আমেরিকায় বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ দমনে ট্রাম্পের গুরুত্বারোপ

0

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বর্ণ বৈষম্য এবং সহিংসতার ইতিহাস বেশ পুরানো। দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই বলা যায় কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বর্ণ বৈষম্য চলে আসছে। নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য কৃষ্ণাঙ্গরা ব্যাপক প্রতিবাদ সংগ্রাম চালানোর পরেও পুলিশি নির্যাতনসহ বিচিত্র বৈষম্যের করুণ শিকার তারা।

গেল ২৫ মে আমেরিকার মিনিসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে ড্রেক শোয়িন নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা জর্জ ফ্লোয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গকে যেরকম পাশবিক কায়দায় হত্যা করেছে তা মার্কিন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বর্ণবাদ যে জেঁকে বসে আছে তারই প্রমাণ বহন করে। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সমগ্র আমেরিকাজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় ফ্লোয়েডের ঘাড়ে তার হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে দ্রুত মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। শোয়িনকে ২৯ মে’তে গ্রেফতার করা হলেও মাত্র ৫০০ ডলার মুচলেকায় জামিন দেওয়া হয়েছে। ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মি. হ্যারিস পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লোয়েড হত্যার সমালোচনায় বলেছেন: মার্কিন রাজপথ কৃষ্ণাঙ্গদের খুনে ঢেকে গেছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শত হুমকি ধমকি আর প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের ব্যাপক হুশিয়ারি উপেক্ষা করে উত্তেজিত মার্কিন জনতা সমগ্র আমেরিকায় ফ্লোয়েড হত্যাসহ বর্ণবাদ বিরোধী ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভ চলাকালে মার্কিন বর্ণবাদী নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকার অন্তত ২৫টি শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং জনগণের চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই প্রতিবাদ বিক্ষোভ এবং তাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ও মেয়রদেরকে বলেছেন বিক্ষোভ যাতে আরও শক্ত হাতে দমন করা হয়। ন্যাশনাল গার্ডকেও বিক্ষোভ দমনে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। বিক্ষোভকারীদেরকে সরকারি সম্পদ বিনষ্টকারী বলে আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প তাদের দীর্ঘ মেয়াদে আটক রাখার নির্দেশ জারির দাবি জানান। আদেশ অনুযায়ী বিক্ষোভ দমনে ন্যাশনাল গার্ড যেভাবে কঠোর অভিযান চালিয়েছে বিক্ষোভকারীদের ওপর ট্রাম্প তাতে খুশি হয়ে ওই বাহিনীকে অভিনন্দিত করে টুইটারে বার্তাও দিয়েছেন। আরও বলেছেন প্রথম রাতেই যদি মেয়রেরা ওই দমন অভিযান চালাতো তাহলে কোনো সমস্যাই হতো না। এসব আদেশ ও বার্তা দিয়ে ট্রাম্প মূলত পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন অভিযান চালানোর ব্যাপার সবুজ সংকেত দিয়েছেন। যদিও তিনি হয়তো ভাবেন নি যে এ ঘটনায় অবষ্যই সংঘর্ষের ঘটনা বেড়ে যাবে এবং হতাহতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে।

বিশেষজ্ঞমহল যদিও মনে করছেন একটি দেশের প্রেসিডেন্টের উচিত বিভিন্ন মত ও পথের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা, বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা নয়। তার ঠিক বিপরীতে ট্রাম্পের বর্ণবাদী চিন্তার ফলে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে সংঘর্ষের ঘটনা বেড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ আমেরিকায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সহমর্মিতা জানালেও বর্ণবাদী ট্রাম্পের টনক আদৌ নড়বে কিনা সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com