#গল্প #দীর্ঘযাত্রা #পর্ব ২

0

কালো রঙের এক্সট্রেইল জীপ থেকে গভীর রাতে “স্মিত এন্ড উইসন” পয়েন্ট ৩৮০ সেমি অটোমেটিক পিস্তল হাতে তার চারজন অস্ত্রধারী ঘিরে ধরেছে মসজিদের সিঁড়িতে স্থান নেয়া পাগলীকে! ওদের মোভমেন্ট এবং এটিচিউড সব কিছুতেই প্রফেশনালিজম সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান! পাগলী ওদের হঠাৎ আক্রমণের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না । একেবারেই হচকিত হয়ে যায় ওদের উপস্থিতিতে। – এই তোরে কে এখানে পাঠাইছে ? – একটা পাগলীরে মারতে খেলনা পিস্তল নিয়ে আসতে হয় নাকি ! – এই কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবি না , এই গুলো খেলনা পিস্তল না এটা তুই ভালো করেই জানিস, আগে বল কে তোরে পাঠাইছে! – পাগল ছাগলের আবার পাঠানোর মানুষ থাকে নাকি, যেইখানে রাইত সেই খানে কাইত – ঐ এই মা**** একটা ছেচা দে , দেখবি সুরসুর করে সব কথা বলে দিবে – ঐ হারামজাদা, এই টা ভদ্রলোকের পাড়া, এর নাম সাগরদীঘির পাড় । এখানে যদি চিল্লানো দিলে সামনের দুই ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে শতশত মানুষ বের হয়ে আসবে ! ওদের অজান্তেই “স্পীচ লোকেটর” স্টার্ট করে দিয়েছে পাগলী। মসজিদের রেলিং এ ফিক্সড করা ছিল ওটা। সিঁড়ি থেকে পা পিছলে উল্টে পড়ে যাওয়া থেকে আটকানোর ছলে বাম হাত দিয়ে ওটার সুইচ স্পর্শ করে সে। – চুপ কর বেটি, তোর চিল্লাচিল্লি শুরু করার আগেই গুলি করে উড়িয়ে দিব – ওই সামনে দেখতে পাচ্ছেন , “আপন টাওয়ার” একই নামে দুটি বিল্ডিং আছে ! ওটাতে কয়টা ফ্যামিলি বাস করে জানেন ! শুধু এক চিৎকারে কতজন বেরিয়ে আসবে …… – বস এই মেয়ে তো সব “লোকেশন ইন্ডিকেট” করে কথা বলছে। ওর কারেন্ট স্ট্যাটাস নির্ঘাত কারো কাছে কনফার্ম হয়ে গেছে! – বলিস কি ! সত্যিই তো ! এই মেয়ে, একটা শব্দ করলে মনে রাখবি ওটাই তোর জীবনের শেষ মুহূর্ত! ঐ ওর হাতে কোন মোবাইল অন করা কি না দেখো! হ্যাঁ, হাতে “পাম গ্রীপ” সাইজের চাইনিজ মোবাইল অন করাই ছিল । এক ঝটকায় ওটা কেড়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী সাগর দীঘি খালে ফেলে দিল ওটা। তারপর একজন মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ধরে বাকি দুজন দু হাতে ধরে জোর করে জীপে টেনে তুলে ওকে! আরেকজন গিয়ে এর বিশাল ব্যাগ টেনে নিয়ে আসে । দু মিনিটের মধ্যেই পাগলীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায় মসজিদের সিঁড়ি থেকে। যাওয়ার আগে পাগলী রেলিং থেকে খুলে বাম হাতের কারসাজিতে কোমরের পেছনের দিকের কাপড়ে গুজে নিয়েছে ‘জিপিএস স্পীচ লোকেটর’ । তা অগোচরেই রইলো সবার। সিলেট শহরের একদম পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত আবাসিক এলাকা সাগর দীঘির পাড় । একমাত্র রেডিও স্টেশন মীরের ময়দান থেকে বাগবাড়ি এলাকার‌ কানেক্টিং রোড‌ চলে গেছে এই পাড়ার ভেতর দিয়ে। দীর্ঘ সর্পিল বাঁক নিয়ে রোড ঘেঁষে বয়ে চলেছে সাগর দীঘি খাল ! স্থানে স্থানে খালের উপর ঝুলে আছে দুই পাশের বিশাল বিশাল বৃক্ষরাজির শাখা সমূহকে ঘিরে বেড়ে উঠা ঘন লতাযুক্ত ঝোপঝাড়। এই ঘন ঝোপঝাড় অনেক স্থানে পূরো খালের অস্তিত্বকেই গ্রাস করে রেখেছে। এই খালের এক পাড়ে মসজিদ ওপর পাড়ে ব্লু বার্ড স্কুলের সিনিয়র সেকশন। স্কুল ছুটি হলে ছেলে মেয়েরা ব্রীজের উপর দিয়েই রাস্তায় আসে । সেই খালের উপরেই ভাসছে বিশেষ ভাবে তৈরি আরেকটা জিপিএস “সিগন্যাল এক্সটেন্ডার” ডিভাইস, যা