ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ইয়ি এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের চীন-ভারত সীমান্তের উত্তেজনা প্রশমন বিষয়ে মস্কোতে বৈঠকে বসার কথা। এই বৈঠক থেকে বোঝা যায় যে, দুই পক্ষ বর্তমান জটিল পরিস্থিতির মধ্যেও রাজনৈতিক যোগাযোগ বজায় রেখেছে, যদিও এতে উত্তেজনা কমবে কি না সেটা নিশ্চিত নয়। কারণ লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের ব্যাপারে দুই দেশের মতপার্থক্য রয়েছে এবং ভারতীয় সেনারা সেখানে আগ্রাসী মনোভাব গ্রহণ করেছে।

কিছুকাল ধরে নয়াদিল্লী কূটনীতির ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানোর পাশাপাশি সীমান্ত এলাকাতে আগ্রাসী অবস্থান নিয়েছে। মনে হচ্ছে ভারতের ধনুকের দুটো দিক এটা। বোঝাই যাচ্ছে ভারত এখনও মারাত্মক ভুল ধারণার মধ্যে রয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে চাপের মধ্যে থাকায় চীন ভারতের সাথে কোন সঙ্ঘাতে নামতে পারবে না, এবং এই সুযোগে ভারত চীনকে চাপ দিয়ে চীনা ভূখণ্ডের খানিকটা দখলে নিতে পারবে।

ভারত কূটনীতিকভাবে যা-ই বলুক, চীন শুধু তাদের কথা শুনেই চুপ নেই, একই সাথে তাদের তৎপরতার উপরও নজর রাখছে তারা। ১৯৫৯ সালের ৭ নভেম্বর যে এলএসি নির্ধারিত হয়, ভারতীয় পক্ষ সেটা মানে না, এবং ১৯৬২ সালের যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ক্ষোভ এখনও তাদের রয়েছে। ভারতের জাতীয়তাবাদী শক্তিও এখন নজিরবিহীন পর্যায়ে রয়েছে। চীন আশা করে না যে, একটি আলোচনাই ভারতকে একটা যৌক্তিক জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। কূটনীতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে চীনকে অবশ্যই সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, এবং তাদের ফ্রন্টলাইন সেনাদের জরুরি পরিস্থিতিতে পদক্ষেপ নেয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে, এবং যে কোন সময় লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

এটা প্রমাণিত যে, ভারতের জাতীয়তাবাদী শক্তি চাপের মুখে নত হয়, কিন্তু তাদের বুঝিয়ে কোন কাজ হয় না। তাদের আরেকটি ব্যর্থতার শিক্ষা দরকার যাতে তারা বিশ্বাস করতে পারে যে, দীর্ঘমেয়াদি সীমান্ত শান্তির জন্য চীনের আকাঙ্ক্ষা কোন দুর্বলতা নয়। তাছাড়া, তাদের নিজেদের সীমাবদ্ধতাটাও তাদের বোঝা উচিত। চীনের জিডিপি তাদের চেয়ে পাঁচগুণ বড়, চীনের প্রতিরক্ষা বাজেট তাদের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বড়। ভারতের জাতীয়তাবাদীদের এটা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে।

চীনা পক্ষ দাবি জানিয়েছে যাতে সীমানা লঙ্ঘনকারী ভারতীয় সেনাদের শর্তহীনভাবে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ভারত যদি এটা মেনে না নেয়, আমরা বরং সীমান্ত উত্তেজনা জিইয়ে রাখবো। যেখানে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে সঙ্ঘাত হয়েছে, সেটা অনেক উঁচু জায়গা। সেখানে বড় ধরনের সেনা সমাগম ঘটানো দুই দেশের জন্যই কঠিন। তাই, শক্তি আর ইচ্ছা প্রদর্শনের মহড়া তাহলে শুরু হোক।

কোন যুদ্ধ না হলে, দুই পক্ষই শীতকালে লজিস্টিক্সের প্রতিযোগিতায় নামবে। গালওয়ান উপত্যকায় সঙ্ঘাতের সময় ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। এদের বেশির ভাগই আহত হওয়ার পর ঠাণ্ডায় জমে মারা গেছে। ভারতীয়দের লজিস্টিকসের দুর্বলতা এখানেই ফুটে ওঠে।

উঁচু এলাকাতে বড় সংখ্যাক সেনা সমাগমের ক্ষমতা ভারতের নেই। এর অর্থ হলো বহু ভারতীয় সেনা হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা আর অনিয়ন্ত্রিত মহামারীর হুমকিতে পড়বে। ভারতীয় সেনাদের লজিস্টিকসকে চীনের পিপলস লিবারেশান আর্মির (পিএলএ) সাথে তুলনা করা চলে না।

ভারতীয় সেনারা যদি পিএলএ’র দিকে গুলি ছুড়ে এবং যুদ্ধের উসকানি দেয়, তাহলে সঙ্ঘাত দ্রুত লড়াইয়ে রূপ নেবে। ভারত প্যাংগং সো লেকের দক্ষিণ উপকূলে কমান্ডিং অবস্থানে থাক, বা সেখানে তারা ফরাসী রাফাল বিমান মোতায়েন করুক, সব কিছুই তখন অর্থহীন হয়ে যাবে। পিএলএ দ্রুত ভারতীয় সেনাদের উপর আঘাত হানবে এবং তারা সবাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

ভারতের মর্যাদাকে সবসময় সম্মান করে এসেছে চীন। ভারতের জাতীয়তাবাদী এটাকে সুবিধা হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। তারা নিজেদের অবস্থা ভুলে গেছে। এবার সবকিছু টেবিলে রাখা দরকার। ভারত যদি শান্তি চায়, চীন আর ভারতের উচিত হবে ১৯৫৯ সালের ৭ নভেম্বরের এলএসি মেনে চলা। ভারত যদি যুদ্ধ চায়, চীন সেটা দিতে বাধ্য থাকবে। দেখা যাক, কোন দেশ টিকে থাকতে পারে।

ভারতের উচিত বিশ্ব আর চীনের দিকে ভালো করে দেখা। ইতিহাসেও ফিরে তাকানো উচিত তাদের। চীনকে মোকাবেলার ক্ষেত্রে ভারতের আত্মবিশ্বাসটা অস্বাভাবিক। তাদের যথেষ্ট শক্তি নেই। কট্টর জাতীয়তাবাদীদের হাতে ভারত যদি অপহৃত হয় এবং চীনের ব্যাপারে কঠোর নীতি অনুসরণ করে, তাহলে চড়া মূল্য দিতে হবে তাদের।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com