করোনা আতঙ্কের মধ্যেও চলছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বর্বরতা!

0

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ক্রমেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ করা হয়েছে। সরকারিভাবে ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে প্রতিষ্ঠান গুলো। এই ভাইরাসে সারাদেশে কমপক্ষে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও সরকারি ভবে মাত্র ৫ জন দেখানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সারাদেশে কয়েকশ মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যদিও সরকার মাত্র ৩৯ জনের হিসাব দিচ্ছে। বলা যায় পুরো দেশ এখন করোনা ভাইরাস আতঙ্কে কাপছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে থেমে নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগের বর্বরতা।

দেশের এই মহামারির সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে  ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ধর্ষণ, হত্যাচেষ্ঠা, গণপিটুুনিসহ নানা প্রতিহিংসা মূলক কর্মকাণ্ড। গতকাল কুমিল্লা মনোহরগঞ্জে  করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সচেতনতামূলক পোস্টারিং করার সময় ছাত্রশিবির মনোহরগঞ্জ উপজেলা পশ্চিম শাখার সভাপতি মোহাম্মদ ফাহাদ হোসেনকে  কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ হামলায় নেতৃত্ব দেয় মরিচা গ্রামের ছাত্রলীগ কর্মী মমিন ও যুবলীগ নেতা মোঃ সাজু (স্থানীয় ইউপি মেম্বার)। তাদের সাথে ছিল শাহাপুর গ্রামের ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী মো. ইউসুফ ও মো. বেলাল। দেশের এই ক্রান্তিকালে ছাত্রলীগের এই হিংস্র বর্বরতায় ছাত্রজনতা হতবাক ও ক্ষুব্ধ।

অন্যদিকে পাবনার সুজানগরে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়েছে ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে। জানা যায় ওই গৃহবধূ রবিবার সন্ধ্যায় সাঁথিয়া থেকে নিজের দুলাভাইয়ের সাথে সদর উপজেলার কোলাদীতে বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে, সুজানগর উপজেলায় চরভবানীপুর এলাকায় পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সুমন খানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পথরোধ করে। তারা গৃহবধূর দুলাভাইকে মারধর করে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে রাস্তার পাশের গমক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় সোমবার সকালে গৃহবধূ বাদী হয়ে পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সুমন খানসহ (২৩) পাঁচ জনের নাম উলে­খ করে সুজানগর থানায় মামলা করা হলে ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।

একই দিনে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় ১১ বছরের এক মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে সিংধা ইউনিয়নের সিংধা পশ্চিমপাড়া গ্রামের আবু তালেবের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানের (২৮) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রোববার রাতে ওই ছাত্রীর ভাই বাদী হয়ে মোস্তাফিজুর ও তাকে সহযোগিতার অভিযোগে মা ফাতেমা বেগমের বিরুদ্ধে বারহাট্টা থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ধর্ষকের মা ফাতেমা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হলেও গতকাল সোমবার পর্যন্ত ধর্ষককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এরপর টাঙ্গাইলে কলেজ শিক্ষিকাকে শ্লীলতাহানি করেছে ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি ও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা ও বাংলাদেশ বেতারের উপ-স্টেশন প্রকৌশলী আর অস্টেলিয়ায় পিএইচডিরত মো. এমদাদ হোসেনের স্ত্রী শামীমা ইয়াসমিন।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ২ মে নাগরপুর সরকারি কলেজে রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি উপজেলার প্রমোট শিক্ষক হোস্টেলে ৬ বছরের একমাত্র ছেলে আর এক রুমমেট নিয়ে বসবাস করছেন। বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাসে আতঙ্কে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তিনি ওই বাজারের বাঁশআলী নামের এক মুদি দোকান ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনেন। এরপর তিনি পাশের একটি দোকানে যান। তবে ওই দোকানে এ সময় কাউকে না দেখে তিনি অপেক্ষা করতে থাকেন। হঠাৎ মোটরসাইকেল নিয়ে মামুন নামে ওই দোকানে প্রবেশ করেন। এ সময় প্রভাষক তাকে জিজ্ঞাসা করেন এখানে কি চশমা সারানো হয়? তবে ওই যুবক তার কথার সঠিক উত্তর না দিয়ে বলেন এটা কি চশমা সারানোর দোকান মনে হচ্ছে। এ কথায় প্রভাষক বলেন, এভাবে কথা বলছেন কেন, আমি এ এলাকার বাসিন্দা নয় আর আমি নাগরপুর কলেজের প্রভাষক। এ পরিচয় পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই যুবক বলেন, আপনি কি আমাকে চেনেন। এর এক পর্যায়ে বাবু ও বিপ্লব এগিয়ে এসে মামুনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শিক্ষিকাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, মারতে উদ্যত হয় এবং টান দিয়ে মুখের হিজাব খুলে ফেলে।