মোবাইল ভেবে ওরা পানিতে ফেলে দিয়েছে। এটার বিশেষত্ব হলো, “পাগলীর” সাথে থাকা ডিভাইসের সাথে সব সময় কম্যুনিকেট করে সেন্ট্রাল এন্টেনায় সব সময় সিগন্যাল ট্রান্সমিট করবে! আর এটা হাতে পেয়ে গেলে ল্যাপটপে কানেক্ট করলেই সরাসরি পেয়ারড “স্পীচ লোকেটর ডিভাইস” ট্র্যাক করা যাবে। আর সেন্ট্রাল এন্টেনা এবং সার্ভারের উপর ডিপেন্ড করতে হবে না। রাত সাড়ে বারোটার সময় এই সাগর দীঘিরপাড় রোডের মসজিদের সামনে থেকে একটা মেয়েকে চারজন সন্ত্রাসী তুলে নিয়ে গেল, আর ঐ মেয়ের মুখ থেকে একটা টু শব্দও বের হলো না! নাকি মেয়েটা প্রথমে বাঁধা দিয়ে পরে আবার স্বেচ্ছায় ই ওদের সাথে চলে গেছে! আমার তো মনে হয় না ! কারন এর অাগে কেউ ওকে কোন আঘাত করতে চেষ্টা করলেই এমন জোরে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে যে, আমরা চারতলার উপর থেকেও পরিস্কার শুনতে পাই। নাকি ‌ওদের হাতে এমন অস্ত্র আছে , যেগুলোর ভয়াবহতা সম্পর্কে ঐ মেয়ের ও স্পষ্ট ধারণা আছে। যাক আমার কি ! পাগল এখানে থাকলেই কি আর না থাকলেই কি ! বরং বাসার সামনে এরকম একটা অপরিস্কার , বিশ্রী , উন্মাদ না থাকলেই বেশি স্বস্তি। আর ড্রাইভার গুলো এখানে ঘোরাঘুরি করার চেয়ে ঐ এক জায়গায় বসে থাকলেই বেশি সুবিধা ! যে কোন প্রয়োজনে স্বল্প সময়েই ওদের খুঁজে পাওয়া যাবে! কিন্তু এই পাগলির সুত্র ধরে আমাকে ও যে নাকানিচুবানি খেতে হবে তা কে জানতো ! #### ইন্সপেক্টর সাইফ, সিলেট পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো ওব ইনভেস্টিগেশন) এর আইটি শাখার নতুন চীফ ! হঠাৎ সাগরদীঘির পাড় থেকে এসওএস সিগন্যাল পেয়ে সোজা হয়ে আসনে বসলেন উনি। সিগন্যাল পাঠাচ্ছে পুলিশ বিভাগে গত দুই মাস আগে মালয়েশিয়া থেকে আমদানিকৃত সম্পূর্ণ নতুন ভাবে সংযোজন করা “ভয়েস লোকেটর ডিভাইস” থেকে। একটি মেয়ের গলা ভেসে আসছে, সে “সাগর দীঘিরপাড় মসজিদ” ও “আপন টাওয়ার” এর কথা মেসেজ দিচ্ছে। দ্রুত তিনি সিকিউরিটি ডিভিশনের বিশেষ ভাবে তৈরি “গুগল এসএফ ম্যাপ” অন করে ওর পজিশন কনফার্ম করলেন। ওর চার পাশে আরও চার চারটি একিউসড বারে বারে পজিশন বদল করছে। হঠাৎ করেই পেয়ারড ডিভাইস ঘটনাস্থলে রেখে মোভ করতে শুরু করেছে সিগন্যালিং ডিভাইস। ম্যাপে ফোরটি টু সিক্সটি কিলোমিটার পার আওয়ার স্পীডে এয়ারপোর্ট রোড ধরে এগিয়ে যাচ্ছে সিগন্যালিং পারসন সহ চার একিউসড। অভিজ্ঞ অফিসার ইন্সপেক্টর সাইফ মূহুর্তের মধ্যেই এয়ার পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল আলম কে ডিটেইলস সেন্ড করে দিলেন। ওদিকে সিগন্যাল এক্সটেন্ডার ডিভাইস, যা এই মুহূর্তে সাগর দীঘিরপাড় খালের উপর ভাসছে, তা উদ্ধারকল্পে কোতোয়ালী থানা থেকে রওয়ানা দিয়েছে আইটি স্পেশালিষ্ট আরেকটি টিম। #### দুই দিকে চা বাগান সমৃদ্ধ পাহাড় ঘেরা সুদৃশ্য এয়ার পোর্ট রোড! বিমান পথে সিলেটে প্রবেশ করলে যে কারোরই নজর কাড়ে এর সৌন্দর্য। সিলেট বেড়াতে আসা অনেক টুরিষ্ট আবার এই রোড দিয়ে যাবার সময় রাস্তা থেকে গাড়ি নামিয়ে সাইড করে দুই দিকের চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করতে করতেই ঘন্টা খানেক কাটিয়ে দেন। প্রথম দিকে চা বাগান কর্তৃপক্ষ খুব স্ট্রিক্ট ছিলেন কোন ট্যুরিস্ট অনুপ্রবেশের ব্যপারে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের অনুরোধে কিছুটা শিথিল হয়েছে তাদের কড়াকড়ি। এয়ারপোর্ট রোডের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর