অরুণাচলে চীনের রেলপথ নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা

0

কাশ্মীরের লাদাখ সীমান্তের গালওয়ান উপত্যকা নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও দুই দেশ ক্রমশ সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

১৫ জুন ২৩ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। শত শত ট্রাক, বুলডোজার নিয়ে লাদাখ সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চীনা সামরিক বাহিনী। উপগ্রহ চিত্রে এমন দৃশ্য ধরা পড়েছে। ভারতও সীমান্তে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে।

লাদাখে যুদ্ধবিমান ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে ভারত। যুদ্ধনীতির ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন এনেছে ভারত।

চীন সীমান্তে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে কমান্ডারদের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। গালওয়ান উত্তেজনার মধ্যেই ভারতের অরুণাচল প্রদেশের গা ঘেঁষে চীন রেলপথ নির্মাণ শুরু করেছে।

এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লাদাখ সংঘাত নিয়ে দিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। খবর এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস, রয়টার্স ও দূরদর্শন নিউজের।

ভারত সীমান্তের দিকে শত শত ট্রাক, বুলডোজার ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে যুদ্ধ সাজে এগিয়ে আসছে চীনা বাহিনী। ৯ জুন গালওয়ান উপত্যকার উপগ্রহের ছবি থেকে ১৬ জুনের ছবি অনেকটাই আলাদা।

উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়- সীমান্তের কাছে চীনের বড় সড় সামরিক প্রস্তুতি চলছে। এলএসি বরাবর চীনা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ১২৭টি গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এলাকাটি এলএসি থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভারত সীমান্ত থেকে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে পুরোদস্তুর বিমান ঘাঁটিও গড়ে তুলেছে চীন।

লাদাখের প্যাঙগঙ লেকের ২০০ কিলোমিটার দূরে তিব্বতের ‘গাড়ি কুনসা’য় ১০ বছর আগে বিমানবন্দর নির্মাণ করে চীন। বেইজিং তখন জানিয়েছিল অসামরিক বিমান পরিবহনের জন্য বিমানবন্দরটি তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে- এক মাসে এ বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের অনেক বেড়ে গেছে। সেখানে রীতিমতো বিমান ঘাঁটি বানিয়ে ফেলা হয়েছে।

ভারতের সঙ্গে প্রায় ৪ হাজার ৩৮৮ কিমি. এলাকাজুড়ে সীমানা রয়েছে চীনের। এর আগে বহুবার সীমান্ত নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছে ভারত ও চীন। অরুণাচল সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে চীনের রেলপথ নির্মাণ নিয়ে নতুন মাথাব্যথা তৈরি হয়েছে ভারতের। তিব্বতের ইয়ারলুং তাসানজোংপ এবং সিয়াং অঞ্চলের মধ্যে রেলব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে।

এর আগে অনেকবার অরুণাচল প্রদেশকে চীন দক্ষিণ তিব্বতের অংশ বলে দাবি করে এসেছে। শুধু তাই নয়, গত বছর ডিসেম্বরে অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সফরের তীব্র বিরোধিতা করেছিল চীন।

অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে ভারত ও চীনের সীমান্ত সংঘাত মেটাতে প্রায় ২১ দফা বৈঠক হয়েছে।

অরুণাচল সীমান্ত পর্যন্ত চীনের রেললাইন নির্মাণ নতুন করে ভারত-চীন মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করছে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক মহলের।

চীন সীমান্তে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে আর বিধিনিষেধ নেই : প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা কমান্ডারদের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। এ মাধ্যমে চীন সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে আর কোনো বিধিনিষেধ রইল না। একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা জানান, নিয়ম পরিবর্তন হওয়ার ফলে নিয়ন্ত্রণরেখায় আর ভারতীয় কমান্ডারদের হাত বাঁধা থাকবে না।

তারা যেটা ঠিক মনে করবেন, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তিনি বলেন, খুব প্রয়োজন পড়লে হাতে যা আছে তার সবই ব্যবহার করতে পারবেন জওয়ানরা।

ভারত-চীন উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করব -ট্রাম্প : লাদাখ সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতা করার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনাকালে প্রথম নির্বাচনী প্রচারণায় ওকলাহোমায় যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘এটা খুবই কঠিন পরিস্থিতি। আমরা ভারতের সঙ্গে কথা বলছি, চীনের সঙ্গেও কথা বলছি। তারা সেখানে বড় সমস্যায় পড়েছে।’

ভারত ও চীনের মধ্যকার বিরোধের পরিস্থিতি নিয়ে কী মূল্যায়ন আপনার?- এমন প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা সেখানে সংঘাতের জন্য এসেছে, দেখি কী হয়। আমরা চেষ্টা করব এ উত্তেজনা প্রশমন করতে।’

গালওয়ান ঘটনার পর থেকে গোটা ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের পক্ষেই কথা বলেছে। শীর্ষ মার্কিন সিনেটর মিচ ম্যাককনেল বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেন, ভারতের কিছু অঞ্চল দখল করতেই চীনা সেনাবাহিনী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পেছনে প্ররোচনা দিয়ে আসছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com