শুধু তাই নয় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মসজিদে প্রবেশ করে মুসল্লীকে জুতা দিয়ে পিটিয়েছে নুরুচ্ছাবাহ্ পূর্নিমা নামে এক যুব মহিলা লীগ নেত্রী। আমেরিকা প্রবাসী নুরুচ্ছাবাহ্ পূর্নিমা যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদেকর দায়িত্ব পালন করছে।

ভুক্তভোগী মুসল্লী এস এম শহীদ জানান, শনিবার জোহরের নামাজের জন্য আমি মসজিদে প্রবেশ করার পথে পূর্ণিমা নামের এই মহিলা দাঁড়িয়ে থাকে। আমি তাকে নামাজের জামাত শুরু হচ্ছে বলে সরে দাঁড়াতে বলে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করার সময় সে মসজিদের সামনে থাকা জুতা নিয়ে আমাকে মারলে জুতা মসজিদের ভেতরে ঢুকে যায়। এরপর সে ভেতরে ঢুকে জুতা দিয়ে আমাকে মারধর করেন। তখন সকল মুসল্লী এগিয়ে তাকে নিভৃত করেন। কি কারণে আমাকে জুতা দিয়ে মারলো? আমার অপরাধ কি? আমি তার বিচার চাই।

এছাড়া করোনাভাইরাস নিয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অপরাধে মানিকগঞ্জে একছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সাদ্দাম হোসেন অভি মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা চরখন্ড গ্রামের নওশের আলম মাষ্টারের ছেলে। সাদ্দাম হোসেন দৌলতপুর উপজেলা প্রকৌশলী সমিতির সহ-সভাপতি। তিনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাসায়নিক প্রকৌশলীতে বিএসসি পাশ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে মিথ্যা প্রচারনার দায়ে ইঞ্জিনিয়ার সাদ্দাম হোসেন অভিকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে শনিবার সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করা হলে তিনি বিচারকের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এদিকে এসব ঘটনার তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল সালাহউদ্দিন আইউবী বলেন, জাতির ক্রান্তিলগ্নেও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাদের বিকৃত পৈশাচিকতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বর্বর রুপ দেখতে হচ্ছে জাতিকে।

শিবির নেতাকে কুপিয়ে যখম কারার ঘটনার উদ্ধৃতি দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্রলীগের এই হিংস্র বর্বরতায় ছাত্রজনতা হতবাক ও ক্ষুব্ধ। এই ঘৃণ্য অপকর্মের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই।

শিবির নেতারা বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে অজানা আশঙ্কায় দেশের মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আছে। দেশের মানুষ যার যার অবস্থান থেকে করোনা পরিস্থিতি উত্তোরণে সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরাও সাধ্যমত নানাবিধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এখন ছাত্রলীগের কর্মীরাও যেখানে দেশের স্বার্থে জনগনের সেবায় যেখানে তৎপর থাকা উচিত ছিল, সেখানে উল্টো এ অবস্থাতেও তারা অপকর্মের ঘৃন্য নজির স্থাপন করে চলেছে।

পাবনার সুজানগরে পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সুমন খানের নেতৃত্বে এক গৃহবধুকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার উদ্ধৃতি দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ বিনা কারণে কাপুরুষোচিতভাবে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে শিবির নেতা মোহাম্মদ ফাহাদ হোসেনকে। দেশের দু:সময়ে এমন অসভ্য বর্বরতার নজির স্থাপন করে ছাত্রলীগ তাদের জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসবাদের বিকৃত রুপকে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করেছে।

নেতৃবৃন্দরা বলেন, দেশবাসী কোনভাবেই ছাত্রলীগের বর্বরতা দেখতে প্রস্তুত নয়। অবিলম্বে হামলাকারী চিহ্নিত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বেআইনি ও নৃশংস কর্মকান্ডের লাগাম টেনে ধরতে হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com