এরিয়াই হলো এটা, যেখানে হাতের ডান দিকে “মালনীছড়া” আর বাম দিকে “আলীবাহার” চা বাগান অবস্থিত। দুটি চা বাগানই সূউচ্চ পাহাড়ের উপর থেকে থরে থরে সবুজ সিঁড়ির মতো ঢালু হয়ে , অপরুপ সৌন্দর্য ছড়িয়ে , রাস্তার পাশের নীচু জায়গায় এসে মিলিত হয়েছে। চা বাগানের সীমানা নির্ধারক রেলিং এর উপর দিয়ে হাত বাড়ালেই “দুটি পাতা একটি কুঁড়ির” স্পর্শ পাওয়া যায়। কিছুদিন আগেও এটাই ছিল পর্যটকদের কাছে “সর্বোচ্চ” পাওয়া । কিন্তু এখন দুই চা বাগানেই সিলেটে বেড়াতে আসা ট্যুরিস্টদের জন্য রাস্তা ঘেঁষে আলাদা গেট তৈরি করে দেয়া হয়েছে, যা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর চা বাগানের মাঝ খান দিয়ে মাটি কেটে তৈরি করে দেয়া হয়েছে পাহাড়ি রাস্তা। যার উপর দিয়ে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকরা বেয়ে বেয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে পারছে। এই ব্যাপারে “মালনীছড়া” চা বাগান আবার এক ধাপ এগিয়ে। বাগানের রাস্তা থেকে আকাশ ছোঁয়া পাহাড়ের গায়ে কংক্রিটের সিঁড়ি তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এই সিঁড়ি রাস্তার পাশের গেইট পার হবার পর পাহাড়ের পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে একেবারে চূড়ার ঠিক আগে আগেই রেলিং ঘেরা একটি প্লাটফর্মে গিয়ে শেষ হয়েছে । এই প্লাটফর্মে প্রায় দুই তিন শত লোকের স্থান‌ হয়।‌ পাহাড়, চা বাগান ও সেলফী বিলাসী লোকজনের ভীড়ে সব সময় মুখরিত থাকে মালনীছড়া চা বাগানের এই অংশটি। তবে চুড়ায় উঠার জন্য কোন রাস্তা তৈরি করে দেয়া হয়নি । তাই পাহাড় পার হয়ে যে বিশাল ঘন জঙ্গল আছে , তা অনেকেরই অজানা।
“পাগলী” খ্যাত সন্দেহজনক মেয়েটিকে নিয়ে ২০১৯ মডেলের নিশান এক্সট্রেইল এর কালো রঙের জীপ টি দ্রুত সুবিদবাজার – আম্বরখানা রোড পার হয়ে হাতের বাম দিকে মোড় নিয়ে এয়ার পোর্ট রোডে উঠে গেল। তাদের লক্ষ্য কোথায় এখন ও ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কোনও জনমানব অথবা কোন যানবাহন নেই রাস্তার উপর। ড্রাইভার জীপের স্পীড বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বারে বারে! কিন্তু একটু পরপরই সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা উন্নয়ন কার্যক্রম, ভূ গর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইন টানা ইত্যাদির কারণে স্থানে স্থানে ইট , সুড়কি, ভাঙ্গা কনক্রিটের টুকরো, বালি এসবের স্তুপাকার অবস্থানে আরও জোরে এগুনো যাচ্ছে না সামনে। গতিবেগ চল্লিশ ই অতিক্রম করার জো নেই। কোনও মতে পীর মহল্লা গেইট পার হবার পরেই ভিউ মীররে দেখা গেল পেট্রোল পুলিশের গাড়ির হেডলাইটের আলো। একটু স্পীড বাড়িয়ে সামনে এগিয়ে দেখলো ঐটাও সমান‌ গতিতে সামনে এগিয়ে আসছে। আর কোন ও রিস্ক নেয়া যাবে না ! এস্কেলেটরের উপর সজোরে চাপ প্রয়োগ করে ড্রাইভার স্পীড মিটারের কাটা একশোতে তুলে নিল নিমেষেই! এর পরেও পিছু ছাড়ার নাম নেই পুলিশ কারের। – শালার! পুলিশের হাতে এত ভালো গাড়ি দেয়া হয় নাকি আজকাল ! – হ্যাঁ তাইতো দেখছি , আমাদের মেঘালয়ের পুলিশের গাড়ির স্পিড তো কখনও এত হয় না। – কিন্তু বস, পুলিশ কি করে এত সহজে আমাদের ট্র্যাক করে ‌ ফেলেছে? এই মেয়ের কাছে কোন ট্র্যাকার নাই তো ? – থাকত পারে , চালা খইরা ডিএকটিভেট খরি লাও! অর্ধ অহমিয়া, অর্ধেক বাংলা মিশ্রিত কন্ঠে এদেশীয় মেট রাজুকে নির্দেশ দিল মেঘালয়ের প্রবীর যোধা ।

