ফুসফুসের ক্যান্সারের উপসর্গ ও চিকিৎসা

0

ফুসফুসের ক্যান্সারের উপসর্গ নির্ভর করে মূলত ক্যান্সারের আকার ও অবস্থানের ওপর। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে বুকের এক্সরে পরীক্ষায়ই এ- রোগ ধরা পড়ে। এই পর্যায়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রোগীর ক্যান্সার ফুসফুসেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং অস্ত্রোপচারের সাহায্যে এর চিকিৎসা সম্ভব।

ফুসফুসে ক্যান্সারের সচরাচর উপসর্গ
ষ স্থায়ী কাশি ও শ্বাসকষ্ট, ষ বুক ব্যথা, ষ রক্তরঞ্জিত শ্লেষ্মা, ষ ওজন হ্রাস, ষ স্বরভঙ্গ।

আপনার বয়স যদি চল্লিশের উপরে হয় এবং উপরোক্ত এক বা একাধিক উপসর্গ যদি দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

রোগ নির্ণয়
ধূমপানের অভ্যাসসহ রোগের ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা, বুকের এক্সরে, ক্যান্সারাক্রান্ত কোষের উপস্থিতি দেখার জন্য শ্লেষ্মার অনুবিক্ষণিক পরীক্ষা, ব্রঙ্কোস্কোপি (ফুসফুসের বায়ুপথে ব্রঙ্কোস্কোপ নামক যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে এই পরীক্ষা করা হয়), বায়োপসি ও হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা, সিটি গাইডেড এফএনএসি করা হয়।

ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসা
ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসা তিন ভাবে করা যায়। সেটা নির্ভর করে ক্যান্সারের আকার, ব্যাপ্তি ও হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষার (কোষের ধরন) ওপর। কখনো কখনো একাধিক চিকিৎসাপদ্ধতি সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়ে থাকে।

১. সার্জারি বা শল্যচিকিৎসা : এতে আক্রান্ত ফুসফুসের অংশটি শরীর থেকে অপসারণ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ের ও ক্ষুদ্রাকৃতি ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে ফুসফুসের ক্যান্সার নিরাময়ে সম্ভাবনা সর্বাধিক।

২. রেডিওথেরাপি : এই পদ্ধতিতে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য উচ্চশক্তির বিকিরণ রশ্মি প্রয়োগ করা হয়। এ জন্য ব্যবহৃত হয় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এক্সরে মেশিন, লিনিয়ার এক্সিলেটার, কোবাল্ট ইউনিট ইত্যাদি যন্ত্র।

৩. কেমোথেরাপি : এই পদ্ধতির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় ক্যান্সারবিধ্বংসী ওষুধ। অধিকতর অগ্রসর বিশেষ ধরনের ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপির ব্যবহার করা হয়।

ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে করনীয় : ধূমপান করবে না। যদি ধূমপান না করেন, তবে আরম্ভ করবেন না। আর যদি ইতোমধ্যে শুরু করে থাকেন তাহালে এখনি বন্ধ করুন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এক্সরে করান (অধিক মাত্রার ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে এক বছর অন্তর অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)।

ধূমপান বর্জন করবেন কীভাবে : একটি তারিখ নির্ধারণ করে সেই তারিখ থেকে চিরতরে ধূমপান বন্ধ করুন। দু-তিন সপ্তাহের ভেতর ধূমপানের মাত্রা কমিয়ে আনুন এবং এরপরে চিরতরে বন্ধ করুন।

ধূমপান বর্জনে ইচ্ছা শক্তি গড়ে তুলুন
ষ কখনো সাথে সিগারেট রাখবেন না। ধূমপায়ীদের বর্জন করুন। দিনের সর্বাধিক ‘উপভোগ্য’ সিগারেটগুলো যেমন রাতের খাবারের পরে, চা বা কফির পরে বর্জন করুন।
ষ দৈনন্দিন কার্যসূচিতে পরিবর্তন আনুন। এমন কিছু করুন যাতে হাতের ব্যবহার হয় অথবা পায়ের ব্যায়াম (যেমন- হাঁটাহাঁটি, জগিং ইত্যাদি) হয়।
ষ বেশী করে পানি পান করুন এবং তাজা ফলমূল ও শাক-সবজি, গাজর খান। তবে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করবেন না
ষ অন্যদের জানতে দিন যে, আপনি ধূমপান বর্জনের চেষ্টা করছেন।
ষ ধূমপান ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে বন্ধুদের সাথে বাজি ধরুন- এই চ্যালেঞ্জ আপনার জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে।
ষ ধূমপান বর্জনের ফলে বেঁচে যাওয়া অর্থ সঞ্চয় করুন।
ষ ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা আপনার জীবন বাঁচাতে পারে।
ষ প্রাণঘাতী ফুসফুসের ক্যান্সার হতে নিজেকে রক্ষা করুন।

আপনি যদি ধূমপায়ী হন এখনি ধূমপান ছেড়ে দিন। আপনি যদি অধূমপায়ী হন- ভবিষ্যতে কখনো ধূমপান করবেন না।
ক্যান্সারের সার্বিক প্রতিরোধ, দ্রুত ও সঠিক রোগ নির্ণয়ে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে মারণব্যাধি ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসুন।

লেখক : টিউমার ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, মেডিকেল অনকোলজি, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, শেরে-বাংলা নগর, ঢাকা

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com