আওয়ামী লীগের এমপি ক্রিকেটার দুর্জয়ের হাতে আলাদিনের চেরাগ

0

ছিলেন একজন ক্রিকেটার। এমপি হওয়ার পর অদৃশ্য জাদুর ছোঁয়ায় সেই নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের হাতে চলে আসে আলাদিনের চেরাগ। রাতারাতি গড়ে ওঠে অঢেল সম্পদ আর প্রাচুর্য। এমনকি পাওয়ার প্ল্যান্টের মালিকও হয়েছেন তিনি। মালয়েশিয়ায় গড়ে তুলেছেন নানা রকম ব্যবসা-বাণিজ্য। এসব নিয়ে দুর্জয়ের নির্বাচনী এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা মানুষের মুখে মুখে। তাকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টির আরেকটি কারণ হচ্ছে, পাপিয়াকান্ডে তার নাম উঠে আসা।

মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নাঈমুর রহমান দুর্জয় তার নির্বাচনী এলাকাকেও ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত করেছেন।

এলাকার যাবতীয় ঠিকাদারি, সব ধরনের নিয়োগ, বালুমহাল জবরদখল, সরকারি খাসজমি ও খাল-নালা ভরাট করে পজেশন আকারে কেনাবেচা, নদ-নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজিংসহ বেপরোয়া মাটি বাণিজ্যের সবকিছুই এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন দুর্জয়। এ ছাড়া আরিচা ও পাটুরিয়াঘাটে ঝুঁকিপূর্ণ স্পিডবোটের অবৈধ বাণিজ্যও গড়ে তুলেছেন তিনি। দলের নিজস্ব ক্যাডার ও আস্থাভাজন নেতাকর্মীদের মাধ্যমেই তার প্রতিটি ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে। ফলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতারা এখন এমপির ব্যবসাকেন্দ্রের ম্যানেজার, ক্যাশিয়ার, সুপারভাইজার হিসেবেই বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছেন। দলীয় কর্মকা-ে তৎপরতা না থাকলেও ব্যবসায়িক কাজের ছোটাছুটিতে ঘাম ঝরে তাদের। দুর্জয়ের এসব কর্মকা- নিয়ে অনেক দিন ধরেই দলের ভেতরে-বাইরে নানা বিতর্ক, নানা সমালোচনা চলছে। সৃষ্টি হয়েছে চরম অসন্তোষের। কিন্তু কোনো কিছুতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তার। চাকরির আয়ে জীবন চালানো দুর্জয় হঠাৎ কীভাবে পাওয়ার প্ল্যান্টের মালিক হলেন? কোথায় পেলেন এত টাকা?

তিন উপজেলার সব ধরনের ঠিকাদারি তার নিয়ন্ত্রিত দল-উপদলের নেতাদের খুশি না করে ঠিকাদারি করার দুঃসাহস রাখেন না কেউ। হাটবাজার ইজারা নেওয়া, খেয়াঘাট বরাদ্দ পাওয়া, খাসজমি ইজারা দেওয়া থেকে শুরু করে ব্রিক ফিল্ডে মাটি সাপ্লাই দেওয়ার ক্ষেত্রেও নির্ধারিত চাঁদা পরিশোধ করেই পা ফেলতে হয়। মাটি খননের নিষিদ্ধ এক্সকেভেটর ভেকু মেশিন চলে শতাধিক। হাজার হাজার একর ফসলি জমি ধ্বংস করে রাত-দিন মাটি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ড্রেজিং চলছে অবিরাম। স্পিডবোট চলছে কাজীরহাট রুটে চরম ঝুঁকি নিয়ে। এসব ক্ষেত্রে কেবল এমপির নির্দেশনাকে পুঁজি করেই সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে, আইনকানুনের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।

সংসদীয় এলাকার তিন উপজেলায় টিআর, কাবিখা ও সোলার প্যানেল বরাদ্দে অনিয়ম-দুর্নীতির শেষ নেই। চলমান করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের বরাদ্দ ত্রাণ ও নগদ টাকা বিতরণ নিয়েও রয়েছে অন্তহীন অভিযোগ। এলাকায় আছেন এমপির তিন ‘খলিফা’, যারা প্রতিটি বরাদ্দ থেকে পার্সেন্টেজ আদায় করেন। তারা টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না। নিয়োগ-বাণিজ্য ও উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লাখ লাখ টাকা তিন খলিফার হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে এমপি পরিবারে।

এলাকার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, সাংসদ নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের পরিবারের সদস্যরাই গিলে খাচ্ছেন সবকিছু। এমপির চাচা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তায়েবুর রহমান টিপু, চাচাতো ভাই জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান জনি ও ছাত্রলীগ নেতা আব্বাসসহ কয়েকজনের হাতেই বন্দি এই নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন, দখলবাজি, খবরদারিত্ব। তাদের দাপুটে প্রভাব ও স্বেচ্ছাচারিতার কাছে পুরনো আওয়ামী লীগ নেতারা কোণঠাসা হয়ে আছেন। টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করতে পারেন না কেউ।

দীর্ঘ সময়ের পোড় খাওয়া জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কয়েক বছর আগেও মানিকগঞ্জ-১ আসনভুক্ত ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলায় শক্ত দলীয় অবস্থান ছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়াও ছিল। তখন পর্যন্ত ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাদের মধ্যে অপরাধের ছায়া ছিল না। অথচ সেই নেতাকর্মীদের নামে এখন চাঁদাবাজি, দখলবাজি, বখরাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকা-ের দেদার অভিযোগ উঠছে।

দুর্জয়ের গলার কাঁটা ‘পাপিয়াকান্ড’ : দুর্জয় এমপির নামের সঙ্গে ‘পাপিয়াকান্ড’ জড়িয়ে থাকার বিষয়টি তার জন্য এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানাভাবে চেষ্টা করেও এমপি ও তার ঘনিষ্ঠরা দুর্জয়ের নাম থেকে পাপিয়াকে হটিয়ে দিতে পারছেন না; বরং যৌথ নামটি রীতিমতো স্থায়িত্ব পেতে বসেছে। পাপিয়াকা-ের কয়েক মাস অতিবাহিত হয়েছে। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে করোনার মহাদুর্যোগ। তারপরও মানিকগঞ্জবাসীর মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে দুর্জয়-পাপিয়ার নানা মুখরোচক কাহিনী। তবে এমপি দুর্জয়ের সঙ্গে পাপিয়ার নাম যুক্ত করে কেউ কিছু মন্তব্য করলেই তার আর রেহাই নেই। ফেইসবুকে উভয়ের ছবি পোস্ট করলেই তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু ও জেলহাজতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবুও পাপিয়াকা-ের প্রচারণা থেকে কোনোভাবেই রেহাই পাচ্ছেন না দুর্জয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com