– ঐ বেটি , কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস ট্র্যাকার! ভালো চাস তো

দিয়ে দে, নইলে সব খুলে খুঁজে নেব !

– ঐ হারামজাদা, মেয়ে মানুষ দেখলেই খালি ধরতে ইচ্ছে হয়

নাকি?

– চুপ , একদম চুপ, মেয়ে মানুষ ধরতে আমরা এত রিস্ক নিয়ে আসি নাই। আর মেয়ে ধরতে হলে তোর মত নোংরা, বিশ্রী একটাপাগলীকে ধরতে আসতাম না! ভালোয় ভালোয় ট্র্যাকার টা দিয়ে দে , না হয় ……..

ওর জবাবের অপেক্ষা না করেই পাগলীর গায়ে লুকিয়ে রাখা ডিভাইস খুঁজতে শুরু করে রাজু । এই ব্যাপারে এক্সপার্ট রাজুর একমিনিট ও লাগে নাই পাগলীর কোমরের পেছনের দিকের কাপড়ে গুজে রাখা ট্র্যাকিং ডিভাইসটি খুঁজে বের করতে।

– ছি ছি ! এত অপরিস্কার ! ডেটল দিয়ে হাত ধুয়ে হইবো

আমার ! বস, এই হারামি মেয়ে বড় ডেঞ্জারাস! তাড়াতাড়ি ওর

মুখে টেপ লাগিয়ে দেন !

ডিভাইসটি বুটের নীচে গুড়িয়ে দিল প্রবীর। আর সাথে সাথেই ঐ মেয়ের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো পিআইবিসিলেটের আইটি সেকশনের । তবে ভাগ্য ভালো যে, ডিভাইস নষ্ট হবার আগেই ওদের পিছু নিয়েছে এয়ার পোর্ট থানার দুর্ধর্ষ এসআই সুমন রায়হান ও তার টিম।

জীপের স্পীড বাড়িয়ে প্রায় মাইলখানেক পেছনে ফেলে এসেছ পুলিশের গাড়িকে। সাময়িক স্বস্তিতে থাকলে ও পরবর্তী বাঁধারটেনশনে আছে এদেশীয় ড্রাইভার রাসেল। একশো ত্রিশ পঁয়ত্রিশে গতি বাড়িয়ে ও লাভ হবেনা যদি সামনে পুলিশের রোডব্লকথাকে। ঠিক দু মিনিটের মাথায়ই সে রকম রোড ব্লকের সম্মূখীন হলো তারা । সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের দুটি মিতসুবিসী L- 200 টহল পিক আপ ভ্যান আড়াআড়ি ভাবে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। আর রাস্তার দুই পাশে পজিশন নিয়ে আছেপুলিশের সদস্যরা।

পেছনে ধাওয়া করা পুলিশের কার, সামনে ব্লক করে রাখা দুটি পিক আপ ভ্যান সহ পজিশন নেয়া পুলিশ, এবং দুই দিকেপাহাড়ঘেরা রাস্তা থেকে আর কোন সাবরোড নেই পালিয়ে যাওয়ার! এই অবস্থায় কি করবে এক্সট্রেইল চালক রাসেল। সে মনেমনে হিসেব করেছে তার গাড়ির ওজন এবং স্পীড, সব মিলিয়ে ভরবেগ কত হবে, আর ব্লক করে রাখা মিতসুবিসী এল ২০০ এরওয়েট কত হবে। স্বভাবতই সে এগিয়ে আছে ! সেকেন্ডের মধ্যেই রাসেল ভয়ঙ্কর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, বাম সাইডের পূরনোভ্যানটিকে উড়িয়ে সে সামনে চলে যাবে । তবে ধাক্কা দেয়ার পর বিপরীত প্রতিক্রিয়ার সময় সে যদি মাইক্রো সেকেন্ডের ভেতরেইজীপের উপরে নিজের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, তাহলে অবশ্যই পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যাবে তারদ্রুতগামী জীপ।‌ ফলাফল নিশ্চিত মৃত্যু!

“ডু অর ডাই”! গাড়ির বাকিরা এখন ড্রাইভারের কর্মদক্ষতার উপরেই নির্ভরশীল। আর কোন গতি না পেয়ে রুদ্ধশ্বাসে নিজেদেরজীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের প্রহর গুনছে ওরা কজন। এস আই সাজ্জাদুল আলমের নেতৃত্বে রোড ব্লক কারী পুলিশ সদস্যরা এখনওবুঝে উঠতে পারছে না জীপের ড্রাইভারের মোটিভ ! এখনোও তারা কল্পনা করতে পারেন নি , জীপের ড্রাইভার তাদের গাড়িকেঠেলে দিয়ে রাস্তা পার হয়ে যেতে পারে !

প্রবল বেগে এগিয়ে আসছে নিশান এক্সট্রেইল! থামার নাম নিশানা ও নেই। আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড , বামদিকের ভ্যান লক্ষ্যকরেই ছুটে চলেছে দ্রুতগামী জীপ ।এক সেকেন্ড আগে ব্যপারটা বুঝতে পেরে দ্রুত প্রানপনে রাস্তার নীচে ডাইভ দিয়ে দূর্ঘটনার হাতথেকে রক্ষা পান পুলিশ সদস্যরা। প্রথম ধাক্কাতেই প্রচন্ড শব্দে উল্টে যায় বাম দিকের পুলিশ পিকআপ । কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায়নিশান এক্সট্রেইল জীপ ভয়ঙ্কর ভাবে কাত হয়ে দু চাকার উপর চলতে গিয়ে এই মুহূর্তেই পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে থাকাবৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যাবে। এত গতিতে কনক্রিটের তৈরি পিলারের সাথে ধাক্কা খেলে শূধু জীপটাই দুমড়েমুচড়ে যাবে না, ভেতরের যাত্রীদের দেহ ও ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর সেকেন্ডের কয়েক ভাগের এক ভাগ মাত্র, সামনের নিশ্চিতমৃত্যু আর এড়াতে পারবেনা কেউ ই !

(চলবে)

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com